পবিত্র নামায উনার মাসয়ালা-মাসায়িল
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র ছলাত বা নামায উনার ফযীলত ও গুরুত্ব
, ১৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ছলাতুত তাসবীহ নামায পড়বে
অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ উনার নামায পড়বে, যার দ্বারা যিন্দেগীর সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।
পবিত্র ছলাতুত তাসবীহ উনার ফযীলত ও আদায় করার নিয়ম
“ছলাতুত তাসবীহ” নামায উনার বহু ফযীলত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبـِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِلْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عَبَّاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عَمَّاهْ اَلَا اُعْطِيْكَ اَلَا اَمْنَحُكَ اَلَا اُخْبِـرُكَ اَلَا اَفْعَلُ بِكَ عَشْرَ خِصَالٍ اِذَا اَنْتَ فَعَلْتَ ذٰلِكَ غَفَرَ اللهُ لَكَ ذَنْۢبَكَ اَوَّلَه وَاٰخِرَه وَقَدِيْـمَه وَحَدِيْثَه وَخَطَأَهٗ وَعَمَدَه وَصَغِيْرَه وَكَبِيْرَه وَسِرَّه وَعَلَانِيَتَه اَنْ تُصَلِّىَ اَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَاِنْ لَّـمْ تَفْعَلْ فَفِىْ كُلِّ جُـمُعَةٍ مَرَّةً فَاِنْ لَّـمْ تَفْعَلْ فَفِىْ كُلِّ سَنَةٍ مَّرَّةً فَاِنْ لَّـمْ تَفْعَلْ فَفِيْ عُمُرِكَ مَرَّةً.
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (আমার পিতা) হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে বলেন, ‘হে হযরত আব্বাস (আলাইহিস সালাম)! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবো না, আমি কি আপনাকে দান করবো না, আমি কি আপনাকে বলবো না, আমি কি আপনার সাথে করবো না দশটি কাজ? (অর্থাৎ শিক্ষা দিবো না দশটি তাসবীহ) যখন আপনি তা আমল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রথম গুণাহ, শেষ গুণাহ, পুরাতন গুণাহ, নতুন গুণাহ, অনিচ্ছাকৃত গুণাহ, ইচ্ছাকৃত গুণাহ, ছোট গুণাহ, বড় গুণাহ, গোপন গুণাহ, প্রকাশ্য গুণাহ ইত্যাদি সকল গুণাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি (ছলাতুত তাসবীহ উনার) চার রাক‘আত নামায পড়বেন। .... যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একবার তাও যদি সম্ভব না হয় তবে বছরে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে অন্তত একবার, এ নামায আপনি পড়বেন। ” (আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, বায়হাকী ফী দা’ওয়াতিল কবীর শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আর ‘ছলাতুত তাসবীহ’ নামায উনার নিয়ম সম্পর্কে কিতাবে দু’টি মত উল্লেখ আছে। একটি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, অপরটি শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী।
এখানে সম্মানিত হানাফী নিয়মটিই উল্লেখ করা হলো-
প্রথমতঃ এই বলে নিয়ত করবে যে-
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلٰوةِ التَّسْبِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবায়া রাকা‘আতি ছলাতিত তাসবীহ সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিস শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে ছানা পাঠ করবে, ছানা পাঠ করে সূরা ক্বিরাআত পাঠ করার পূর্বেই ১৫ বার নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
سُبْحَانَ اللهِ وَالْـحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ : “সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়া-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। ”
অতঃপর সূরা ক্বিরাআত পাঠ করে রুকূতে যাওয়ার পূর্বে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। রুকূতে গিয়ে রুকূর তাসবীহ পাঠ করার পর ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। রুকূ থেকে উঠে সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। অতঃপর সিজদায় গিয়ে সিজদা উনার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। সিজদা উনার থেকে উঠে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে বসে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদা উনার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। অর্থাৎ এরূপভাবে প্রতি রাক‘আতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
অতঃপর পরবর্তী রাক‘আতের জন্য দাঁড়াবে। দাঁড়িয়ে প্রথমেই ১৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তারপর প্রথম রাক‘আতের মতই উক্ত তাসবীহগুলো আদায় করবে। অর্থাৎ চার রাক‘আত নামায উনার মধ্যে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
মাসয়ালা : “ছলাতুত তাসবীহ” নামায আদায়কালীন হাতে তাসবীহ নিয়ে ছলাতুত তাসবীহ উনার তাসবীহগুলো গণনা করা মাকরূহ। অঙ্গুলি টিপে টিপে তাসবীহগুলো গণনা করতে হবে। বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, কোনো স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে।
তবে শর্ত হচ্ছে ক্বওমা ও জলসায় উক্ত তাসবীহ আদায় করা যাবে না। যেমন, সূরা ক্বিরাআত পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরাআতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরাআতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকূতে আদায় করতে হবে। রুকূতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে।
ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরাআত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে। আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে ছলাতুত তাসবীহ উনার নির্ধারিত তাসবীহ আদায় করার পর আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, এ উপলক্ষ্যে আতশবাজি, পটকাবাজী ইত্যদি নাজায়িয কার্য করে পাপের ভাগী হবে না। এগুলো হিন্দুদের রীতি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৪)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার সঠিক তারিখ ২৭শে রজব; মুসলমানদেরকে বিশেষ দিবসের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করতেই একটি গোষ্ঠী তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় (১)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবে কা’বা কাওসাইনে আও আদনা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযিমুশ শান মি’রাজ শরীফ উনার বর্ণনা মুবারক (২)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্থিত্ব নেই
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৩)
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (১)
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রচলিত হারাম রছম করুন বর্জন, পবিত্র দ্বীন পালনেই কামিয়াবী অর্জন
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)