দ্বীন ইসলাম উনার খাতিরে করলে ‘অস্বাভাবিক অলৌকিক’, বিপরীতে দুনিয়ার খাতিরে করলে ‘বেজায় স্বাভাবিক’!
, ০৪ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আপনাদের মতামত
আমরা জানি যে, উনাকে পরিশেষে এধরণের কোন মেয়েকে বিয়ে করতে হয়নি এবং উনার মাধ্যমেই এসেছিলেন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ন্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ ওলীআল্লাহ, যিনি গাউছুল আ’যম নামে সমাদৃত। এখন বিষয়টি হলো, আমাদের দেশে অনেকেই রয়েছে যারা বিদেশে যাওয়ার জন্য, চাকরি পাওয়ার জন্য বা দুনিয়াবী অন্যান্য ফায়দা হাছিল করার জন্য প্রতিবন্ধী, বোবা মেয়েকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। দুনিয়াবী ফায়দার খাতিরে অনেকে তা করেও থাকে ।
সাধারণ মানুষ এধরণের ঘটনাকে ধরে নেয় ‘খুবই স্বাভাবিক’ বিষয় হিসেবে। অর্থাৎ দুনিয়াবী ফায়দার খাতিরে প্রতিবন্ধী মেয়েকে বিয়ে করা যায়, কিন্তু পরকালের খাতিরে নয়। যেই ত্যাগ আম মানুষকে দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের জন্য স্বীকার করতে হয়, দ্বীন ইসলাম উনার জন্য তা স্বীকার করতে ‘খুব বেশি’ বলেই আপাতদৃষ্টিতে বোধ হয়।
তরীক্বতের বিভিন্ন কিতাবে সুলতান মাহমুদ ও আয়াজের ঘটনাটি বহুবার এসেছে। সুলতান মাহমুদ মহামূল্যবান একটি হীরকখ- রেখে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেটিকে হাতুড়ির আঘাতে টুকরো করে ফেলতে। কোন সভাসদ তা করতে সম্মত হয়নি, কিন্তু আয়াজ বলামাত্রই তা করে দেখান। এরপর সুলতান মাহমুদ আয়াজকে ভর্ৎসনা করেন, কেন তুমি এরূপ করলে? সাথে সাথে আয়াজ ক্ষমা চেয়ে বললেন, আমার ভুল হয়েছে, আমাকে ক্ষমা করে দিন।
অথচ জীবনধারণের খাতিরে যারা বিভিন্ন অফিস আদালতে চাকরি করে, তাদেরকে প্রতিনিয়তই এধরণের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। হয়তো বস একটি কাজ করার নির্দেশ দিল, পরক্ষণেই বলে বসল কাজটি এভাবে করলেন কেন? তখন বলাও যায় না যে, আপনিই তো কাজটি এভাবে করতে বলেছেন। চাকরির খাতিরে তখন নিজে ভুল না করেও ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হতে হয়।
চাকরির খাতিরে এরকম করা আমলোকের নিকট খুবই খুবই স্বাভাবিক বিষয়, সেক্ষেত্রে আয়াজের ঘটনাটি কেন ‘বেশি কিছ’ু বলে বোধ হয়? দ্বীন ইসলাম উনার ভাবধারার সাথে সম্পৃক্ত বলেই নয় কী?
চিশতীয়া তরীক্বা উনার ইমাম হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ আজমীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত করতে গিয়ে গরম চুলা মাথায় বহন করেছেন, এজন্য উনার মাথা মুবারকে টাক পড়েছিল। উদাহরণটি অত্যন্ত উচ্চ মাকামের, এতে কোন সন্দেহ নেই। অথচ এদেশে প্রচুর শ্রমিক রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়োজিত, যারা সামান্য দুনিয়াবী ফায়দা ও অর্থের খাতিরে মরুভূমিতে গনগনে সূর্যের নীচে, উত্তপ্ত বালির উপর বছরের পর বছর পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠায়। তাদের মাথায় টাক পড়া তো স্বাভাবিক বিষয়, অনেকেই রয়েছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরে, যা কিনা সাধারণ মানুষের নিকট ‘খুব স্বাভাবিক’ বলেই বোধ হয়।
আজকাল মুসলমানরা পূর্বেকার যামানার মুসলমানগণ উনাদের শান-শওকত, কাফির-মুশরিকদের উপর উনাদের প্রভাব প্রতিপত্তির কথা স্মরণ করে হা-হুতাশ করে। অথচ একটু ফিকির করলেই বোঝা যাবে যে, পূর্বেকার যামানার মুসলমানগণ আমাদের মতোই স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন। পার্থক্য ছিল এই যে, উনাদের ‘স্বাভাবিকতা’ পরিচালিত ছিল সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দিকে, বিপরীতে বর্তমান মুসলমানদের ‘স্বাভাবিকতা’ পরিচালিত হচ্ছে দুনিয়ার দিকে।
অনেকে প্রশ্ন করে থাকে, কোন কোন কাফির-মুশরিক তো দুনিয়াবী দৃষ্টিতে অনেক ‘সেবামূলক’ কাজ করে থাকে, সেক্ষেত্রে তারা আখিরাতে এর পুরষ্কার পাবে না কেন? এর উত্তরে বলতে হয়, হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখের গরম পানির চুলা বহন করে ফযীলত হাছিল করেছেন, বিপরীতে দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে মরুভূমির মাঝে গনগনে সূর্যের তলায় উদয়াস্ত পরিশ্রম করে অনেকে। তারা জীবনে কতটুকু কী লাভ করতে পেরেছে? নিয়তের পার্থক্যই অযুত-নিযুত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে মানুষে মানুষে।
দুনিয়ার নিয়ত করলেই যদি শেষমেশ কিছু পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে কাফির-মুশরিকরা, যাদের নিয়ত সর্বদা পরিচালিত হয় দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে, তাদের শত পরিশ্রম কিংবা লোকদেখানো ভালো কাজের কী ফায়দা থাকতে পারে? যে দুনিয়া বোঝে, সে দ্বীন বুঝতে পারে। আর দুনিয়াকে বুঝতে শিখলেই বোঝা যাবে যে, অপাত্রে পরিশ্রম করে, ত্যাগ স্বীকার করে প্রতিদানে কিছুই পাওয়া যায় না।
-গোলাম মুর্শিদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
এ সকল মুখোশধারীদের আসল পরিচয় অনেকেরই অজানা!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১০ ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুব সমাজকে খেলাধুলার প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়া একটি ভয়াবহ চক্রান্ত
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তাহলেই রাজধানী হবে সমস্যামুক্ত
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুলুমতন্ত্র থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করুন
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতিদের যেভাবে উস্কানি দিচ্ছে এনজিওগুলো
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হিন্দুদের পূর্বপুরুষরাও একসময় মুসলমান ছিলো
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাবার খাবেন কোথায়?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের রক্তাক্ত ইতিহাস, যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জায়নবাদী ইহুদী পরিকল্পনার গোপন দস্তাবেজ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মীরা কখনোই চায়নি, এখনও চায় না মুসলমানদের উন্নতি
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ স্টাইলের শাসকগোষ্ঠী দিয়ে উন্নয়ন নয়, লুটপাটই হবে
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)