ইলমে তাছাউফ
পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করা ও কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
, ০২ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০২ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
অর্থ: “আর যখন আপনার মহান রব তাআলা তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললেন, আমি যমীনে খলীফা প্রেরণ করবো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন মানুষ সৃষ্টি করার এবং যমীনে প্রেরণ করার কথা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জানালেন, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন-
قَالُوْا أَتَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ
অর্থ: “আয় বারে ইলাহী! আপনি কি যমীনে এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যারা মারামারি, কাটাকাটি, ফিতনা-ফাসাদ ও রক্ত প্রবাহিত করবে? অথচ আমরা সবসময় আপনার প্রশংসা মুবারকের সাথে তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছি ও আপনার পবিত্রতা মুবারক বর্ণনা করছি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
অর্থাৎ যদি তাসবীহ-তাহলীল ও যিকির-আযকার করার জন্যে হয়, তবে তো আমরাই রয়েছি, তাহলে বনী আদম উনাদেরকে সৃষ্টি করার কি কারণ রয়েছে?
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের এ কথার জবাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি যা জানি, আপনারা তা জানেন না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি যমীনে কেন খলীফা পাঠাবো, তার হাক্বীক্বী রহস্য আপনাদের জানা নেই।”
উক্ত গুপ্তভেদ বা হাক্বীক্বী রহস্য জানানোর উদ্দেশ্যেই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থ: “আমি জিন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমার পবিত্র ইবাদত করার জন্যেই সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
স্মরণীয় যে, পবিত্র ইবাদত হলো দু’প্রকার- (১) পবিত্র ইবাদতে যাহিরাহ ও (২) পবিত্র ইবাদতে বাতিনাহ।
পবিত্র ইবাদতে যা-হিরাহ হচ্ছে- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, মুআমালাত, মুআশারাত ইত্যাদি। আর পবিত্র ইবাদতে বা-তিনাহ হচ্ছে ইরফানে খোদাওয়ান্দী বা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত ও মুহব্বত মুবারক।
মূলত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পবিত্র ইবাদতে যাহিরার সাথে সাথে পবিত্র ইবাদতে বাতিনাহ বা ইরফানে খোদাওয়ান্দী অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত-মুহব্বত মুবারক হাছিল করার জন্য।
যদি শুধু ইবাদতে যাহিরাহ করার জন্য হতো, তাহলে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাই যথেষ্ট ছিলেন।
তাই উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাঝে لِيَعْبُدُوْنِ শব্দ মুবারক উনার তাফসীরে মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও অনুসরণীয় মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন لِيَعْرِفُوْنِ অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র ইরফানে খোদাওয়ান্দী বা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত-মুহব্বত মুবারক হাছিল করার জন্য।
এক কথায়, যাহির ও বাতিন উভয় দিক দিয়ে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী আব্দ্ বা গোলাম হওয়াই বান্দার একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই পবিত্র তাছাওউফ উনার পরিভাষায় আব্দিয়াতের মাক্বাম হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ মাক্বাম। অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মতে পরিপূর্ণ মত এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পরিপূর্ণ পথ হওয়াই হাক্বীক্বী আব্দিয়াত বা গোলামী। আর যে ব্যক্তি তা হতে পারবে, সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আব্দ্ বা গোলাম।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে অনেক আগের একটি ঘটনা উল্লেখ আছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার এক ওলী তিনি বাজার থেকে একজন গোলাম খরিদ করে আনেন। খরিদ করে বাড়িতে আনার কিছুক্ষণ পর মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তিনি উনার খরিদকৃত গোলামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গোলাম! তুমি কি খাবে? গোলাম জবাব দেয়, হুযূর! আপনি আমার মনিব, আপনি আমাকে যা খাওয়াবেন আমি তাই খাবো। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি পরিধান করবে? গোলাম জবাব দেয়, আপনি যা পরিধান করতে দিবেন তাই পরিধান করবো। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় থাকবে? গোলাম জবাব দেয়, আপনি যেখানে রাখবেন সেখানেই থাকবো। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হে গোলাম! তুমি কি কাজ করবে? গোলাম জবাব দেয়, হুযূর! আপনি আমাকে যে কাজ দিবেন, আমি সে কাজই করবো।
যখন মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনার খরিদকৃত গোলাম উল্লেখিত প্রশ্নসমূহের জবাব প্রদান করলো, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী কাঁদতে লাগলেন। উপস্থিত মুরীদ-মু’তাকিদ ও ভক্তবৃন্দ প্রশ্ন করলেন, হুযূর! আপনি কাঁদছেন কেন?
আপনার গোলাম তো অন্যায় কিছু বলেনি বরং সে সন্তুষ্টিমূলক ও সঠিক জবাব দিয়েছে। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বলেন দেখ, এ গোলাম সন্তুষ্টিমূলক ও সঠিক জবাব দেয়ার কারণেই আমি কাঁদছি। মাত্র অল্প কিছুক্ষণ হলো এ গোলামকে আমি খরিদ করে এনেছি, আর এরই মধ্যে সে তার মতকে আমার মতের সাথে পরিপূর্ণ মিলিয়ে দিয়েছে, এটাই তো হাক্বীক্বী গোলামীর নিদর্শন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে উনার গোলামী করার জন্য সৃষ্টি করেছেন, অথচ আমি এখনো পরিপূর্ণরূপে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত হতে পারিনি।
মূলকথা হলো, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে পবিত্র ইবাদত করার পদ্ধতি ও ইরফানে খোদাওয়ান্দী বা মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত-মুহব্বত মুবারক হাছিল করার নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা জানিয়ে দেয়ার জন্য সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম উনাকে হাদিয়া করেন।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং পবিত্র ইসলাম উনাকেই তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
মূলত জিন ও মানবজাতি উনাদের জন্য খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হুকুম মোতাবেক চলতে হলে যা কিছুর দরকার সকল বিষয়েরই ফায়ছালা বা সমাধান পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদের মধ্যে রয়েছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)