পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (৭)
, ১১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২৫ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রগের বর্ণনা:
বলা হয়ে থাকে, রগে টান পড়া, রগ কেটে দেয়া, রগ ফুলে যাওয়া, রগ ছিড়ে যাওয়া, রগ টনটন করা, রগ দপদপ করা। এক্ষেত্রে সব রগ এক নয়। কোনটি শিরা (াবরহ), কোনটা ধমনী (ধৎবঃবৎু), কোনটা বা টেনডন (ঞবহফড়হ) কিন্তু আমরা সবগুলোকেই রগ বলছি। এভাবে রগ ১০ প্রকার।
১. ধমনী (অৎবঃবৎু) : এটা এক প্রকার রক্তনালী যা সাধারণতঃ পরিশোধিত রক্ত বহন করে।
২. শিরা (ঠবরহ) : দূষিত রক্ত বহনকারী রক্তনালী।
৩. লসিকা নালী (খুসঢ়য ঠবংংবষ)ঃ লসিকা (খুসঢ়য) বহনকারী নালী, লসিকা মানবদেহের জন্য রক্তের মতই একটি অতীব প্রয়োজনীয় দুধের মত সাদা পানীয় পদার্থ। লসিকা নালী লসিকা তন্ত্র (খুসঢ়য ঝুংঃবস)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই লসিকা তন্ত্রের প্রধান প্রধান কাজ হলো-
(ক) শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ফ্যাট এবং বড় আকৃতির প্রোটিন কতা মিশ্রিত বিশেষ জলীয় পদার্থ অর্থাৎ লসিকা হৃদপিন্ডের দিকে বহন করা।
(খ) রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করা।
৪. পেশী (গঁংপষব) : এক প্রকার সংযোগ কলা যা মানুষের অস্থিসমূহকে আবৃত করে রাখে এবং মানব দেহকে সুন্দর আকৃতি দানে সহায়তা করে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চলাচলে মূল ভূমিকা পালন করে এই পেশী। বিভিন্ন প্রকার রক্তনালী, লসিকা নালী ও লসিকা গ্রন্থি, স্নায়ু ইত্যাদি পেশীর মধ্য দিয়ে অতিক্রমকালে তাদের স্ব স্ব কাজ সম্পাদন করে। গোশ্তপেশীর অভ্যন্তরভাগ ফাঁপা নয়।
৫. টেনডন (ঞবহফড়হ): এটা পেশীর প্রান্তীয় অংশ যা দ্বারা গোশ্তপেশী সাধারণতঃ অস্থির সহিত সংযুক্ত থাকে। টেনডন মূলতঃ পেশীরই পরিবর্তীত রূপ- শরীরের বাইরে থেকে যাকে শক্ত দড়ির মত মনে হয়।
৬. স্নায়ু (ঘবৎাব): যা মানবদেহের অনুভূতি বহনকারী স্নায়ুতন্ত্র (ঘবৎাড়ঁং ঝুংঃবস)-এর একটি বিশেষ অংশ। এটা দেখতে এবং আকার আকৃতিতে সাদা রং-এর দড়ির মত। এর অভ্যন্তর ভাগও ফাঁপা নয়।
৭. ¯œায়ুরজ্জু (ঝঢ়রহধষ ঈড়ৎফ)ঃ এটিও স্নায়ুতন্ত্রেরই একটি অংশ যা মেরুদ-ের অভ্যন্তরে অবস্থিত।
এটি মস্তিষ্কের সাথে শরীরের অভ্যন্তরস্থ দূরবর্তী স্নায়ূসমূহকে সংযোগকারী। ¯œায়ুরজ্জু আসলে বহু সংখ্যক স্নায়ুর সমষ্টি। তবে এর অভ্যন্তরভাগে সরু একটি নালী আছে, যার ভিতর দিয়ে সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড (ঈবৎবনৎড়-ঝঢ়রহধষ ঋষঁরফ বা ঈঝঋ) নামক পানির মত স্বচ্ছ তরল পদার্থ মস্তিষ্ক থেকে ¯œায়ুরজ্জুর নিম্ন প্রান্ত পর্যন্ত চলাচল করে।
৮. কণ্ঠনালী বা শ্বাসনালী (ঞৎধপযবধ) : গলার সম্মুখভাগে অবস্থিত দেখতে প্রায় বাঁশের আকৃতির, যার মধ্যভাগ ফাঁপা এবং ভিতর দিয়ে বাতাস চলাচল করে। মানবদেহের শ্বাসতন্ত্র (জবংঢ়রৎধঃড়ৎু ঝুংঃবস)-এর অন্যতম প্রধান অংশ হিসাবে এটি কাজ করে থাকে।
৯. খাদ্যনালী (ঊংড়ঢ়যধমঁং/ঙবংড়ঢ়যধমঁং): শ্বাসনালীর ঠিক পশ্চাতেই অবস্থিত। মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে মুখ ও পাকস্থলীকে সংযোগ করে থাকে।
১০. শুক্ররজ্জু (ঝঢ়বৎসধঃরপ ঈড়ৎফ): অন্ডকোষকে পেটের সাথে সংযোগকারী নালী যা শুক্রনালী, ধমনী, শিরা লসিকা নালী ও স্নায়ু ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত। উল্লেখ্য, সাধারণতঃ মানুষ রগ বলতে উপরোক্ত দশটির যে কোন একটি বা একাধিকটিকে বুঝিয়ে থাকেন (যেমন- রগে টান পড়া, রগ কেটে দেয়া, রগ ফুলে যাওয়া, রগ ছিড়ে যাওয়া, রগ টনটন করা, রগ দপদপ করা) যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় রগ বলতে যেখানে যেটি প্রযোজ্য সুনির্দিষ্টভাবে সেটিকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রগ সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার উক্ত বক্তব্যও ভুল। কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এমন কোন শিরা বা রগ পাওয়া যাবেনা, যার দ্বারা রক্ত চলাচল করেনা। আর কোন ওষুধই রক্তের সাথে মিশে গিয়ে নিঃচিহ্ন হয়ে যায়না বরং রক্তে ওষুধের উপস্থিতি থাকে এবং তা সহজেই মগজে পৌঁছে যায়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ হয়নি। মূলকথা হলো- ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ইনজেকশনের দ্বারা ব্যবহৃত ওষুধ মগজে পৌঁছে থাকে।
