পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র কুরবানী উনার আহকাম, ফাযায়িল ও মাসায়িল (২৬)
, ০৮ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৮ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ বদ আক্বীদা পোষণকারী অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের খিলাফ আক্বীদা পোষণকারী ব্যক্তিকে শরীক নিয়ে কুরবানী করলে কুরবানী আদায় হবে না।
ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে যে সমস্ত বিষয়গুলো হারাম যেমন- সিনেমা, টেলিভিশন দেখা ও এতে অনুষ্ঠান করা এবং যে কোন প্রাণীর অঙ্কিত ছবি ঘরে রাখা, গণতন্ত্র করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, বেপর্দা হওয়া, চন্দ্রমাস আগ-পিছ বা নাসী করা ইত্যাদি সবগুলোই হারাম এবং নাজায়িয। তাই কোন ব্যক্তি যদি হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলে তাহলে ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক সে ব্যক্তির স্ত্রী তালাক হবে, যদি হজ্জ করে থাকে তবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে, তার জীবনের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং সে মুরতাদে পরিণত হবে। অতএব উক্ত ব্যক্তি খালিছ তওবা না করা পর্যন্ত তাকে শরীক করে কুরবানী করলে কুরবানী আদায় হবে না।
পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী
পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে- (১) মুসলমান হওয়া, (২) স্বাধীন হওয়া, (৩) মুক্বীম হওয়া, (৪) বালেগ হওয়া, (৫) মালিকে নিছাব হওয়া, (৬) পাগল না হওয়া অর্থাৎ আক্বলমন্দ হওয়া।
পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০ তারিখের ছুবহে ছাদিক হতে ১২ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব।
উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, ফতহুল কাদীর, গায়াতুল আওতার, শরহে বিকায়া, বাহর, দুররুল মুখতার, কাজীখান, ইনায়া)
সামর্থ থাকার পর পবিত্র কুরবানী না করা অসন্তুষ্টির কারণ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবেনা সে যেনো আমাদের ঈদগাহের নিকটে না আসে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
কাজেই, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের উচিত পবিত্র কুরবানী উনার দিন কুরবানী করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক ও নৈকট্য হাছিল করা।
পক্ষান্তরে যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করলে সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টি কারণ হবে।
যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়
পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য ছাহিবে নিসাব হওয়া শর্ত। হারাম উপায়ে অর্জিত মাল যেহেতু উপার্জনকারীর নিজস্ব নয়, তাই তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হবে না। বরং তার জন্য প্রধান ফরয হলো- যাদের থেকে হারাম উপায়ে মালগুলো নেয়া হয়েছে, তাদের এ সকল মাল ফেরত দেয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
আর যেহেতু কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে মুক্বীম হওয়া, তাই মুসাফিরের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, যদিও সে মালিকে নিসাব হোক না কেন। কিন্তু যদি সে কুরবানী করে, তবে আদায় হয়ে যাবে।
যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব
তার পক্ষ হতেই পবিত্র কুরবানী করতে হবে
সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার মশহূর ও গ্রহণযোগ্য মতে, “যে ব্যক্তির উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই পবিত্র কুরবানী করতে হবে। ছহিবে নিছাবের পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী না করে মৃত ব্যক্তি বা অপরের পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী করা যাবে না, করলে ছহিবে নিছাব ব্যক্তি ওয়াজিব তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে।
মূূল ফতওয়া হলো, ছহিবে নিছাব ব্যক্তি তার ওয়াজিব কুরবানী আদায় করে সে অন্য যে কোন ব্যক্তি সে মৃত হোক বা জীবিত হোক তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করতে পারবে।” এ সম্পর্কিত সঠিক ফায়ছালা বুঝতে হলে পবিত্র কুরবানী উনার সম্পর্কিত মাযহাবী ফায়ছালা সম্পর্কে অবগত হতে হবে।
(গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত কুরবানী সংক্রান্ত রেসালা হতে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র মাযহাব অনুসরণ নিয়ে লা-মাযহাবীদের আপত্তির জবাব
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবী হাদরাদ আল আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খেলাধুলা নাজায়িয ও হারাম হওয়া সম্পর্কে সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মানুষকে আমলের প্রতি নিরুৎসাহিত করতেই পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে মওজু-জয়ীফ ইত্যাদি অপপ্রচার করছে বাতিল ফিরক্বারা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩০)
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)