পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযার ভঙ্গের কারণ (৪)
, ৮ই রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ৯ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২২ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

অনেকে ইনজেকশন সম্পর্কে এ ফতওয়াকেই দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে এবং এটাকেই ইনজেকশন সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত বা ফায়সালা মনে করে থাকে। আর এর উপর ভিত্তি করে বর্তমানে অনেকে ফতওয়া দিচ্ছে যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়না। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!
স্মর্তব্য, ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দেওয়ার পূর্বে উচিৎ ছিল ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যকে ভালরূপে তাহ্ক্বীক্ব করা। বিনা তাহ্ক্বীক্বে ফতওয়া দেওয়ার পরিণামও খুব ভয়াবহ।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اُفْتِيَ بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ اِثْـمُهٗ عَلٰى مَنْ اَفْتَاهُ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তিকে ইল্ম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার গুণাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরই পড়বে। ” নাঊযুবিল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুল ইলম্: বাবুত তাওয়াক্বী ফীল ফুতইয়া: হাদীছ শরীফ নং ৩৬৫৭)
অতএব, কেউ যদি কারো ফতওয়ার উপর ভিত্তি করে রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয় (আর যেহেতু ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়) তবে রোযা ভঙ্গের গুণাহ্ উক্ত ফতওয়া প্রদানকারীর উপর বর্তাবে। সুতরাং ফতওয়াদানের ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। অর্থাৎ বিনা তাহ্ক্বীক্বে ফতওয়া দান হতে বিরত থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওয়াকেয়াটি আমাদের জন্যে এক অমূল্য নছীহত, যদি আমরা বুঝি। তাহলো-
হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মালেকী মাযহাবের ইমাম। উনার সীরাতগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম যেদিন ফতওয়ার মসনদে বসলেন মুফতী হিসেবে, ফতওয়া দেওয়ার জন্য সেদিনই উনার কাছে ৪০টি মাসয়ালা বা সুওয়াল আসলো। তিনি ১৮টির জাওয়াব দিয়েছেন এবং বাকী ২২টির জাওয়াবে বলেছেন, لَااَدْرِىْ অর্থাৎ ‘আমি জানি না’ যখন জাওয়াব শেষ হয়ে গেলো এবং সুওয়ালকারীগণ চলে গেলো, তখন উনার নিকটবর্তী যে সকল বড় বড় আলিম বসেছিলেন উনারা বললেন, “হে হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি কি সত্যই ওই ২২টি মাসয়ালার জাওয়াব জানেন না? তখন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমার জানা আছে, তবে ১৮টি মাসয়ালায় আমার পূর্ণ তাহ্কীক আছে, তাই জাওয়াব দিয়েছি, আর বাকী ২২টি মাসয়ালায় পূর্ণ তাহ্কীক নেই, হতে পারে বর্তমানে ২২টি মাসয়ালা সম্বন্ধে আমার যে ফয়সালা জানা আছে পূর্ণ তাহ্কীকের পরে তার ব্যতিক্রমও হতে পারে। এই লোকগুলো অনেক দূর থেকে প্রায় ৬ মাসের রাস্তা অতিক্রম করে আমার কাছে এসেছে মাসয়ালা জানার জন্য। এখন যদি আমি বিনা তাহ্কীকে তার জাওয়াব দিয়ে দেই যা পূর্ণ শুদ্ধ নয়, তবে তার ভিত্তিতে তারা আমল শুরু করবে, আর পরে যখন আমার পূর্ণ তাহ্কীক হবে এবং তা যদি বর্তমান ফয়সালার ব্যতিক্রম ফয়সালা হয়, তাহলে তাদেরকে কে এই মাসয়ালা সম্পর্কে বিশুদ্ধ বা পূর্ণ তাহ্কীক সম্বলিত ফতওয়াটি জানাবে? যেহেতু আমি তাদের বিস্তারিত পরিচয় বা ঠিকানা জানি না।
আর এজন্য হয়ত আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কঠিন জওয়াবদিহির সম্মুখিন হতে হবে এবং সাথে সাথে পাকড়াও হতে হবে।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَاسْاَلُوْآ اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ: “যদি তোমরা না জানো, তাহলে যারা জানেন ও অভিজ্ঞ, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও। ” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৩ ও পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
সেজন্য আমি তাদেরকে বলেছি আমি জানি না। অর্থাৎ আমার পূর্ণ তাহ্কীক নেই। যার এব্যাপারে পূর্ণ তাহ্কীক আছে, তার কাছ থেকে জেনে নাও।
মূলতঃ ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য শুদ্ধ হয়নি। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহর কিতাবে বর্ণিত উছূল ও বর্তমান আধুনিক বিশ্বের উন্নততর চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভালরূপে তাহ্ক্বীক বা গবেষণা করার পর এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইনজেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অতএব, ইনজেকশন সম্পর্কিত ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল, তাই তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
ইনজেকশন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব:
আমরা ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য জানতে পেরেছি। আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ্ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রমাণ করবো যে, ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল।
ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য দ্বারা দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়-
(১) “ইনজেকশন মগজ অথবা পেটে প্রবেশ করেনা। ”
(২) “ইনজেকশন রগের ভিতর দিয়ে গিয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়। ”
মূলতঃ ইনজেকশন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও জ্ঞান না থাকার কারণেই একথা বলা হয়েছে। তাই পাঠকগণকে ইনজেকশন সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কিছু আলোচনা করা হলো।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে এক দিনে ঈদ পালন সম্ভব কি? একটি দলীলভিত্তিক বিশ্লেষণ.... (৮)
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম {এবং গরুর গোস্ত নিয়ে সকল বিভ্রান্তির খ-নমূলক জবাব} (৩)
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে রজম বা ছঙ্গেছারের বিধান (৪)
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৩)
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল কায়িনাত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীমার্থে ক্বিয়াম শরীফ করা সুন্নত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)