দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (২৮)
, ০৫ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র ঈমান রক্ষায় সাইয়্যিদুনা হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবর্ণনীয় যুলুম-নির্যাতন শিকার উনার নাম মুবারক হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। পিতার নাম আল-আরাত, দাদার নাম জানদালাহ। তিনি বনূ তামীম গোত্রের সন্তান। উনার কুনিয়াত মুবারক আবূ ইয়াহইয়া আত-তামীমী। কারো কারো মতে উনার কুনিয়াত মুবারক আবূ আব্দিল্লাহ।
যেভাবে শুরু হয় পরাধীন জীবন:
সবার মতো স্বীয় পিতা-মাতার নিকটেই স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠছিলেন হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। কিন্তু আচমকা উনাদের গোত্রের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আরবের অন্য একটি গোত্র। অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে তারা গৃহপালিত পশু ও সম্পদ লুট করে নেয়। পুরুষদেরকে হত্যা করে এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করে দাসে পরিণত করে। ঐ আক্রমণের শিকার হয়েই স্বাধীন জীবন থেকে বন্দীত্বের শিকলে আবদ্ধ হন তিনি। শুরু হয় পরাধীনতার জীবন। এ হাত ও হাত বদল হয়ে উনাকে উঠানো হয় পবিত্র মক্কা শরীফ উনার ক্রীতদাস বেচাকেনার হাটে। তখনো তিনি যৌবনে পদার্পণ করেননি। সুঠাম দেহ মুবারকের অধিকারী হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেহারা মুবারকে ছিল বুদ্ধিমত্তার ছাপ। কর্মস্পৃহা ও দক্ষতার চিহ্ন ফুটে উঠেছিল উনার পুরো চেহারা মুবারকে। প্রথম দেখাতেই পছন্দ হবে যে কারো।
এদিকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বনূ খুযা‘আ গোত্রের উম্মে আনমার (أُمِّ أَنْمَارُ) নামক এক মহিলা তার নিজের জন্য একটি গোলাম খরীদ করার জন্য ঐ বাজারে গমন করে। তার উদ্দেশ্য, সে সবল, কর্মঠ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী একজন গোলাম খরীদ করবে। এ লক্ষ্যে বাজারে আনীত সকল দাসদের চেহারা ও স্বাস্থ্য সে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। অবশেষে তার চোখ পড়ে হযরত খাব্বাব বিন আরাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি। দেখামাত্রই তার পছন্দ হয়ে যায় উনাকে। বিক্রেতার সাথে দর-দাম ফায়ছালা হলো। অতঃপর কাঙ্খিত মূল্য পরিশোধ করে উনাকে নিয়ে বাড়ীতে ফিরে আসলো উম্মে আনমার। আর এভাবেই দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ হলেন মজলুম ছাহাবী হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। (ছুওয়ারুম মিন হায়াতিছ ছাহাবা)
তরবারি তৈরীতে দক্ষতা অর্জন ও প্রসিদ্ধি লাভ:
উম্মে আনমার হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খরীদ করার পর পবিত্র মক্কা শরীফ উনার একজন কর্মকারের নিকটে তরবারি তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য প্রেরণ করে। গভীর মনোযোগের সাথে তিনি সেটা গ্রহণ করেন। হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় অল্পদিনের মধ্যেই তরবারী তৈরীর কাজে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে উনার মুনীব উম্মে আনমার উনার জন্য একটি দোকানঘর ঠিক করে দেয় এবং তরবারি তৈরির জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম খরীদ করে দেয়। অতঃপর হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সুনিপুণভাবে তরবারি তৈরীর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। অল্পদিনের মধ্যেই উনার আমানতদারিতা, সততা ও তরবারি তৈরীর দক্ষতার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে উনার দোকান থেকে তরবারি ক্রয় করে। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বাইরেও বিভিন্ন বাজারে উনার তৈরীকৃত তরবারি বিক্রি হতে শুরু করে। এভাবে তরবারি তৈরীর কাজে একজন দক্ষ কারিগর হিসাবে তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেন। (ছুওয়ারুম মিন হায়াতিছ ছাহাবা)
আইয়্যামে জাহিলিয়্যাত নিয়ে পেরেশানী:
হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বয়স মুবারক কম হলেও বুদ্ধিমত্তায় তিনি ছিলেন পরিপক্ক। ছিলেন চিন্তাশীলও। তিনি তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে মাঝে মধ্যেই চিন্তামগ্ন হতেন। কাজের অবসরে সুযোগ পেলেই ফিকির করতেন জাহিলিয়্যাতের অতল গহবরে নিমজ্জিত সেই সমাজ নিয়ে। কথিত নেতাদের দুশ্চরিত্রতা, নীতিহীনতা, যুলুম-নির্যাতন, শোষণ-নিপীড়ন, সুদ, ঘুষ, জুয়া, লটারী, মদ ও নারীতে আসক্ত হয়ে থাকা, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা এসব কিছু রীতিমত উনার অন্তর মুবারকে ক্ষতের সৃষ্টি করতো। তিনি এসব নিয়ে চিন্তা করতেন আর বলতেন-
لَا بُدَّ لِهٰذَا اللَّيْلُ مِنْ اٰخِرِ
‘এই অন্ধকার রাত্রির অবশ্যই শেষ আছে। ’ অর্থাৎ সমস্ত অন্ধকার মিটিয়ে একদিন আলোর রেখা উদ্ভাসিত হবেই। আর তা দেখার জন্য উনার অন্তর মুবারকে ছিল ব্যাপক তামান্না। সেকারণে তিনি দীর্ঘ হায়াত কামনা করতেন। (ছুওয়ারুম মিন হায়াতিছ ছাহাবা)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)