পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র কুরবানী উনার আহকাম, ফাযায়িল ও মাসায়িল (১৫)
, ২৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০২ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দশ বছর অবস্থান মুবারক করেছেন। প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানী করেছেন; কখনও তা ছাড়েননি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও পবিত্র কুরবানী করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ يُضَحِّي.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দশ বছর অবস্থান মুবারক করেছেন এবং প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানী করেছেন।” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৫০৭)
পবিত্র কুরবানী না করে তার অর্থ দান করে দেয়ার বিধান সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নেই। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিংবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কখনো এরূপ করেননি। অথচ উনাদের যুগেই এর জরুরত ছিল অধিক। বরং উনারা পবিত্র কুরবানী করেছেন এবং কুরবানীকৃত পশুর গোশত ও চামড়া অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করতে বলেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثالثة الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مَا عَمِلَ اِبْنُ اٰدَم مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ اَحَبُّ اِلٰى اللهِ مِنْ اِهْرَاقِ الدَّمِ وَاِنَّهُ لَيَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِـهَا وَاَشْعَارِهَا وَاَظْلَافِهَا وَاِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِـمَكَانِ قَبْلَ اَنْ يَّقَعَ بِالْاَرْضِ فَطِيْبُوْا بِـهَا نَفْسًا.
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বান্দা-বান্দী বা উম্মত পবিত্র কুরবানী উনার দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তন্মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো পবিত্র কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে পবিত্র কুরবানী উনার পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছে যায়। কাজেই আপনারা আনন্দচিত্তে পবিত্র কুরবানী করুন।” (তিরমিযী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَااُنْفِقَتِ الْوَرِقُ فِىْ شَىْءٍ اَحَبَّ اِلَى اللهِ مِنْ نَـحْرٍ يُنْحَرُ فِىْ يَوْمِ عِيْدٍ.
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঈদের দিন কুরবানী করার খাতে যে ব্যয় করা হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উক্ত ব্যয়ের চেয়ে প্রিয় কোন খাত নেই।” (আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব : ২য় খ- : কিতাবুল ঈদাইনে ওয়াল উদ্বহিয়াহ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৬৫; মু’জুমাল কবীর লিত ত্ববারানী : হাদীছ শরীফ নং ১০৭৩৫; জামিউছ ছগীর : হাদীছ শরীফ নং ৭৮৪৫; কানযুল উম্মাল : হাদীছ শরীফ নং ১২১৫৫; জামিউল জাওয়ামে : হাদীছ শরীফ নং ৫১৭; তাফসীরে ইবনে কাছীর : ৫ম খন্ড : হাদীছ শরীফ নং ৪২৬; সুনানে দারে কুতনী : ৫ম খ- : হাদীছ শরীফ নং ৪৭৫২; বায়হাক্বী : হাদীছ শরীফ নং ১৯৫৮৭; শু‘য়াবুল ঈমান : হাদীছ শরীফ নং ৬৯৫৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে-
اَفْضَلُ الْعِبَادَاتِ يَوْمُ الْعِيْدِ عِرَاقَةُ دَمِ الْقُرْبَاتِ
অর্থ : “ঈদের দিন রক্ত প্রবাহিত করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।” সুবহানাল্লাহ! (তুহফাতুল আহওয়াজী)
কুরবানীর দিন কুরবানী করাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রিয় আমল। আর তাই ফিক্বহের কিতাবে এসেছে-
شراء الاضحية بعشرة اولي من ان يتصدق بالف.
অর্থ : “কুরবানীর দিনে ১০ টাকা দিয়ে পশু খরিদ করে কুরবানী করা ১ হাজার টাকা ছদক্বা করা থেকে উত্তম।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৬ পৃষ্ঠা)
সুতরাং যারা কুরবানী না করে সেই টাকা গরীবদের দান করে দেয়ার কথা বলছে তাদের বিরুদ্ধে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ মুবারক করেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবেনা সে যেনো আমাদের ঈদগাহের নিকটে না আসে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
(গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত কুরবানী সংক্রান্ত রেসালা হতে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)