নিশীথ সূর্যের দেশ গ্রিনল্যান্ড
, ২৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পাঁচ মিশালী
পৃথিবীটা আসলেই কি বেশ বড়, নাকি খুব ছোট? এর উত্তর মূলত আপেক্ষিক। সারা কায়িনাতের দিক থেকে পৃথিবী এক ধূলিকণাও নয়। অনেকটা অলৌকিক হলেও সত্য, প্রতিটা প্রাণের জন্ম এই ধূলিকণায়। শতাধিক বছর আগেও পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষ জীবন কাটিয়ে দিয়েছে জন্মস্থানের ৫০ মাইল সীমানার ভেতর। হাতে গোনা খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষ পা বাড়িয়েছে অচেনা জগতে অর্থাৎ দূর দেশে, সাগরের ওপাশে কী আছে না জেনেই পাল তুলে দিয়েছে উত্তাল সাগরে। শতাধিক বছর আগে আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে প্রথম কমার্শিয়াল এয়ারলাইন ১৯১৪ সালের পহেলা জানুয়ারি অতিক্রম করে মাত্র ১৭ মাইল। এখন এয়ারবাস ৩৫০ এয়ারক্রাফট কোথাও না থেমে চলে যেতে পারে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। এক শতক আগেও মানুষ ভাবেনি পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যাওয়ার কথা, উত্তর বা দক্ষিণ মেরু তো কল্পনার অতীত। আর এখন বিলাসবহুল জাহাজ নিরাপদ ভ্রমণে যায় পৃথিবীর আনাচে কানাচে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আইল্যান্ড:
পৃথিবীর দক্ষিণে আছে গোটা মহাদেশ, এন্টার্কটিকা। উত্তর শুধুই নৌ-পথ, কোনো স্থল নেই পৃথিবীতে উত্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে। শীতে সাগর জমে হয় বরফের দেশ। গ্রীষ্মে গলতে থাকে কিছুটা- চক্র চলে এভাবেই। পৃথিবীর আটটি দেশের কিছু অংশ পড়েছে সুমেরু বৃত্তে। রাশিয়ার সাইবেরিয়া, আমেরিকার উত্তরাঞ্চল, নরওয়ে-সুইডেন-ফিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল। সবচেয়ে বড় যে দেশটি সুমেরু বৃত্তে পড়ে আছে তা হলো গ্রীনল্যান্ড। নাম শুনে সবুজ মনে হলেও গ্রিনল্যান্ড প্রায় সম্পূর্ণ ঢাকা সাদা বরফে। গ্রিনল্যান্ড পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আইল্যান্ড। ভৌগোলিকভাবে উত্তর আমেরিকার অংশ হলেও রাজনৈতিকভাবে দেশটি ইউরোপের অংশ। স্বায়ত্তশাসিত এই দেশটি ডেনিশ রাজ্যের অংশ। যেখানে মানুষের থাকা প্রায় অসম্ভব, তার নাম গ্রিনল্যান্ড করার উদ্দেশ্য ছিল অন্য নাবিকদের আকৃষ্ট করা; কিছু মানুষকে আকৃষ্ট করে জনবসতি তৈরি করা।
গ্রিনল্যান্ডে আদিবাসীরা আসে মূলত রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে, আদিবাসীরা পরিচিত ‘ইনউইট’ নামে। পরবর্তী সময়ে ডেনিশ ও ইউরোপিয়ানদের আগমনে ধীরে ধীরে মানুষের মিশ্রণ হতে থাকে। আকারে দেশটি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের তিন ভাগের এক ভাগ, বা পশ্চিম ইউরোপের সমান। মোট জনসংখ্যা ৫৬ হাজার। প্রতি এক হাজার বর্গকিলোমিটারে মানুষের সংখ্যা মাত্র ৩ জন। এখানে মানুষের অবস্থান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, রাস্তাঘাটের সংযোগ নেই। জনবসতি মূলত বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগের উপায় নৌকা বা ছোট জাহাজ। কিছু শহরে যাতায়াত করতে হয় প্লেনে। এখানে ফ্লাইটগুলো আসে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন থেকে। গ্রীষ্মের কয়েক মাস অল্প কিছু ফ্লাইট যাতায়াত করে প্রতিবেশী দেশ আইসল্যান্ড থেকে।
যখন চব্বিশ ঘণ্টাই দিন:
গ্রিনল্যান্ডে বছরের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকলেও জুলাই-আগস্টে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ অংশে তাপমাত্রা ঘোরাঘুরি করে হিমাঙ্কের আশপাশে। এই সময়টাতে সুমেরু বৃত্তে সূর্যাস্ত হয় না। চব্বিশ ঘণ্টা দিনের পর দিন আকাশে সূর্য। এই সময়টিতেই বেশিরভাগ পর্যটকের আগমন গ্রিনল্যান্ডে।
