নিকাহ বা বিবাহের আহকাম
, ২০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত
মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা বিবাহ করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। আহাল-আহলিয়া (স্বামী-স্ত্রী) হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার এক বিশেষ নিদর্শন তথা নিয়ামত। দ্বীনদার আহাল ও দ্বীনদার আহলিয়া হচ্ছেন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম সম্পদ। যারা দ্বীনদার আহাল (স্বামী) দ্বীনদার আহলিয়া (স্ত্রী) পেলেন তারা দুনিয়াবী শ্রেষ্ঠ সম্পদ পেলেন। দ্বীনদার আহাল দ্বীনদার আহলিয়া মানষিক-শরীরিক সবদিক দিয়ে প্রশান্তির কারণ। নিকাহ বা বিবাহ পরহেযগার মুত্তাক্বী হওয়ার পথকে সুগম করে। নেক কাজের রাস্তা খুলে যায়, যা সাধারণত ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকে। আর স্বাভাবিকভাবে তা কখনো বন্ধ হয় না। নেককার-পরহেযগার আহাল ও আহলিয়ার ঘরে সাধারণত নেককার- আল্লাহওয়ালা সন্তান-সন্ততিই জন্মগ্রহণ করে। যারা স্বীয় পিতা-মাতার অনুগত হয়, পিতা-মাতা ইন্তিকাল করলে তারা পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে। ফলশ্রুতিতে পিতা-মাতার প্রশান্তির কারণ হয়। পক্ষান্তরে গোনাহ খতা ক্ষমা হয়। তাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। আর যে সকল পিতা-মাতা জান্নাতী হন নেককার সন্তানের দোয়া ও ছাওয়াব রেসানীর কারণে জান্নাতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরম নৈকট্য কুরবত, তায়াল্লুক, নিছবত মুবারক লাভ হয়।
সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمِنْ اٰيَاتِهٖ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ নিদর্শন হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের আহলিয়া তথা স্ত্রী। যাতে তোমরা তাদের নিকট ইতমিনান লাভ করতে পারো। আর তোমাদের পারস্পরিক মুহব্বত ও দয়া-ইহসান পয়দা করে দিয়েছেন। চিন্তাশীল লোকদের জন্য ইহাতে অবশ্যই অনেক নিদর্শন রয়েছে।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
নিকাহ বা বিবাহ করা খাছ সুন্নত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করেছেন তাকেই খাছ সুন্নত বলা হয়। পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা নিসবাতুল আযীম শরীফ শান মুবারক গ্রহণ করেছেন। সাধারণ লোকদের ক্ষেত্রে যাকে নিকাহ বা বিবাহ বলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আহলি বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে তাকে ‘নিসবাতুল আযীম শরীফ” বলা হয়।
নিকাহ বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেছেন। একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও এ ব্যপারে তারগীব করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً
অর্থ: তোমরা তোমাদের পছন্দমত দুইজন, তিনজন, চারজন নারীকে বিবাহ করো। তবে যদি আশঙ্কা করো যে, তাদের মাঝে সমতা রক্ষা করতে পারবে না, সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই বিবাহ করো।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ بِالْبَاءَةِ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّه أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّه لَه وِجَاءٌ
অর্থ: হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করার সামর্থ রাখো তারা যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা ইহা দৃষ্টিকে অধিকতর সংযত করবে। ইজ্জত-আবরুর অধিকতর হিফাযতকারী হবে। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না তার জন্য রোযা রাখা আবশ্যক। নিশ্চয়ই ইহা তার জন্য পবিত্রতার কারণ হবে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
হযরত মা’কাল ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
تَزَوَّجُوا الْوَدُوْدَ الْوَلُوْدَ فَإِنِّـيْ مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ
অর্থ: তোমরা আহালকে (স্বামী) মুহব্বতকারিণী ও অধিক সন্তান দানকারীনী নারীকে বিবাহ করো। কেননা ক্বিয়ামতের দিন অন্যান্য উম্মতগণের সামনে আমি তোমাদের (আমার উম্মতগণের) সংখ্যাধিক্যের উপর ফখর করবো। (আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ نَرَ لِلْمُتَحَابَّيْنِ مِثْلَ النِّكَاحِ
অর্থ: দাম্পত্য জীবনে আহাল-আহলিয়া পরস্পরের প্রতি যে গভীর মুহব্বত প্রতিষ্ঠিত হয়, তা অন্য কোন দুই ব্যক্তির মাঝে দেখতে পাওয়া যায় না। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَرَادَ أَنْ يَّلْقَى اللهَ طَاهِرًا مُطَهَّرًا فَلْيَتَزَوَّجِ الْحَرَائِرَ
অর্থ: হযরত আনস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি তাহির-মুতাহহার তথা পুত-পবিত্র অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে সাক্ষাত করতে চায় সে যেন ভদ্র-সম্ভ্রান্ত মেয়ে স্বাধীনা নারী বিবাহ করে। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
নিকাহ বা বিবাহ করা সুন্নত। ক্ষেত্র বিশেষে ফরয। স্বাভাবিকভাবে বিবাহ করা সুন্নত। কিন্তু যাদের অর্থ সম্পদ রয়েছে, শারীরিক সুস্থতাও রয়েছে। তাছাড়া যে কোন সময়ে কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ারসমূহ সম্ভাবনা রয়েছে তাদের জন্য নিকাহ করা ফরয। আর বিবাহ করে যদি হক্ব আদায় করতে না পারে তাহলে বিবাহ করা হারাম বা নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِيْنَ لَا يَـجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰى يُغْنِيَهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ
অর্থ: যারা বিবাহ করতে সামর্থবান নন, তারা সংযম অবলম্বন করবেন, যে পর্যন্ত না মহান আল্লাহ পাক নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাব মুক্ত করে দেন। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)