পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (১০)
, ১৪ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

আমরা জেনেছি কি করে ইন্জেকশন প্রয়োগে রোযা ভাঙ্গে। মলম লাগালেও রোযা ভাঙ্গতে পারে সে ব্যাপারে আমরা বিস্তৃত আলোচনা করেছি। এ দু’টো ক্ষেত্রেই রোযা ভাঙ্গার মূল কারণ হচ্ছে- প্রথমতঃ রক্তে ওষুধের শোষণ এবং দ্বিতীয়তঃ মস্তিষ্কে বা পাকস্থলীতে প্রবেশ করা।
মূলত “রক্ত প্রবাহ” বা Blood circulation যার মাধ্যমে মস্তিষ্কে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, O2 ইত্যাদি পৌঁছে থাকে। আবার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে প্রস্তুত অতীব প্রয়োজনীয় বিভিন্ন হরমোন (পিটুইটারী গ্রন্থি থেকে) এবং বিবিধ বর্জ্যদ্রব্য (CO2, ইত্যাদি) মস্তিষ্কের বাইরে শরীরের অন্যত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তাও রক্ত প্রবাহের মাধ্যমেই। একটু ভেঙ্গেই বলা যাক- মস্তিষ্কে প্রস্তুত CO2 ফুসফুসে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে আবার O2 নিয়ে রক্ত প্রবাহই ফিরে আসে মস্তিষ্কে। পিটুইটারী গ্রন্থিতে প্রায় ডজনখানেক হরমোন তৈরী হয় যেগুলো দূরবর্তী অন্যান্য অঙ্গসমূহে কাজ করে, যেমন- থাইরয়েড গ্রন্থি, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি, ডিম্বাশয়, গর্ভাশয়, শুক্রাশয়, স্তনগ্রন্থি, বৃক্ক ইত্যাদি। কোনটি কোনটি আবার সমস্ত শরীরেই কাজ করে, যেমন- growth hormone, melanocyte stimulating hormone ইত্যাদি। (সূত্র: Review of medical physiology, W. F. Ganong, 17th Ed (1995), P-365)রক্ত প্রবাহ সম্বন্ধে উপরোক্ত আলোচনায় এটি ফুটে উঠেছে- রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে কোন ঔষধ মস্তিষ্কে প্রবেশের পরে আবার ফিরেও আসে এবং শরীরের অন্য সকল অংগে ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যত্র যেমন এও বলা হয়েছে, যেমন- (1) Thiopental rapidly diffuses out of the brain and other highly vascular tissues and is redistributed to muscle, fat and eventually all body tissue.
অর্থাৎ থায়োপেন্টাল দ্রুত মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অধিক রক্ত সরবরাহ লাভকারী অঙ্গ থেকে বেরিয়ে যায়, অতঃপর গোশ্তপেশী, চর্বি এবং পর্যায়ক্রমে সমস্ত শরীরে জমা হয়। [Basic and clinical pharmacology, Bertram G. Katzung, 6th Ed. (1995) P-390]
অর্থাৎ যা কিছু মস্তিষ্কে পৌঁছে তা অবশ্যই পরবর্তীতে পেটে অর্থাৎ পাকস্থলীতেও পৌঁছে মস্তিষ্ক থেকে।
(2) “Mannitol is rapidly distributed in the extracellular compartment and extracts water from the intracellular compartment ......................... reduces intracellular volume. This effect is used to reduce intracranial pressure in neurologic conditions. ......... urine volume increases in conjunction with mannitol excretion.”
