নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়াই ঈমানদারের পরিচয়
, ১৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
এক ব্যক্তি ছিল মুনাফিক, তার নাম ছিল বিশর। সে নিজেকে মুসলমান দাবী করতো, মূলত সে মুনাফিক ছিলো। এই মুনাফিক বিশরের সাথে এক ইহুদীর গন্ডগোল হয়ে যায়। যখন গন্ডগোল হয়ে গেল, তখন মুনাফিক বিশরকে ইহুদী বললো, হে বিশর এটার বিচার করতে হবে। কে বিচার করবেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করবেন। মুনাফিক বিশর মনে মনে চিন্তা করলো, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি বিচার করেন, তিনি তো হক্ব বিচার করবেন, যেহেতু ইহুদী হক্ব, ইহুদীর পক্ষে রায় চলে যাবে। তখন মুনাফিক বিশর বললো যে, না তোমরা এক কাজ কর, তোমাদের যে বিচার করনেওয়ালা, কাব ইবনে আশরাফ ইহুদী সে বিচার করবে।
কিন্তু ইহুদী ব্যক্তি জানতো যে, কাব ইবনে আশরাফ যদি বিচার করে, তাহলে সে মুনাফিকী করবে। সে হেরফের করবে, সে ঘুষ খায়ে সঠিক ফায়সালা করে না। তখন সেই ইহুদী বললো না, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করবেন।
এই কথা বলে মুনাফিক বিশরকে বুঝিয়ে নিয়ে গেল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে। বিচার হয়ে গেল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করলেন। মুনাফিক বিশরের বিরুদ্ধে ইহুদীর পক্ষে রায় পড়লো, ইহুদী জিতে গেল।
সেই যামানায় সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি বিচার করতেন। যখন ইহুদী জিতে গেল, তখন মুনাফিক বিশর সে মনে করলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম উনার খুব জালালী তবিয়ত। তিনি কাফেরদের প্রতি কঠোর। উনার প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ.
অর্থাৎ “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি কাফিরদের প্রতি কঠোর। ” তিনি হয়তো আমার পক্ষেই রায় দিবেন। মুনাফিক বিশর সে ইহুদীকে নিয়ে গেল সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম উনার কাছে বিচারের জন্য।
ইহুদী খুব চালাক ছিল, সে বললো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম! এই বিশর আমাকে নিয়ে এসেছে আপনার কাছে বিচারের জন্য, অথচ মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করে দিয়েছেন। বিচার আমার পক্ষে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশর সেটা মিনে নিচ্ছেনা। সে জন্য আপনার কাছে নিয়ে এসেছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- ঠিক আছে তোমরা বস, তোমাদের আমি বিচার করব। তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন, ঘরে প্রবেশ করে একটা তরবারী নিয়ে আসলেন। তরবারী এনে মুনাফিক বিশরকে এক কোপে দু’ভাগ করে দিলেন এবং বললেন, তোমার এটাই বিচার। কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে বিচার করেছেন, সেটা তুমি মেনে নাও নাই। তোমার শাস্তি ও বিচার একমাত্র মৃত্যুদ-।
যখন তিনি তাকে হত্যা করে ফেললেন, তখন মুনাফিক বিশরের আত্মীয়-স্বজন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম উনাকে আপনি বিচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি আমাদের একজন আত্মীয়কে হত্যা করে ফেলেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, দেখ এটা কি করে সম্ভব? সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি তো এমন করার কথা না। উনার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لو كانَ بَعدي نبيٌّ لَكانَ حَضْرَتْ عُمَرُ بنُ الخطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ
অর্থাৎ আমার পরে যদি কেউ নবী হতেন, তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি নবী হতেন। কাজেই উনার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, ঠিক আছে উনাকে ডাকা হোক। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম উনাকে আনা হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম! আপনি নাকি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন?” সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মূলতঃ আমি তাকে হত্যা করার কারণ হচ্ছে- সে মুনাফিক, মুসলমান নয়।
আপনি যে ফায়সালা মুবারক করেছিলেন, সে আপনার ফায়সালা মুবারক মানেনি, সেজন্য আমি তাকে হত্যা করেছি। মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম! আপনি যে তাকে হত্যা করেছেন, সে যে মুনাফিক, তার প্রমাণ কি? কোথায় আপনার দলীল, আপনার সাক্ষী কোথায়?” যেহেতু সম্মানিত দ্বীন ইসলামে সাক্ষী ছাড়া কোন কথা গ্রহণযোগ্য নয়। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি চুপ করে রইলেন। সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজে সাক্ষী হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন-
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থ: (ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমিই সাক্ষী) মহান আল্লাহ পাক উনার কছম, কোন ব্যক্তি মু’মিনে কামিল হতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি আপনাকে সীরতান-সুরতান, জাহেরী-বাতেনী, বাহ্যিক-আভ্যন্তরীণ প্রত্যেক দিক দিয়ে আপনাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। আপনার হুকুম-আহকাম মুবারক না মেনে নিবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ:৬৫)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও ওয়াক্বেয়া থেকে স্পষ্ট হলো, যে বা যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়সালা মুবারক মেনে নিবে না তারা কস্মিনকালেও ঈমানদার নয়; বরং তারা কাট্টা কাফির।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِنْ تُطِيْعُوْهُ تَهْتَدُوْا
অর্থ: আর যদি তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ মুবারক করো, তাহলেই তোমরা সম্মানিত হিদায়েত মুবারক লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং:-৪৫)
অর্থাৎ ঈমানদারের পরিচয় হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সকল ফায়সালা মুবারক, মহাসম্মানিত সুন্নাহ মুবারক আঁকড়িয়ে ধরবে, মেনে নিবে, পালন করবে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সর্বক্ষেত্রে মহাসম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনার উপর ইস্তিক্বামত থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (১)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘তালবীনা’
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি ও উপকারিতা : দুধ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খেজুরের রস খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)