রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি
দান বাক্স ও হাদিয়া বাক্সের প্রচলন ও সম্প্রসারণ:
, ২৩ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২১ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কোথাও যাচ্ছেন, পথে একটা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলেন অথবা একটা দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার দিয়ে জেগে উঠলেন, তখন আপনার নিকটজন বিশেষ করে মা বাবা হয়তো বলবেন, সদকা করে দিও। এই সদকা হতে পারে খাসি, মুরগী এরকম কিছু। কিন্তু বর্তমান সমাজের ১০ ভাগ মানুষের সদকার প্রতি বিশ্বাস নেই। ৩০ ভাগ মানুষের জানের বিনিময়ে জান সদকা করার বিষয়টি জানা থাকলেও সদকা না দেয়ার অভ্যাসের কারণে বা কাকে, কোথায় দিতে হবে এসব ভাবতে ভাবতে সদকা করতে ভুলে যান। আর ৬০ ভাগ মানুষ সদকা আদায় করলেও ৬০ ভাগের মাত্র ১০ ভাগ সঠিক জায়গায় সদকা পৌঁছাতে পারেন।
যারা সদকা করা বিশ্বাস করেন না তাদের জন্য আমার আলোচনা নয়।
যারা সদকা দেয়ার গুরুত্ব বিশ্বাস করেন কিন্তু দিতে ভুলে যান তাদের বলছি, একটা খাসী বা মুরগী কিনেই শুধু সদকা করতে হয় তা কিন্তু নয় আপনি সমপরিমাণ টাকাও দান করতে পারেন। আর সদকা দেবার উত্তম জায়গা হচ্ছে লিল্লাহ বোর্ডিং যুক্ত মাদরাসা এতিম খানা। ফলে সদকা দেয়ার বিষয় ভুলে না গিয়ে দ্রুত আদায় করে নেয়া উত্তম।
৬০ ভাগের মাত্র ১০ ভাগ মানুষ সঠিক জায়গায় দিতে পারেন অর্থাৎ যে ৫০ ভাগ মানুষ ভুল জায়গা দিয়ে থাকেন তার অর্থ হচ্ছে যে সব মাদরাসায় লিল্লাহ বোর্ডিং নেই সেখানে বা অন্য কোথাও পৌঁছিয়ে থাকে। আবার যেসব মাদরাসা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত সেখানেও সদকা দিলে তা আদায় হবে না।
দান সদকা করার সহজ পথ:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সফরে যাবার পূর্বে কেউ দান করে বের হলে সফর থেকে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাকে পাহারা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।”
সুতরাং আপনি ঘরে একটি দান বাক্স রাখতে পারেন। ঘর থেকে বের হবার সময় দান করতে চাইলে তখন ফকির, মিসকিন, এতিমখানা কোথায় পাবেন? ফলে আপনি যদি একটি দান বাক্স বাসায় রাখেন তাহলে বের হবার সময়, দুঃস্বপ্ন দেখে দেখে ঘুম থেকে উঠার পর, ভাল কিছু করার আগে নিয়ত করে সেখানে ফেলতে পারেন। দান বাক্সের ফযিলত নিয়ে হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
১) যিনি দানশীল তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু। তাহলে দান বাক্স রাখার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু হবার সুযোগ পাওয়া যায়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلسَّخِىُ حَبِيْبُ الله وَلَوْ كَانَ فَاسِقًا اَلْبَخِيْلُ عَدُوُّ الله وَلَوْ كَانَ عَابِدًا
অর্থ: দানশীল মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু যদিও সে ফাসিক হোক না কেন। আর বখীল মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু যদিও সে আবিদ হোক না কেন।
২) সচ্ছলতাঃ বৃদ্ধি পায় কমপক্ষে ৭০০ গুণ।
যা দান করা হবে মহান আল্লাহ পাক তা ৭ গুণ, ৭০০ গুণ এভাবে বাড়িয়ে প্রতিদান দেবেন। নিয়তের বিশুদ্ধতার উপর সওয়াবের পরিমাণ নির্ভর করে।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتت سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
অর্থ: “যারা মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ হলো সেই শস্যদানার মতো যা থেকে গজায় সাতটি শীষ, প্রত্যেকটি শীষে ১০০টি করে দানা (উৎপন্ন) হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রাচুর্য্যময়, প্রশস্ত, সর্বজ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬১)
৩) দানশীলতা আত্মার একটি গুণ। দান বাক্সে অর্থ রাখার মাধ্যমে সেই গুণ বিকশিত হয়। সাখাওয়াতের মাধ্যমে হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়।
