পবিত্র নামায উনার মাসয়ালা-মাসায়িল
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র ছলাত বা নামায উনার ফযীলত ও গুরুত্ব (২২)
, ২৩ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
১. নামায উনার মধ্যে স্বেচ্ছায় বা ভুলবশতঃ কিংবা নিদ্রাবস্থায় কোনো কথা বললে।
২. ইচ্ছাপূর্বক সালাম দিলে (ভুলে নয়)।
৩. স্বেচ্ছায় বা ভুলে সালামের জবাব দিলে।
৪. বিনা ওজরে গলা খাকারি দিলে। তবে আওয়াজকে পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে অথবা ইমামের ভুল সংশোধনের উদ্দেশ্যে বা সে নিজে নামায উনার মধ্যে আছে, তা অবগত করানোর উদ্দেশ্যে গলা খাকরালে নামায ফাসিদ হবে না।
৫. নামায উনার মধ্যে যেকোনো কারণে (পীড়িত ব্যক্তির অসহ্যের কারণ ব্যতীত) আহ! উহ! ইস! ইত্যাদি বললে অথবা উচ্চস্বরে কাঁদলে নামায ভঙ্গ হবে। অবশ্য জান্নাত, জাহান্নামের কথা মনে পড়ে কেঁদে উঠলে নামায ভঙ্গ হবে না।
৬. মানুষের কাছে যা চাওয়া যেতে পারে এমন কোনো কিছুর জন্য দু‘আ করা।
৭. মন্দ সংবাদ শুনে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন’ বলা।
৮. সুসংবাদ শুনে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে ও আশ্চর্যজনক বিষয় শুনে ‘সুবহানাল্লাহ’ কিংবা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অথবা ‘আল্লাহু আকবার’ বললে নামায বাতিল হবে।
তবে ইমাম সাহেবের কোনো ভুলে লোকমা হিসেবে ‘আল্লাহু আকবার’ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বললে নামায ভাঙবে না।
৯. নিজের ইমাম ব্যতীত অন্য কাউকে লোকমা দিলে, লোকমাদাতা ও লোকমাগ্রহীতা উভয়ের নামায ভঙ্গ হবে।
১০. পানাহার করলে নামায ফাসিদ হয়। ভুলবশতঃ একটা তিল খেলে, কিংবা একবিন্দু পানি পান করলে নামায বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু যদি নামাযীর দাঁতের মধ্যে ছোলা অপেক্ষা ক্ষুদ্র কোনো বস্তু লেগে থাকে, তবে তা গিলে ফেললে নামায নষ্ট হবে না।
১১. নামায উনার মাঝে দেখে দেখে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলওয়াত করলে নামায বাতিল হবে। তবে কোন লেখা দেখে যদি তার অর্থ বুঝে নেয় তাহলে নামায বাতিল হবেনা। (মা লা বুদ্দা মিনহু)
১২. আমলে কাছীর করা। আমলে কাছীর ওই কাজকে বলা হয়- যা করতে দু’হাতের প্রয়োজন পড়ে। অথবা এমন কাজ যা দেখলে সাধারণতঃ মানুষ মনে করে থাকবে, লোকটি নামায উনার মধ্যে নেই।
১৩. কোনো নাপাক বস্তুর উপর সিজদা করলে কিংবা দু’হাত ও দু’হাঁটু রাখলে নামায বাতিল হয়ে যাবে।
১৪. তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় কোনো গুপ্তাঙ্গের এক-চতুর্থাংশ নামায উনার মধ্যে খোলা থাকলে অথবা নাপাক স্থলে দাঁড়িয়ে থাকলে অথবা ইমামের অগ্রে দাঁড়িয়ে থাকলে নামায বাতিল হয়ে যাবে।
১৫. বিনা ওজরে স্বেচ্ছায় বক্ষকে ক্বিবলা উনার দিক হতে অন্য দিকে ফিরালে নামায বাতিল হবে।
১৬. যদি নামাযের মধ্যে এক কাতার পরিমাণ চলে, তাহলে নামায ফাসিদ হবে না। আর যদি দুই কাতার পরিমাণ একবারে চলে, তাহলে নামায ফাসিদ হবে।
১৭. মনে মনে কুফরের নিয়ত করলে কিংবা মরে গেলে নামায ফাসিদ হবে।
১৮. উš§াদ ও অচেতন হয়ে গেলে নামায ফাসিদ হবে।
১৯. কোনো একটা রুকন তরক করে তার ক্বাযা না করলে, কিংবা বিনা ওজরে কোনো শর্ত তরক করলে নামায নষ্ট হবে।
২০. কোনো একটি রুকন ইমামের পূর্বে আদায় করে ইমামের সাথে শরীক না হলে; যথা- কেউ ইমামের পূর্বে রুকূ’ করে মস্তক উঠালো, কিন্তু তারপর ইমামের সাথে কিংবা পরে রুকূ’ করলো না অতঃপর ইমামের সাথে সালাম ফিরালো, তবে নামায ফাসিদ হবে।
২১. উযূ ও গোসলের কোনো কারণ উপস্থিত হলে নামায ফাসিদ হবে।
২২. শেষ বৈঠকের পরে নামায উনার মধ্যে সিজদা ও তিলাওয়াতে সিজদা মনে পড়লে, তা আদায় করে পুনরায় শেষ বৈঠক না করলে নামায ফাসিদ হবে।
২৩. কোনো একটি রুকন নিদ্রিত অবস্থায় আদায় করে তা না দোহরালে নামায ফাসিদ হবে।
২৪. মাসবূকের ইমাম শেষ বৈঠকের পরে উচ্চ শব্দে হাসলে মাসবূকের নামায ফাসিদ হবে।
২৫. ‘আল্লাহু’ শব্দ মুবারক উনার ‘আ’ বেশি টেনে পড়লে কিংবা ‘আকবার’ শব্দ মুবারক উনার ‘বা’ টেনে পড়লে নামায ফাসিদ হবে।
২৬. সিজদা উনার সময় দু’পা তিন তাসবীহ পরিমাণ মাটি হতে উঠিয়ে রাখলে নামায ফাসিদ হবে।
জামায়াতে নামায আদায় করার গুরুত্ব
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে প্রত্যেক আক্বেল, বালেগ, সুস্থ পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা জামায়াত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
