পবিত্র নামায উনার মাসয়ালা-মাসায়িল
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র ছলাত বা নামায উনার ফযীলত ও গুরুত্ব (৩২)
, ০৩ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৪ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২৪ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সম্মানিত হানাফী মাযহাব অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে ৩ দিন পায়ে হাটার পথ সফর করলে, শরয়ী মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে। এখন সেটা পায়ে হেটে বা বাহন চড়ে অথবা যানবাহনে আরোহন করে হতে পারে, একইভাবে নৌযানে চড়ে পানিতে বা উড়োজাহাজে চড়ে আকাশ পথেও সফর করতে পারে। যেভাবেই সফর করুক না কেন, সফরের বাহন বা চলাচলের রাস্তা অনুযায়ী এর দূরত্ব, গতি ও সময় কম-বেশী হয়ে থাকে, তবে তৈরী রাস্তায় সফর করলে এর দূরত্ব শরয়ী মাপে দৈনিক ১৮ ফারসাখ হয়। সে হিসেবে ১৮X৩ = ৫৪ শরয়ী মাইল হচ্ছে মুসাফিরী পথের দূরত্ব। যা বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত বৃটিশ মাপে আনলে হয় ৬১.৩৬৩৬ মাইল আর আন্তর্জাতিক মাপে আনলে হয় ৯৮.৭৫৫ কিলোমিটার।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি কোনভাবে ৬১.৩৬৩৬ মাইল অথবা ৯৮.৭৫৫ কিলোমিটার সফর করে, তাহলে সে ব্যক্তি শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে।
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মুক্বীম উনাদের নামাযের হুকুম একরকম। আর মুসাফির উনাদের নামাযের হুকুম আরেক রকম। সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে যারা মুসাফির, তারা ক্বছর নামায আদায় করবে।
অর্থাৎ মুসাফিরগণদের জন্য যুহর, আছর ও ইশা উনার ফরয নামায ৪ রাকায়াতের স্থলে ২ রাকায়াত পড়া ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর সুন্নত নামাযে ইখতিয়ার রয়েছে। মাঝে মাঝে পড়াও সুন্নত। আবার মাঝে মাঝে না পড়াও সুন্নত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই মুসাফিরী শান মুবারক প্রকাশ অবস্থায় ক্বছর আদায় করেছেন।
মুসাফির ব্যক্তি যদি কছর নামায আদায় করার স্থলে পূর্ণ নামায আদায় করে ও প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়ার পরিমাণ বসে থাকে, তবে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকায়াত নফলের মধ্যে গণ্য হবে; কিন্তু সালামের বিলম্বের দরুণ গুনাহগার হবে। এ জন্য সাহু সিজদা দিতে হবে। সাহু সিজদা না দিলে নামায ফাসিদ হবে। আর যদি ২ রাকায়াতের পর না বসে থাকে তাহলেও নামায ফাসিদ হবে।
নামাযে কিরায়াত পড়া ফরয। পবিত্র সুরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব। কছর নামাযের ২ রাকায়াতের কোন রাকায়াতে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ না কলে সাহু সিজদা দিতে হবে। আর সাহু সিজদা না দিলে নামায ফাসিদ হবে। একইভাবে কছর নামাযের প্রথম ২ রাকায়াতের যে কোন রাকায়াতে কিরাত না পড়লে নামায ফাসিদ হবে।
মুসাফিরের পিছনে মুকিমের ইক্তিদা করা জায়িয আছে। চাই ওয়াক্তিয়া নামায হোক কিংবা একই কাজা নামায হোক। যখন মুসাফির নামায হতে বের হওয়ার জন্য সালাম ফিরাবে তখন মুকিম মুক্তাদি দাঁড়িয়ে বাকি নামায আদায় করবে; কিন্তু কিয়ামের মধ্যে সূরা ফাতিহা ও কিরাত পড়তে হবে না।
শুধু ফাতিহা পড়তে পারে এই পরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে থেকে যথারীতি নামায আদায় করবে। ঐ বাকি রাকায়াতে ফাতিহা পড়লে মাকরূহ তাহরীমের গুনাহ হবে। মুসাফির ব্যক্তি মুকিমের ইমামতি করলে নামাযের শেষ সালামের পরেই সকলকেই জানিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। ইমাম ছাহেব বলবেন- আমি মুসাফির, মুকিম সকলে নামায পূর্ণ করুন।
মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমাম ছাহেবের পিছনে নামায আদায় করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ইমাম ছাহেব পুরো নামায আদায় করলে মুসাফির ব্যক্তিও মুক্তাদি হিসেবে ইমাম ছাহেবের সাথে পুরো নামায আদায় করবে। তবে তখনও মুসাফিরের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আদায়ে ইখতিয়ার থাকবে।
মুসাফির ইমাম ছাহেব যদি শুধু মুকিম মুক্তাদিদের নামায পূর্ণ করার নিয়তে ইকামত করে, তবে ইমামের ইকামত শুদ্ধ হবে না, ঐ ইমাম ছাহেবের ২ রাকায়াত ফরয ও ২ রাকায়াত নফল হবে। মুকিম মুক্তাদিরা ঐ ইমাম ছাহেবের ইক্তিদা করলে মুক্তাদির নামায ভঙ্গ হবে। কারণ নফলের সাথে মুক্তাদিদের ফরয পড়া হয়েছে।
মুসাফিরের জন্য জামাতে নামায আদায়ে বাধ্য-বাধকতা নেই। জামাতে নামায আদায় করতে পারলে তার জন্য ছওয়াব রয়েছে। তবে জামাতে নামায আদায় করতে না পারলে মুসাফিরের জন্য কোন গুণাহ নেই।
মুসাফিরের জন্য জুময়া ফরজ নয়। ইচ্ছা করলে সে জুময়া আদায় করতে পারে। এতে তার জন্য ছওয়াব থাকবে। আবার ইচ্ছা করলে যুহর আদায় করে নিবে। একইভাবে মুসাফিরের জন্য দুই ঈদের নামায ওয়াজিব নয়। তাছাড়া পবিত্র রমাদ্বান শরীফে তারাবীহর নামাযও মুসাফিরের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়। এ সবই মুসাফিরের ইখতিয়ারভূক্ত।
যদি কেউ নিজ বাড়ি ত্যাগ করে অন্যত্র কোন স্থানে নতুন বাড়ি তৈরী করে, তবে ঐ নতুন বাড়ি হতে ছফরের নিয়ত করতঃ বের হয়ে পূর্ব বাড়িতে পৌঁছলে কছর পড়তে হবে। কিন্তু পূর্ব বাড়ি হতে মুসাফিরের নিয়তে বের হয়ে নতুন বাড়িতে পৌঁছলে মুকিমের মধ্যে গণ্য হবে, কছর নামায পড়বে না।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার সরাসরি মুবারক তত্ত্বাবধানে বা ছোহবত মুবারকে অবস্থানকালে মুরীদের কোন ব্যক্তিগত মত থাকবেনা। হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম তিনি যদি মুসাফির হিসেবে কছর আদায় করেন, মুরীদও কছর আদায় করবে। যদিও মুরীদের মাঝে মুকিমের শর্তসমূহ প্রকাশ পায়। একইভাবে হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম তিনি যদি মুকিম হিসেবে পূর্ণ নামায আদায় করেন, মুরীদও পূর্ণ নামায আদায় করবে। যদিও মুরীদ মুসাফির হিসেবে সফর করে আসুক না কেন। এটাই শরয়ী ফায়সালা এবং আদব।
গোলাম ও স্ত্রীলোক, মনিব ও স্বামীর সাথে একত্রে মুসাফির হলে গোলাম বা স্ত্রীলোকে ইকামতের নিয়ত শুদ্ধ হবে না, কারণ মনিব ও স্বামী অন্যত্র চলে গেলে গোলাম বা স্ত্রীর তথায় থাকার অধিকার থাকে না।
মুসাফির ব্যক্তি যদি কোন শহর বা স্থানে গিয়ে চাকুরী করার জন্য কিংবা কোন ব্যবসার জন্য কিংবা অন্য কোন কারণে গিয়ে কাল যাবে কি পরশু যাবে, এরূপ করতে করতে যদি বছরকালও অতিক্রম করে তবুও কছর পড়তে হবে। তাছাড়া যুদ্ধের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যে সৈন্য উপস্থিত থাকবে, তারা কছর নামায পড়বে।
কছর নামাযের কাযা কছরই করতে হবে, বেশি আদায় করা জায়েজ হবেনা। মুসাফির অবস্থায় মুকিম অবস্থার কাযা নামায আদায় করলে পুরো নামাযই আদায় করতে হবে, কছর করা জায়েজ হবেনা। একইভাবে মুকিম অবস্থায় মুসাফির অবস্থার নামায আদায় করলে কছরই পড়তে হবে। এটা শরীয়ত উনার সুস্পষ্ট ফায়সালা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)