৪) দান বাক্সে টাকা রাখার মাধ্যমে নিজেকে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা সুরক্ষিত হওয়া যায়। দান করে ঘরের বাইরে বের হলে, প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত পথের নিরাপত্তার জন্য ২ জন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম নিযুক্ত থাকেন।
৫) কোন দুঃস্বপ্ন দেখে দান বাক্সে টাকা ফেলে সেই স্বপ্নকে ভাল দিকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পাওয়া যায়। সাধারণভাবে বলা হয় প্রথম স্বপ্নের যে তাবির করা হয় তাই ফলে সে কারণে কেউ কারো কাছে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করলে বলতে হয়, যা দেখেছেন উত্তম দেখেছেন। তাহলে দান করা হলে মহান আল্লাহ পাক চাহেনতো সেই স্বপ্নের ফল ভাল হবে।
৬) জমাকৃত টাকা মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও এতিমখানায় পাঠালে তখন তা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় পাঠানো হল।
৭) দান বাক্সে টাকা ফেললে বালা-মুছিবত দূর হয়।
الصَّدَقَةُ تَرِدْ البَلَاءَ
অর্থ: “দান-ছদকা বালা-মুছীবত দূর করে।” (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
৮) মাল-সম্পদ বৃদ্ধি হয়।
مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ
অর্থ: দানে সম্পদ কমে না। (মিশকাত শরীফ)
৯) রিযিকের সংকীর্ণতা দূর হয়।
وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِـمَّا آتَاهُ اللَّـهُ ۚ لَا يُكَلِّفُ اللَّـهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا ۚ سَيَجْعَلُ اللَّـهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
অর্থ: কেউ যদি মনে করে তার রিযিকে সংকির্ততা রয়েছে তাহলে সে যেন মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সাধ্যের বাইরে কাউকে কষ্ট দেন না। অচীরেই মহান আল্লাহ পাক তাকে স্বচ্চলতা দান করবেন। (পবিত্র সূরা আত তলাক্ব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৭)
১০) যে কোন ভালো কাজ শুরু করার আগে দান বাক্সে টাকা ফেললে বরকত লাভ হয়।
১১) রোগ-বালাই থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
১২) নেক মাকছুদ পুরণ হয়।
১৩) পবিত্রতা অর্জন হয় : হারাম থেকে বেঁচে থাকা, মাল-সম্পদ হারাম থেকে পবিত্র হয়।
خُذْ مِنْ أَمْوَالِـهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِـهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لّـَهُمْ ۗ وَاللهُ سَـمِيعٌ عَلِيمٌ
পবিত্র সূরা তওবা শরীফ-পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩
১৪) হযরত ফেরাশতা আলাইহিমুস সালাম প্রতিদানের জন্য দোয়া করেন (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
দান করার ক্ষেত্রে আপনার করণীয়:
১) একটি দান বাক্স নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করতে হবে।
২) সেখানে দান করার নিয়তে টাকা ফেলার অভ্যাস গড়তে হবে।
৩) প্রতি মাসে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও এতিমখানায় টাকা পাঠানোর বা দান বাক্স পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) অন্যদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে একটি তালিকা করে উনাদের দান বাক্সের ফযিলত সম্পর্কে বলার অভ্যাস করতে হবে।
৫) মাস শেষে আপনার দান বাক্স সহ অন্য যাদের দান বাক্স দেয়া হয়েছে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশেষভাবে স্মরণীয়ঃ আজকে কোয়ান্টাম সহ বিভিন্ন বাতিল আক্বিদার লোক মানুষের বাসায়, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাদের মাটির ব্যাঙ্ক দিয়ে যাচ্ছে এতে নীচের ক্ষতিগুলো হচ্ছে
১) মানুষের টাকা বাতিলদের কাছে যাচ্ছে যা দ্বারা ইসলাম উনার ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
২) যারা হকদ্বার উনারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
৩) আপনি দান বাক্স না রাখার কারণে আপনার ভাই বা বন্ধু বা ব্যবসায়িক পার্টনার তিনি অন্য বাতিলদের বাক্স এনে রেখে দিচ্ছে। ফলে এই দান বাক্সের গুরুত্ব আমাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং এই বিষয়ে কাজ করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)