ইমদাদুল ফতওয়ার অন্যত্র আরো বলা হয়েছে-“ফক্বীহ্গণ সাধারণতঃ জখমে (আঘাত প্রাপ্ত স্থানে) ওষুধ দেয়াকে রোযা ভঙ্গের কারণ বলেননি। বরং جائفہ (জায়িফা অর্থাৎ যে জখম পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছেছে) অথবা امہ (আম্মাহর অর্থাৎ যে জখম মগজ পর্যন্ত পৌঁছেছে) তার শর্ত দিয়েছেন। কেননা তাদের মতে এ দু’ধরণের জখমের দ্বারা ওষুধ মগজ অথবা পেটের মধ্যে পৌঁছে থাকে। নচেৎ ওষুধ অন্যান্য জখমের দ্বারা শিরার ভিতরে পৌঁছে থাকে। ”
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে খ-নমূলক জাওয়াব : বাস্তবে জায়িফা (جائفہ) এবং আম্মাহ্ (امہ) এর মত জখম প্রাপ্ত রোগীর মৃত্যুর প্রহর গুণা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় এবং এ রকম রোগীর চিকিৎসা শুধুমাত্র শয্যায় রেখেই সম্ভব।
পরবর্তীতে বলা হয়েছে- “নতুবা ওষুধ অন্যান্য জখমের দ্বারা শিরার ভেতরে পৌঁছে যায়। ” অর্থাৎ তারা জায়িফা এবং আম্মাহ্কে অন্যান্য জখমের সঙ্গে পার্থক্য করেছে, তারা বুঝাতে চেয়েছে- জায়িফা এবং আম্মাহ্তে ওষুধ প্রয়োগ করলে সরাসরি মগজে এবং পাকস্থলীতে পৌঁছায় এবং তা রোযা ভঙ্গের কারণ। কিন্তু অন্যান্য জখমে ওষুধ প্রয়োগ করলে তা মগজে বা পেটে পৌঁছায় না, শুধু শিরায় পৌঁছায়, তাই সেখানে ওষুধ প্রয়োগ করা রোযা ভঙ্গের কারণ নয়। কিন্তু মূলতঃ যে কোন জখমেই ওষুধ প্রয়োগ করা হোক না কেন (শুষ্ক পাউডার বা মলম) তা যদি শিরায় পৌঁছে, তবে তা মগজে সহজেই পৌঁছে যাবে।
আর ইমদাদুল ফতওয়ার উক্ত বক্তব্যে যেহেতু উল্লেখ করা হয়েছে যে, “নতুবা ওষুধ অন্যান্য জখমের দ্বারা শিরার ভিতর পৌঁছে থাকে। ” সেহেতু শিরার ভিতর পৌঁছার কারণে মগজেই পৌঁছাবে। অতএব জখমের মধ্যে ওষুধ দিলেও রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ফিক্বাহর কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
بِاَنْ دَاوَى الْـجَائِفَةَ وَالْاٰمَةَ فَاِنْ دَاوَاهَا بِدَوَاءِ يَابِسٍ لَا يُفْسِدُ لِاَنَّهٗ لَـمْ يَصِلْ اِلَى الْـجَوْفِ وَلَا اِلَى الدِّمَاغِ وَلَوْ عَلِمَ اَنَّهٗ وَصَلَ يُفْسِدُ فِى قَوْلِ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ وَاِنْ دَاوَاهَا بِدَوَاءِ رَطْبٍ يُفْسِدُ عِنْدَ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ.
অর্থ: “জায়িফা ও আম্মাতে যে ওষুধ দেওয়া হয়, উক্ত ওষুধ যদি শুকনা হয়, তবে রোযা ভঙ্গ হবেনা। কেননা উক্ত ওষুধ পেট অথবা মগজে পৌঁছেনা। আর যদি জানা যায় যে, উক্ত ওষুধ মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর ওষুধ যদি ভিজা হয়, তবেও ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ” (বাদায়ে, হিদায়া, আলমগীরি, আইনুল হিদায়া, মাবসূত লিস সারাখসী ইত্যাদি)
মূলকথা হলো- যেকোন জখম দ্বারা যেকোন ওষুধ প্রবেশ করানো হোক না কেন, যদি জানা যায় যে, তা মগজ অথবা পেটে পৌঁছেছে, তবে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে যেহেতু জখমে ওষুধ প্রয়োগ করালে তা রক্তের স্রোতে পৌঁছে যায় এবং রক্ত স্রোতের মাধ্যমে মগজে পৌঁছে যায়, সেহেতু জখমে ওষুধ দিলেও রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে এক দিনে ঈদ পালন সম্ভব কি? একটি দলীলভিত্তিক বিশ্লেষণ.... (৮)
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম {এবং গরুর গোস্ত নিয়ে সকল বিভ্রান্তির খ-নমূলক জবাব} (৩)
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে রজম বা ছঙ্গেছারের বিধান (৪)
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৩)
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল কায়িনাত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীমার্থে ক্বিয়াম শরীফ করা সুন্নত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)