মুসা বিন শাকির:
দস্যুতা ছেড়ে যিনি হয়েছিলেন জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী
, ২২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আপনাদের মতামত
বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানীদের একজন মুসা বিন শাকির। যেসকল মুসলিম বিজ্ঞানী জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যামিতিতে মৌলিক অবদান রেখেছেন তিনি উনাদের মধ্যে একজন। কিন্তু উনার প্রথম জীবন একদম সাদাসিধে ছিলোনা। জীবনের প্রথম ভাগে তিনি কখনো বিজ্ঞানচর্চাও করেননি; বরং প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন দস্যু।
একবার তিনি আব্বাসীয় শাসক আল মামুনের বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং উনার মৃত্যুদন্ডের আদেশ হয়। এ আদেশ শুনে তিনি বলেন, এ আদেশ ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। কারণ আমি দস্যুতা করতে গিয়ে বা মানুষ খুন করার অপরাধে মুসলিম বাহিনীর হাতে ধরা পড়িনি; বরং প্রতিপক্ষ হিসেবে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বন্দি হয়েছি। অতএব, আমার প্রাপ্য যুদ্ধবন্দির মর্যাদা।’ উনার এ কথা ভালো লাগে শাসক আল মামুনের। তখন আল মামুন উনাকে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের সেবায় নিযুক্ত করেন।
এই গবেষণাগারে সে সময় গবেষণা করতেন বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী মুসা আল খাওয়ারেজমি। এই বিজ্ঞানীর সাহচর্যে এসে বদলে গেলেন মুসা বিন শাকির। আত্মনিয়োগ করলেন বিজ্ঞানচর্চায়। যে ধারা উনার সন্তানদেরও প্রভাবিত করে। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী বনি মুসার ভ্রাতৃত্রয় ছিলো দস্যু থেকে বিজ্ঞানী হওয়া মুসা বিন শাকিরের সন্তান।
মুসা বিন শাকিরের ইন্তেকালের পর উনার তিন সন্তান আবু জাফর মুহম্মদ, আবুল কাশিম আহমদ এবং আল হাসান ইবনে মুসা বিন শাকিরের লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করেন স্বয়ং শাসক আল মামুন। তিনি এদের লেখাপড়ার দায়-দায়িত্ব দেন তাঁর বিজ্ঞানসভার প্রভাবশালী সদস্য ইয়াহহিয়া বিন আবি মনসুরের ওপর।
উনাদের মধ্যে আবু জাফর মুহম্মদ ছিলেন সবচেয়ে বেশি প্রতিভাধর। বিজ্ঞানের সব শাখায়ই তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। আবুল কাসিম আহমদ ছিলেন বৈজ্ঞানিক যন্ত্র তৈরিতে কুশলী ও যন্ত্র ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। আর সর্বকনিষ্ঠজন আল হাসান ছিলেন দক্ষ গণিতজ্ঞ। উনারা তিন ভাই আল-বিরুনীর মতোই বৈজ্ঞানিক ও পর্যটক ছিলেন। জ্ঞান আহরণে উনারা নিজেদের সব ধন-সম্পদ নিয়োজিত করেন।
উনারা লোক মারফত প্রচুর অর্থব্যয়ে বহু কিতাব সংগ্রহ করেন। দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখার কেন্দ্রস্থল গ্রিনউইচ তৎকালীন পৃথিবীতে অজ্ঞাত ছিল। বনি মুসা ভ্রাতৃত্রয় অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমার কল্পনা করে লোহিত সাগরের তীরে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর আকার ও আয়তন সঠিকভাবে নির্ণয় করেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে পৃথিবীর ঋতু পরিবর্তন, দিন-রাত্রির পরিবর্তন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন বনি মুসা ভ্রাতৃত্রয়। আজও বলবৎ আছে উনাদের ওই পর্যবেক্ষণের ফল। উনারা জ্যামিতি, পরিমিতি কণিক, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। উনাদের লেখা গোলক ও সমতল ভূমির পরিমাপ সম্পর্কীয় গ্রন্থটি লাতিন ভাষায় অনূদিত হয়।
বনি মুসা ভ্রাতৃত্রয় ব্যাবহারিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে চরম সাফল্য লাভ করেন। উনাদের আয়ত্তাধীন সালতানাতের কেন্দ্রীয় গবেষণাগার থাকা সত্ত্বেও নিজেদের কাজের সুবিধার্থে উনারা টাইগ্রিস নদীর তীরে ‘বাবেল তাকে’ নামক জায়গায় আলাদা গবেষণাগার নির্মাণ করেছিলেন। এই ভ্রাতৃত্রয়ের প্রথমজন আবু জাফর মুহম্মদ ৮৭২ সালে ইন্তেকাল করেন। উনার ইন্তেকালের কিছুদিন পর অন্য দুই ভাইও ইন্তেকাল করেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
এ সকল মুখোশধারীদের আসল পরিচয় অনেকেরই অজানা!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১০ ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুব সমাজকে খেলাধুলার প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়া একটি ভয়াবহ চক্রান্ত
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তাহলেই রাজধানী হবে সমস্যামুক্ত
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুলুমতন্ত্র থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করুন
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতিদের যেভাবে উস্কানি দিচ্ছে এনজিওগুলো
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হিন্দুদের পূর্বপুরুষরাও একসময় মুসলমান ছিলো
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাবার খাবেন কোথায়?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের রক্তাক্ত ইতিহাস, যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জায়নবাদী ইহুদী পরিকল্পনার গোপন দস্তাবেজ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মীরা কখনোই চায়নি, এখনও চায় না মুসলমানদের উন্নতি
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ স্টাইলের শাসকগোষ্ঠী দিয়ে উন্নয়ন নয়, লুটপাটই হবে
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)