বরফ আচ্ছাদিত দেশটির শহর:
নুক শহর। নুক গ্রীনল্যান্ডের রাজধানী। শহর বললে হয়তো বেশ বড় কিছু মনে হতে পারে। রাজধানী কতটা বড় বা ছোট সেটা বোঝা যাবে এক কথায়Ñ পুরো শহরে মোট ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট তিনটি। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত নুক। এছাড়া ইলিউলিসাত নামে গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিমে মাঝামাঝিতে সুমেরু বৃত্তের ভেতরে আরও একটি শহরের অবস্থান। এখান থেকে কখনও তিমির আনাগোনা দেখা, কখনও সাগরের তীর ঘেঁষে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশে মাছ ধরতে দেখা যায়। এখানে আছে রেস্তোরাঁ। বছরে সাময়িকভাবে পর্যটকদের জন্যই করা হয়েছে এই রেস্তোরাঁ। তাজা মাছ রান্না করা, রাতে খাবার শেষে আবার বোটে করে ফিরে আসা নিজস্ব দ্বীপে। রাত বলাটা ভুল হলো। সময়ের দিক থেকে তখন অনেক রাত। কিন্তু সূর্য দিগন্তে ঘেঁষে বেড়াচ্ছে সারাবেলা। গ্রীনল্যান্ডের মূল ভূখ-ে শীতে সূর্যোদয় হয় না; গ্রীষ্মে সূর্য ডোবেও না। এর মূল কারণ পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষ। শীতে উত্তর মেরু সরে যায় সূর্যের বিপরীতে, গ্রীষ্মে ঠিক বিপরীত।
আইসবার্গের মাঝে এক অপার্থিব জগৎ:
ইন্টারনেটে কেউ যখন উত্তর মেরুর অবস্থান ও ছবি খোঁজে, বেশিরভাগ ছবিই চলে আসে ইলিউলিসাত বা তার আশপাশ থেকে। গ্রিনল্যান্ডের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা, যা বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট যে জায়গায় ভ্রমণ করেন তা হলো ইলিউলিসাত। এখানেই বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল গ্লেসিয়ার। শত সহস্র বছরের জমে থাকা বরফ চাপে নেমে আসতে থাকে সাগরের বুকে। তৈরি হয় আইসবার্গ।
ধীরে ধীরে চলতে থাকে মূল সাগরের দিকে। ইলিউলিসাতের এই গ্লেসিয়ার থেকে নেমে আসা আইসবার্গ তৈরি করে এক অপার্থিব জগৎ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মঙ্গলে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগের’ সন্ধান!
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির গর্ভে বিজ্ঞানীদের নজর
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পরোক্ষ ধূমপান স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যে সমস্ত মারাত্মক ক্ষতি করে?
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের বসবাস বা দ্বীন ইসলাম প্রচার নিষিদ্ধ করে রেখেছে যে সমস্ত বিধর্মী রাষ্ট্র
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২০২২ সালে সৌরজগতের বাইরে মিলেছে ২০০ গ্রহের সন্ধান
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম দেশ সিয়েরা লিওনে যেভাবে দ্বীন ইসলাম ও দ্বীনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আবাসন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপিয়ানরা
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হেঁটে যে রাস্তা আজও শেষ করতে পারেনি কেউ
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাওসে মুসলমানদের জীবনধারা
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাতারের মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় শত শত চিহ্ন
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (২)
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (১)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)