ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬)
, ১৭ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৮ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত হবে। (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, কোন অবস্থাতেই বিধর্মীদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা, তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখা জায়িয নেই বরং হারাম।
আর তাই ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব তাহতাবী ৩য় খ-, ৪৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে-
وَالتَّشَبُّهُ بِهِمْ حَرَامٌ
অর্থ: ইহুদী ও অগ্নি উপাসকদের সাথে সাদৃশ্য রাখা হারাম।
অতএব, যারা দাড়ি চেঁছে ফেলে ও গোঁফ লম্বা রাখে, তারা মূলতঃ ইহুদী-মুশরিক, মজুসী ইত্যাদি বিধর্মীদের সাথেই সাদৃশ্য রাখে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে তাদের অর্থাৎ দাড়ি চাঁছা মুসলমানদের হাশর-নশর উক্ত বিধর্মীদের সাথেই হবে।
মোটকথা- দাড়ি চেঁছে ফেলা ও গোঁফ লম্বা রাখা বিধর্মী বা বিজাতীয়দের শেয়ার বা আলামত। আর দাড়ি লম্বা করা ও গোঁফ ছোট করে রাখা ইসলামের শেয়ার বা ফিতরাত।
এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন করা, নির্বাচন করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া ইত্যাদি সবই বিজাতীয় বা বিধর্মীদের অনুসরণ-অনুকরণের শামিল। কারণ, উল্লেখিত সবই বিধর্মীদের প্রবর্তিত পদ্ধতি বা পন্থা। অতএব মুসলমানদের জন্যে তা অনুসরণ করা হারাম।
দাড়ি শেয়ারুল ইসলাম বা মুসলমানের আলামত ও সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত মুবারক:
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয়েছে যে, পুরুষের দাড়ি চেঁছে ফেলা ও গোঁফকে লম্বা করে রাখা বিধর্মী বা বিজাতীয়দের শেয়ার বা তাদের ধর্মীয় মৌলিক আমলের অন্তর্ভুক্ত। আর মুসলমানদের জন্যে বিধর্মীদের বিপরীত আমল করা অর্থাৎ দাড়ি লম্বা করা ও গোঁফ ছোট করা শেয়ারুল ইসলাম বা দ্বীন ইসলামের মৌলিক আমলের অন্তর্ভুক্ত।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرٌ مِّنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ (رواه ابو دود)
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “দশটি জিনিস মানুষের জন্যে ফিতরাত অর্থাৎ সৎ স্বভাব অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত মুবারক ও দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা ও দাড়ি লম্বা করা অন্যতম। (আবূ দাউদ শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আবূ দাউদ শরীফ উনার বিখ্যাত শরাহ বজলূল মাজহুদ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, (فطرة) ফিতরাত অর্থ- হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত বা তরীক্বা। অধিকাংশ হযরত উলামায়ে কিরাম ফিতরাতের এই অর্থই বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ ফিতরাতের অর্থ তরীক্বায়ে ইবরাহীমী বলে উল্লেখ করেন। কেউ আবার ফিতরাতের অর্থ করেছেন সৎ স্বভাব। অর্থাৎ সৎ স্বভাব বা যে বিষয়কে পছন্দ করা হয় এবং গ্রহণ করা হয়, উহাই ফিতরাত। তবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ফিতরাত শব্দ দ্বারা দ্বীনকেই বুঝানো হয়েছে। যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার সেই দ্বীন, যা তিনি মানুষের জন্যে পছন্দ করেছেন, তা অনুসরণ করো। মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির কোন পরিবর্তন (করতে) নাই। এটাই সত্য-সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বুঝে না। (পবিত্র সূরা রূম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩০)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ফিতরাত বলতে দ্বীনকেই বুঝিয়েছেন। অতএব, পুরুষের দাড়ি লম্বা করা ও গোঁফ ছোট করা ফিতরাত বা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানের লক্ষণ বা আলামত। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি লম্বা করা ও গোঁফ ছোট করা শুধু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত বা তরীক্বা নয় বরং সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত বা তরীক্বা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)