পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র কুরবানী উনার আহকাম, ফাযায়িল ও মাসায়িল (৮)
, ২০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১১ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জাদ্দু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার কুরবানী
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার হাতীমের মধ্যে ঘুমিয়ে আছেন। এমন সময়ে স্বপ্নে তিনি দেখতে পেলেন, একজন অচেনা আগন্তুক উনাকে বলছেন, পবিত্র কূপ খনন করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ পবিত্র কূপ? আগন্তুক এর কোন জবাব না দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পরদিন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হুজরা শরীফ-এ গিয়ে ঘুমালেন, এ রাতেও সেই আগন্তুক এসে উনাকে বললেন, সংরক্ষিত কূপ খনন করুন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ সংরক্ষিত কূপ? আগন্তুক কোন জবাব না দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পরদিন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাতীমের মধ্যে ঘুমাতে গেলেন, সেই আগন্তুক আবার এলেন এবং বললেন, যমযম খনন করুন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যমযম কি? আগন্তুক বললেন : “যে কূপের পানি কখনো কমে না বা শুকায় না, যা সর্বোচ্চ সংখ্যক হাজীকে খাবার পানি সরবরাহ করতে পারে।”
অতঃপর যে স্থানটি খনন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উক্ত স্থানের কিছু নিদর্শন উনাকে বলে দেয়া হলো। এভাবে কয়েকবার স্বপ্ন মুবারক দেখার পর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ বিশ্বাস জন্মালো যে, এটি অবশ্যই সত্য স্বপ্ন।
তিনি কুরাইশদেরকে সব কথা খুলে বললেন আর উক্ত স্থান খনন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কুরাইশরা বাধা প্রদান করলেও তিনি সমস্ত বাধা ডিঙ্গিয়ে স্বীয় পুত্র হযরত হারিস আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে টুকরী-কোদাল সহ নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে নির্দেশিত স্থান খনন করা শুরু করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটি খনন করেন আর পুত্র হারিস আলাইহিস সালাম তিনি মাটি বহন করে দূরে নিক্ষেপ করেন। তিন দিন খনন কার্য চলার পর তিনি সেই প্রস্তরটি দেখতে পেলেন যা থেকে কুপ উৎসারিত হয়েছে। তখন আনন্দের আতিশর্য্যে আল্লাহু আকবার বলে উচ্চ স্বরে তাকবীর ধ্বনী দিলেন আর বলতে লাগলেন, এটা হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কূপ।
অতঃপর তিনি যমযম কূপের আশেপাশে কয়েকটি চৌবাচ্চা নির্মাণ করেন যাতে চৌবাচ্চাগুলোতে যমযমের পানি ভর্তি করে উক্ত পানি পবিত্র হজ্জ পালনকারীদের পান করানো সহজ হয়। কিন্তু কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক হিংসাবশত রাতে এসে চৌবাচ্চার পানিগুলো অপবিত্র করে ফেলতো।
পরদিন সকালে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পানি পবিত্র করার ব্যবস্থা করতেন। এ সকল দুষ্ট লোকদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি কূয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দুয়া করতে থাকেন, স্বপ্নযোগে উনাকে বলে দেয়া হলো যে, আপনি এ দুয়া করুন যে, আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি যমযম কূপ থেকে মানুষের গোসল করার অনুমতি দিতে পারি না।
এটা তো শুধু পানকারীদের জন্য। সকালে নিদ্রা হতে জাগ্রত হয়েই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর থেকে যে কেউ চৌবাচ্চা নষ্ট করার ইচ্ছা করতো সে কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তো। বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটতে ছিল বলে দুষ্ট হিংসুকরা চৌবাচ্চাগুলো নষ্ট করা হতে বিরত হয়ে পড়লো।
যমযম কূপ খনন করার সময় সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার একমাত্র পুত্র হযরত হারিস আলাইহিস সালাম ব্যতীত অন্য কেউ উনার সাহায্যকারী ছিল না। এজন্য তিনি মানত করলেন যে, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ১০ জন পুত্র সন্তান দান করেন আর উনারা যৌবনে পদার্পন করার ফলে উনার হাত শক্তিশালী হয় এবং কূপের রক্ষণাবেক্ষণ করতে সক্ষম হন তাহলে তিনি উনাদের মধ্যে একজনকে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে কুরবানী করবেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ১০ জন পুত্র সন্তান দান করেন। উনার আশা পূর্ণ করেন।
তখন এক রাতে তিনি কা’বা ঘর উনার সামনে ঘুমাচ্ছিলেন। স্বপ্নে দেখেন যে, কোন এক ব্যক্তি উনাকে বলছেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! আপনি এ ঘর মুবারক উনার মহান রব তায়ালা উনার নাম মুবারকে যে মানত করেছিলেন তা পুরা করুন। জাগ্রত হয়ে তিনি সকল পুত্রগণ উনাদেরকে একত্রে সমবেত করেন এবং স্বীয় মানতের কথা এবং স্বপ্নের কথা খুলে বলেন। পুত্রগণ উনারা সকলেই সমস্বরে উত্তর দিলেন, হে আমাদের সম্মানিত পিতা! আপনার মানত পূরণ করুন। কোন পুত্রকে কুরবানী করা হবে তা নিধারণের জন্য তিনি স্বীয় পুত্র উনাদের নামে লটারী দিলেন।
অতঃপর লটারীতে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উঠলো। আর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকেই সর্বোচ্চ মুহব্বত করতেন।
তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক হাত মুবারকে ছুরি ও অপর হাত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক ধরে বধ্যভুমির দিকে চলছেন আর পিছন পিছন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভগ্নীগণ প্রিয়তম ভাইয়ের জন্য কান্না করতে করতে চলেছেন।
তন্মধ্যে এক ভগ্নী বললেন, হে আমাদের সম্মানিত পিতা! আপনি ১০টি উট আর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে লটারী দিন। যদি লটারীতে উটের নাম উঠে তাহলে ১০টি উট কুরবানী করে আমাদের প্রানপ্রিয় ভাইকে মুক্তি দিন। তখনকার সময় ১০টি উট এক ব্যক্তির খুনের বদলা ছিল। উক্ত আবেদন অনুসারে লটারী দেয়া হলো কিন্তু এবারও সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক এলো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১০টি করে উট বৃদ্ধি করে লটারী দিতে লাগলেন কিন্তু প্রত্যেকবারই সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকই আসতেছিল। অবশেষে যখন একপার্শ্বে ১০০টি উট আর অপরপার্শ্বে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক রেখে লটারী দেয়া হলো তখন লটারীতে উটের নাম আসলো।
সেসময় সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ উপস্থিত সবাই আল্লাহু আকবার তাকবীর ধ্বনী দিলেন। ভগ্নীগণ সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে চলে গেলেন আর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে ১০০ উট কুরবানী করলেন। সুবহানাল্লাহ!
(গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত কুরবানী সংক্রান্ত রেসালা হতে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)