পবিত্র নামায উনার মাসয়ালা-মাসায়িল
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র ছলাত বা নামায উনার ফযীলত ও গুরুত্ব (২৭)
, ০৯ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৩ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ০১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র কা’বা শরীফ এবং পবিত্র রওযা শরীফ
উনাদের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া যাবে না:
পবিত্র কা’বা শরীফ, পবিত্র রওযা শরীফ, পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ইত্যাদি সম্মানিত শিআর বা নিদর্শন সমূহ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সম্মানিত শিআর বা নিদর্শন সমূহ উনাদের যেরূপ সম্মান, উনাদের চিত্র বা ছবিসমূহেরও তদ্রুপই সম্মান। সম্মানিত শিআর বা নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যেই ফরয এবং অশেষ নিয়ামত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কারণ।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَآئِرَ اللهِ فَاِنَّـهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ উনাদেরকে যারা তাজীম বা সম্মান করবে নিশ্চয়ই এই সম্মান করাটা তাদের অন্তরসমূহের তাক্বওয়া বা পত্রিতার কারণ হবে। অর্থাৎ তাদের তাক্বওয়া হাছিল হবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৩২)
অপর এক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمَنْ يُّعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সমস্ত বস্তু বা বিষয়কে সম্মানিত করেছেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হুরমতসমূহ উনাদেরকে যারা তাযীম করবে, সে বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অত্যান্ত পছন্দনীয় ও প্রিয়। অর্থাৎ তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রিয় ও পছন্দনীয় হবে। তার জন্য কল্যাণ হাছিলের কারণ হবে। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
যদি যথাযথ সম্মান করা না হয় তাহলে হালাকী বা ধ্বংস রয়েছে। সে প্রসঙ্গে সতর্ক করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَآ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُـحِلُّوْا شَعَآئِرَ اللهِ وَلَا الشَّهْرَ الْـحَرَامَ وَلَا الْـهَدْىَ وَلَا الْقَلَآئِدَ وَلَآ اٰمِّيْنَ الْبَيْتَ الْـحَرَامَ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنْ رَّبِّـهِمْ وَرِضْوَانًا
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ উনাদেরকে তোমরা অসম্মান করো না এবং অসম্মান করো না সম্মানিত মাসসমূহেরও, এবং অসম্মান করো না হারাম শরীফ উনার মধ্যে কুরবানী করার জন্য নির্দিষ্ট পশুরও, এবং অসম্মান করো না ঐ সমস্ত পশুরও, যাদের গলায় পাট্টা বা মালা পরিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অসম্মান করো না ঐ সমস্ত লোকেরও, যারা বাইতুল হারাম শরীফ উনার উদ্দেশ্যে গমন করেছেন উনাদের যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার করুনা ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ শিআর বা নিদর্শন পবিত্র কা’বা শরীফ ও পবিত্র রওযা শরীফ উনাদের বেমেছাল ফযীলত ও সম্মান ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত সম্মানিত ঘর বা স্থানসমূহ উনাদের প্রতি অসম্মান করার তো প্রশ্নই উঠে না এমনকি উক্ত সম্মানিত স্থানে কুরবানী করার জন্য নির্দিষ্ট পশু এবং উক্ত সম্মানিত স্থানে মহান আল্লাহ পাক উনার করুণা ও সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে গমনকারী লোকদের প্রতিও অসম্মান করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَيَّاشِ بْنِ اَبِىْ رَبِيْعَةَ الْـمَخْزُوْمِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَزَالُ هٰذِهِ الْاُمَّةُ بِـخَيْرٍ مَا عَظَّمُوْا هٰذِهِ الْـحُرْمَةَ حَقَّ تَعْظِيْمِهَا فَاِذَا ضَيَّعُوْا ذٰلِكَ هَلَكُوْا.
অর্থ: হযরত আইয়্যাশ ইবনে আবূ রবীআহ মাখযূমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই উম্মত ততদিন পর্যন্ত খইর-বরকতের মধ্যে থাকবে যতদিন পর্যন্ত তারা মহান আল্লাহ পাক উনার হুরমত সমূহ উনাদের সম্মান যথাযথভাবে বজায় রাখবে। যখন উনাদের সম্মান বিনষ্ট করবে তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্য ফরয এবং নিয়ামত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কারণ। আর উনাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী এবং হালাকী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
অতএব, পবিত্র কা’বা শরীফ ও পবিত্র রওযা শরীফ উনাদের ছবি বা চিত্র সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া শুধু নাজায়িযই নয়, সাথে সাথে তা চরম বেয়াদবী এবং ক্ষেত্র বিশেষে তা কুফরী হবে এবং ঈমান আমল নষ্টের কারণ হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পবিত্র রওযা শরীফ উনার গম্বুজ সবুজ এবং পবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ কালো হওয়ার কারণে সম্মান বা আদবের জন্য উক্ত দু রংয়ের জায়নামায ব্যবহার করা হতে বিরত থাকতে হবে। অনুরূপভাবে উক্ত দু রংয়ের সেন্ডেল পরিধান করা হতেও বিরত থাকা কর্তব্য।
এছাড়া সাদা রংয়ের জায়নামায পুরুষ-মহিলা উভয়ই ব্যবহার করতে পারবে। আর লাল রংয়ের জায়নামায ইচ্ছা করলে শুধুমাত্র মহিলারা ব্যবহার করতে পারবে। আর পুরুষের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা অথবা লাল কাপড়ের জায়নামায ব্যবহার করা কোন মতেই জায়িয নেই।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)