পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র ছলাত বা নামায উনার ফযীলত ও গুরুত্ব
, ০২ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০২ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ বা পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ নামে একটি রাত রয়েছে; যে রাতের ইবাদত এক হাজার মাসের (৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّا اَنْزَلْنَاهُ فِـىْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ. وَمَا اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ. لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ. تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبّـهِمْ مِّنْ كُلِّ اَمْرٍ. سَلَامٌ هِيَ حَتّٰى مَطْلَعِ الْفَجْرِ.
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমরা উহা (পবিত্র কুরআন শরীফ) নাযিল করেছি পবিত্র ক্বদর শরীফ উনার রাতে। আপনি কি জানেন, পবিত্র ক্বদর শরীফ উনার রাত কি? অর্থাৎ আপনি তো জানেন পবিত্র ক্বদর শরীফ উনার রাত সম্পর্কে। পবিত্র ক্বদর শরীফ উনার রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম। উনাদের মহান রব তা‘আলা উনার অনুমতিক্রমে রূহ (হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম) ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা এ রাতে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, প্রত্যেক কাজে বা হুকুমে। শান্তি নাযিল হয়। উহা (পবিত্র ক্বদর শরীফ রাত) ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত (বলবৎ থাকে)।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
تَـحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَّمَضَانَ فَاطْلُبُوْهَا فِـى الْوِتْرِ مِنْهَا
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশকের বিজোড় রাতে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ তালাশ করো।” (বুখারী শরীফ)
এখানে উল্লেখ্য, ২৭ তারিখে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ হওয়ার পক্ষে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি নির্ভরযোগ্য মত থাকার কারণে হানাফীগণ উনারা যদিও উক্ত তারিখে বিশেষভাবে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ তালাশ করে থাকেন। কিন্তু যামানার মহাসম্মানিত ইমাম, আহলে বাইতে রসূল, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ তালাশ করা উচিত। যেহেতু তা খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا دَخَلَ عَشْرُ الْاَوَاخِر مِنْ رَّمَضَانَ شَدَّ مِئْزَرَه وَاَحْيَا لَيْلَه وَاَيْقَظَ اَهْلَه
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিবস উপস্থিত হলে কোমর বেঁধে ইবাদত করতেন, সারা রাত জেগে থাকতেন এবং নিজের পরিবার পরিজনকে জাগ্রত রাখতেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ اِيْـمَانًا وَّاِحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِهٖ
অর্থ : “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে পবিত্র ক্বদর শরীফ উনার রাত ইবাদতে কাটাবে তার পূর্বকৃত গুণাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
পবিত্র ক্বদর শরীফ রাত্রিতে যেসব ইবাদত করতে হবে
ইশা উনার ফরয নামায ও দু’রাক‘আত সুন্নত পড়ার পর ২০ রাক‘আত তারাবীহ নামায পড়া। অতঃপর পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠান্তে ছওয়াব রেসানী করে ইমাম ছাহেব সমবেত মুছল্লীবৃন্দকে নিয়ে দু‘আ করা।
পবিত্র ক্বদর শরীফ উনার নামায
অতঃপর ছলাতুল ক্বদর উনার নিয়তে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাক‘আত সুন্নত নামায পড়া। এ নামায পড়ার নিয়ম হলো দু রাক‘আত, দু রাক‘আত করে পড়া। অন্যান্য সুন্নত বা নফল নামায উনার ন্যায় পড়তে হবে। অর্থাৎ পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার পর যেকোনো পবিত্র সূরা মেলালেই চলবে।
পবিত্র ছলাতুল ক্বদর উনার নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক‘আতাই ছলাতি লাইলাতিল ক্বদরি সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ, পবিত্র দুরূদ শরীফ, যিকির-আযকার, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ নামায এবং সবশেষে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করে ছওয়াব রেসানী করে ইমাম ছাহেব সমবেত মুছল্লীবৃন্দকে নিয়ে দু‘আ করবেন।
দু‘আ-মুনাজাত শেষ হলে পরবর্তী দিনে রোযা রাখার জন্য সাহরী খেতে হবে। অতঃপর ছুহবে ছাদিক্ব বা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া মাত্র আযান দিয়ে নামায আদায় করবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত অধ্যায়ে রয়েছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৫)
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার সঠিক তারিখ ২৭শে রজব; মুসলমানদেরকে বিশেষ দিবসের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করতেই একটি গোষ্ঠী তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় (৩)
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৪)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার সঠিক তারিখ ২৭শে রজব; মুসলমানদেরকে বিশেষ দিবসের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করতেই একটি গোষ্ঠী তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় (১)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবে কা’বা কাওসাইনে আও আদনা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযিমুশ শান মি’রাজ শরীফ উনার বর্ণনা মুবারক (২)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্থিত্ব নেই
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)