مَنْ سَـمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَاْتِ فَلَا صَلَاةَ لَهٗ اِلَّا مِنْ عُذْرٍ وَفِىْ رِوَاَيَةٍ عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَقَدْ هَـمَمْتُ اَنْ اٰمُرَ فَتِيَّتِىْ اَنْ يَّـجْمَعُوْا حَزْمَ الْـحَطَبِ ثُـمَّ اٰمُرُ بِالصَّلَاةِ فَتَقَامُ ثُـمَّ اُحْرِقُ عَلٰى اَقْوَامٍ لَا يَشْهَدُوْنَ الصَّلَاةَ
অর্থ : “যারা আযান শুনল, কিন্তু মসজিদে জামায়াতে আসলো না, তাদের নামায হবে না। তবে শরয়ী ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। অন্য বর্ণনায় মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার ইচ্ছা হয়, আমার যুবক শ্রেণীদেরকে আদেশ দেই, যেন তারা আগুন জ্বালানোর কাঠ সংগ্রহ করে এবং নামায আদায় করার নির্দেশ দেই, আর জামায়াত শুরু হয়ে গেলে যারা মসজিদে জামায়াতে নামায পড়তে উপস্থিত হবে না, তাদের ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেই।” (তিরমিযীর হাশিয়া উরফুশ শাযী : ১/৫২, হাদীছ শরীফ নং ২১৭)
ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান এবং ছহীহ বলেছেন। তিনি আরও বলেন, “অগণিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের থেকে এই বর্ণনাও রয়েছে যে, যারা ওযর ব্যতীত আযানের পরে জামায়াতে শরীক হবে না, তাদের নামায হবে না।”
এ প্রসঙ্গে ‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَافِظُوْا عَلٰى هٰؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ الْـخَمْسِ حَيْثُ يُنَادٰى بِـهِنَّ فَاِنَّـهُنَّ مِنْ سُنَنِ الْـهُدٰى وَاِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُنَنَ الْـهُدٰى وَلَقَدْ رَايْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا اِلَّا مُنَافِقٌ بَيِّنُ النِّفَاقِ وَلَقَدْ رَاَيْتُنَا وَاَنَّ الرَّجُلَ لَيُهَادٰى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتّٰى يُقَامَ فِى الصَّفِّ وَمَا مِنْكُمْ مِّنْ اَحَدٍ اِلَّا وَلَهٗ مَسْجِدٌ فِىْ بَيْتِهٖ وَلَوْ صَلَّيْتُمْ فِىْ بُيُوْتِكُمْ وَتَرَكْتُمْ مَسَاجِدَكُمْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَكَفَرْتُـمْ.وَفِىْ رِوَايَةِ مُسْلِمٍ لَضَلَلْتُمْ.
অর্থ : “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সঠিকভাবে আযানের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত ছলাতের প্রতি সবিশেষ নযর রাখবে। কেননা এই পাঁচ ওয়াক্ত ছলাতই হচ্ছে হিদায়াতের পথ। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য হিদায়াতের এ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের (সাধারণ) ধারণা, স্পষ্ট মুনাফিক্ব ব্যতীত কেউ জামা‘আত থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। আমরা তো আমাদের মধ্যে এমন লোকও দেখেছি, যারা (দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে) দু’জনের উপর ভর করে (মসজিদে) যেতেন এবং উনাকে (সম্মানিত ছলাত উনার) কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার ঘরে তার মসজিদ (সম্মানিত ছলাত উনার স্থান) নেই। এতদসত্ত্বেও তোমরা যদি মসজিদে আসা বন্ধ করে দিয়ে তোমাদের ঘরেই (ফরয) ছলাত আদায় কর, তাহলে তোমরা তোমাদের মহাসম্মানিত রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক বর্জন করলে। আর যদি তোমরা তোমাদের মহাসম্মানিত রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক পরিত্যাগ করো, তথা তোমরা যদি মসজিদে আসা বন্ধ করো- তাহলে অবশ্যই তোমরা সুস্পষ্ট কুফরী করলে, তথা তোমরা কাফির/গুমরাহ হয়ে গেলে। নাউযুবিল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্থিত্ব নেই
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কথিত স্বজন-পরিজন হলেও কাফিরদেরকে বন্ধু বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৭)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই
০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের বিশাল সৈন্যবাহিনী এবং উনাদের শান-জৌলুশ, শক্তি-সামর্থ্য, রণকৌশল, রণসজ্জা, সুশৃঙ্খলতা, কাতারবদ্ধতা অপরাজেয় বীরত্বপূর্ণ মনোবল মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩১)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)