সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (২৬)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বত প্রকাশের একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
, ০১ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু; তিনি তখনও পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি। সে সময় পবিত্র মক্কা শরীফের কুরাইশ কাফিররা আইন জারি করে দিলো, যে কেউ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যদি কোন প্রকার সম্পর্ক স্থাপন করে কিংবা মুহব্বত প্রকাশ করে তবে তার একমাত্র শাস্তি হবে মৃত্যুদ-। নাঊযুবিল্লাহ! একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাস্তা অতিক্রম করছিলেন। পথিমধ্যে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে সমস্ত বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে আন্তরিক মুহব্বতে আলিঙ্গন করলেন। কতিপয় কুরাইশ এ অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখে ফেললো। তখন কুরাইশরা জড়ো হয়ে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললো- হে আমাদের সরদার আবু জাহিলের পুত্র! আপনারাই আইন করলেন, এখন দেখি আপনারাই সেই আইন ভঙ্গ করে বসলেন। এখন আপনাদের আইন মুতাবিকই তো আপনার কঠোর শাস্তি পাওয়া উচিত। তখন হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন- ঠিক আছে, আমি সর্দারের পুত্র হয়েছি তো কি হয়েছে? আইন মুতাবেক আমার শাস্তি মৃত্যুদ- তোমরা বাস্তবায়িত করো। তারা জানতে চাইলো- আপনি কিভাবে শাস্তি গ্রহণ করবেন অর্থাৎ কিভাবে আপনাকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করবো? তিনি বললেন যে, তোমরা তোমাদের খুশিমতই শাস্তি প্রদান করে খায়েশ পূর্ণ করো। শেষ পর্যন্ত উনাকে হাত-পা বেঁধে লোহিত সাগরের মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত! তিনি পানিতে ডুবা তো দূরের কথা বরং হাজার হাজার মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী দুরূদ শরীফ পাঠ করতে করতে উনাকে পিঠে ও মাথায় করে নিরাপদে তীরে পৌঁছে দিলো। এভাবে বেঁচে থাকতে দেখে কুরাইশরা বললো- এখন আপনাকে কিভাবে শাস্তি দিতে পারি? তিনি বললেন যে- এক কাজ করো, আমাকে তোমরা এমন এক গহীন জঙ্গলে ফেলে রেখে আসো, যেখানে হিংস্র প্রাণীরা আমাকে খেয়ে শেষ করে দিবে। সম্ভবতঃ এটাই উপযুক্ত শাস্তি হবে। কথামত উনাকে সেরকমই করা হলো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার কি কুদরত! জঙ্গলের সমস্ত প্রাণীগুলো দলবদ্ধভাবে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে করতে উনাকে ঘিরে রাখলো। এক সময় একটা সিংহী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত-পায়ের সমস্ত বাঁধনগুলি খুলে উনাকে জঙ্গলের কিনারায় রেখে আসলো।
কুরাইশরা এবারো উনাকে পূর্ণরূপে সুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে আশ্চর্যান্বিত হলো। তারা অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করলো- হে ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনাকে সমুদ্রের মাছ ও জঙ্গলের প্রাণীরাও ভক্ষণ করলো না বরং হিফাযত করলো, তার কি কারণ? তখন হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমার সাথে সমুদ্রের মৎস্যকূল এবং জঙ্গলের প্রাণীদের কথা হয়েছে। তাদের জবান মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে খুলে দিয়েছিলেন। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, হে মৎস্য ও প্রাণীরা! তোমরা আমাকে খেয়ে নিঃশেষ করে দাও। কারণ আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মুয়ানাকা করেছি। তাই শাস্তিস্বরূপ ভক্ষণ করতে তোমাদের মাঝে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমার কথা শুনে তারা বললো- হে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এটা তো কোনমতেই সম্ভব নয়। আমরা তো আপনার শরীর থেকে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুঘ্রাণ মুবারক পাচ্ছি। আমরা কি করে আপনাকে খাই? আমরা কি করে আপনাকে কষ্টে নিপতিত করি? পানিও আপনাকে কষ্ট দিতে রাজি নয়। একই কথা বলে জঙ্গলের পশুরা আমাকে জঙ্গলের কিনারায় নিরাপদে পৌঁছে দিলো। এরপরও অতঃপর কুরাইশরা বললো- তাহলে কি করে আপনার শাস্তি দেয়া যায়? তখন তিনি বললেন- ঠিক আছে, এক কাজ করো, আমাকে পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে দাও। তাই করা হলো। কিন্তু এবারো মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারকে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পাহাড়ের নিচে এসে পৌঁছলেন। এবার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাকে কোলে করে পাহাড়ের নিচে নামালেন। যার ফলে উনার কিছুই হলো না। এ অবস্থায় কুরাইশ কাফিররা হতাশা ব্যক্ত করে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শাস্তি দেয়া থেকে বিরত হলো। এর কিছুকাল পরেই হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ছায়াতলে দাখিল হলেন। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
বর্ণিত ইমানদীপ্ত ঘটনায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- একমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সামান্য মুহব্বত প্রকাশের সীমাহীন বরকতের ফলেই হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথিত অপরাধের কঠিন শাস্তিগুলো শান্তিময় নবজীবন লাভে ধন্য হলো। একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সামান্যতম ছোহবত মুবারকের তাছিরের গুরুত্ব, সম্মান দিতে পশু-পাখি-মৎস্যকূল কত বেশি তৎপর-সচেতন ছিল সেটাও প্রকাশ পেল। এখন তাহলে যে মহান মাস-তারিখ-দিন এর সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদতী শান মুবারক, বিছালী শান মুবারক উনার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেগুলোর মর্যাদা, সেগুলোর প্রতি তা’যীম-তাকরীম সম্মান উম্মাহকে কতটুকু করতে হবে তা ফিকির করতে হবে। এই ফিকিরকে যথার্থরূপে করতে হলে অবশ্য অবশ্যই সবাইকে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় ছোহবত মুবারকে আসতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)