ইলমুত তাযকিয়্যাহ
নিফাক্ব বা কপটতার ভয়াবহ পরিণতি ও প্রতিকার
, ২২শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৬ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০১ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নিফাক্ব থেকে মুনাফিক্ব শব্দটির উৎপত্তি। যার মধ্যে নিফাক্ব, নিফাক্বী বা মুনাফিক্বী আচরণ রয়েছে সেই মুনাফিক্ব। মুখে একটা আর অন্তরে আরেকটা এরূপ স্বভাবের অধিকারী ব্যক্তিকেই সাধারণত মুনাফিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মুনাফিকের কাজ হলো ধোঁকা দেয়া বা প্রতারণা করা। মুনাফিক্ব দু’ শ্রেণীর হয়ে থাকে। ১. আক্বীদা বা বিশ্বাসের দিক দিয়ে মুনাফিক্ব। ২. আমল বা কর্মের দিক দিয়ে মুনাফিক্ব।
যারা আক্বীদার দিক দিয়ে মুনাফিক; এরা বাহ্যিকভাবে নিজেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অনুসারী বলে দাবী করে, কিন্তু আন্তরিকভাবে কুফরীকে লালন করে। এরা কাফির অথবা কাফিরদের চেয়ে মারাত্মক। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আর মানুষদের মধ্যে এমন কতক লোক রয়েছে, যারা বলে আমরা ঈমান এনেছি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং পরকালের প্রতি; কিন্তু তারা ঈমানদার নয়। তারা প্রতারণা করে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে এবং যারা ঈমানদার উনাদের সাথে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদেরকেই প্রতারিত করে; অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের অন্তরে রয়েছে (কপটতার) ব্যাধি। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের এ ব্যধি আরো বৃদ্ধি করে দেন। অর্থাৎ তাদের কপটতার কারণে তাদের এ ব্যাধি আরো বৃদ্ধি পায়। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি। কারণ, তারা মিথ্যা কথা বলতো।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মুনাফিক্বরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ধোঁকা দিতে চায়। এটা তো কখনো সম্ভব নয় বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে তাদের ধোঁকা বা প্রতারণার উপযুক্ত প্রতিফল প্রদান করবেন। তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন অলসতার সাথে লোক দেখানোর জন্যে নামাযে দাঁড়ায়।”
এ শ্রেণীর মুনাফিক্বদের পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِي الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَـجِدَ لَـهُمْ نَصِيْرًا
অর্থ : “নিশ্চয়ই মুনাফিক্বরা জাহান্নামের সর্ব নিম্নস্তরে অবস্থান করবে। আপনি তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী পাবেন না।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৫)
আর যারা আমল বা কর্মের দিক দিয়ে মুনাফিক্ব; তারা হচ্ছে ফাসিক, কবীরা গুনাহে গুনাহগার। এদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرِتْ اَبـِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اٰيَةُ اَلْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ اِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَاِذَا وَعَدَ اَخْلَفَ وَاِذَا ائْتُمِنَ خَانَ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মুনাফিক্বের আলামত তিনটি। যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে। যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে। যখন তার নিকট আমানত রাখা হয়, সে খিয়ানত করে। কিন্তু হযরত মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এ বিষয়টি অতিরিক্ত রয়েছে যে, যদিও সে রোযা রাখে ও নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে মনে করে।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
অনুরূপ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে পাক্কা মুনাফিক। এগুলোর মধ্যে একটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিক্বীর একটি স্বভাব বিদম্যমান, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করে। সেগুলো হলো- ১. যখন তার নিকট কিছু আমানত রাখা হয়, সে তা খিয়ানত করে। ২. সে যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে। ৩. কোন ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। ৪. যখন কারো সাথে কলহ করে, অশ্লীল কথা বলে। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
উল্লেখ্য, মুনাফিক্বদের দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে। আমলের দিক দিয়ে যারা মুনাফিক্ব, তাদের উচিত প্রকৃত বা খাঁটি মুসলমান হওয়ার জন্য সকল প্রকার মুনাফিক্বী স্বভাব পরিহার করা। আর আক্বীদার দিক দিয়ে যারা মুনাফিক্ব তাদের উচিত সকল প্রকার কুফরী আক্বীদা পরিহার করে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করা।
আর সত্যিকার আলিম তথা ওলীআল্লাহ উনার ছোহবত ব্যতীত উভয় প্রকার মুনাফিক্বী স্বভাব থেকে বেঁচে থাকা কখনোই সম্ভব নয়। উনার ফিক্বহী তা’লীমে যেমন কুফরী আক্বীদাসমূহ দূর হবে তেমনি উনার তাছাওউফী তা’লীমে মিথ্যা, ওয়াদাভঙ্গ, আমানত খিয়ানত, অশ্লীল আচরণ ইত্যাদি ফাসিক্বী স্বভাব দূর হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)