অর্থাৎ ম্যানিটল দ্রুত শরীরের E. C কম্পার্টমেন্টে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেলের ভিতর থেকে পানি শুষে নেয় (যার মধ্যে মস্তিষ্কের কোষও অন্তর্ভুক্ত) ........এভাবে সেলের ভিতরের আয়তন কমায়। কার্য্যকারীতার এ দিকটি নিউরোলোজীর বিভিন্ন সমস্যায় (অর্থাৎ মস্তিষ্কে টিউমার, পানি জমা, চাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়। .......... যথাসময়ে (সাধারণতঃ ১/২-১ ঘন্টার মধ্যে) ম্যানিটল পেশাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাবার সময় মস্তিষ্ক ও অন্যান্য স্থান থেকে শুষে নেয়া পানি সাথে নিয়ে বেরোয় (ভাবার্থ[Basic and clinical pharmacology, Bertram G. Katzung, 6th Ed. (1995) P-242-243]
ইন্জেকশনের মাধ্যমে ওষুধ গ্রহণ করলে পাকস্থলী এবং মস্তিষ্ক উভয় স্থানেই যে পৌঁছে তার এরকম আরো অজস্র উদাহরণ রয়েছে চিকিৎসা শাস্ত্রের স্থানে স্থানে।
ওষুধ, ইন্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ করলে মস্তিষ্কে এবং পেটেও যে ওষুধ পৌঁছে তা নিচের উদাহরণটি থেকেও স্পষ্ট বুঝা যায়। আমাদের পাকস্থলী রয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি একটি অক্সিনটিক বা গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি (Oxyntic ev Gastric Gland) এবং অপরটি পাইলোরিক গ্রন্থি (Pyloric Gland)| । অক্সিনটিক গ্রন্থিতে থাকে পেরাইটাল কোষ এবং পেরাইটাল কোষের H2 রিসিপ্টর উত্তেজিত হলে নিঃসরিত হয় হাইড্রোক্লোরিক এসিড।
যখন শিরা অথবা পেশীর মাধ্যমে রেনিটিডিন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় তখন রেনিটিডিন পেরাইটাল কোষের ঐ২ রিসিপ্টরকে আটকে দেয়। ফলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসরিত হয় না। সুতরাং এর দ্বারা পেটে ওষুধের কার্যকারিতা বুঝা গেল। রেনিটিডিন রক্তের মাধ্যমে সহজেই মস্তিষ্কে পৌঁছে। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্কের কোষেও অল্পমাত্রায় শোষণ ঘটে।
[Review of medical physiology, W. F. Ganong, 17th Ed (1995), P-525]
সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনে নানা জিনিসের ব্যবহার বেড়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে অনেক। পূর্বে যে সকল পদ্ধতিতে চিকিৎসা হত, এখন চিকিৎসা পদ্ধতির মান, উপকরণ সবই বেড়েছে। এ সকল পদ্ধতির অনেক কিছুই আমরা রোযা অবস্থায় ব্যবহার করছি, কিন্তু উপকরণগুলো রোযা অবস্থায় ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না, সে ব্যাপারে হয়তো আমাদের অনেকেরই সঠিক কোন ধারণা নেই।
সে কারণে নিচে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো।
ইনহেলার (Inhealer):
বাজারে যে সকল ইনহেলার পাওয়া যায়, তার ভিত্তি হচ্ছে এরোসল অর্থাৎ এরোসল-এর মাধ্যমেই ওষুধ নাকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। উদাহরণ হিসেবে সলবিউটামল ইনহেলারের কথাই ধরা যাক। যখন সলবিউটামল ইনহেলার নেয়া হয় এবং প্রথমবার ওষুধ গ্রহণের মাত্রা যদি হয় ৪০ থেকে ১০০ মাইক্রো গ্রাম, তবে সর্বোচ্চ প্লাজমা ঘনত্বে ((Peak Plasma Concentration)) পৌঁছতে সময় লাগবে তিন থেকে পাঁচ ঘন্টা। রক্তে পৌঁছলে যেহেতু ওষুধ মস্তিষ্কে পৌঁছে, সুতরাং রোযা ভেঙ্গে যাবে।
ইনফিউশান (Infusion):
অনেকেরই শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্যালাইন নেবার প্রয়োজন পড়ে। বাজারে গ্লুকোজ, ডেক্সট্টোজ স্যালাইন পাওয়া যায়। রোযা রেখে স্যালাইন গ্রহণে অবশ্যই রোযা ভেঙ্গে যাবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নিজ থেকে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বানানো নিষেধ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেশের কৃষি খাতে বিরাজমান সংকট ও উত্তরণের পথে আঞ্জুমানে আল ফাল্লাহ্ অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষক আঞ্জুমান নীতি আদর্শ বর্জিত পাল্টাপাল্টির অসুস্থ রাজনীতি পরিহার করুন, কৃষি খাতকে রক্ষা করুন।
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শরীয়ত বিরোধী কাজ দেখলেই বাধা দেয়া ঈমানের আলামত
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৬)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৭)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)