তা’বীয ও ঝাড় ফুঁক সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা (৪)
, ১৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১১ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ছাহিবুস সির সাইয়্যিদুনা হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একদিন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যান। তিনি সেই অসুস্থ ব্যক্তির বাহুতে একটি তাগা বা মন্ত্রপড়া সুঁতা দেখতে পান। সাইয়্যিদুনা হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এটা কি? সেই অসুস্থ ব্যক্তি বললো, এটা তাগা যাতে মন্ত্র পড়া হয়েছে। সাইয়্যিদুনা হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তা ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন-
لَوْ مُتَّ وَهُوَ عَلَيْكَ مَا صَلَّيْتُ عَلَيْكَ
অর্থ: যদি আপনি এটা পরিহিত অবস্থায় ইন্তিকাল করতেন তাহলে আমি আপনার জানাযার নামায পড়তাম না। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা-৩২৯২৮)দ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উকাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ঈসা ইবনে আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উকাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একবার অসুস্থ হন। আমরা উনাকে দেখতে গেলাম। তখন উপস্থিত কেউ উনাকে বললেন-
لَوْ تَعَلَّقْتَ شَيْئًا
অর্থ: যদি আপনি কোন কিছু (তামীমাহ) ঝুলাতেন (তাহলে হয় তো সুস্থ হয়ে যেতেন) জাওয়াবে তিনি বলেন-
أَتَعَلَّقُ شَيْئًا وَقَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ.
অর্থ: আমি (গলায় বা হাতে) কিছু ঝুলাবো? অথচ আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে গলায় কিংবা হাতে কিছু ঝুলাবে তাকে ঝুলানো জিনিসের উপর ছেড়ে দেয়া হবে। অর্থাৎ সে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জিম্মাদারী থেকে মুক্ত হবে। (তিরমিযী শরীফ ২০৭২)
উল্লেখ্য যে, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উকাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক ধরনের রোগ হয়েছিল। আরব দেশে যাকে حُمْرَةٌ (হুমরাহ) বলা হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে লালচে হয়ে ব্যথা করে এবং তীব্র জ্বর আসে।
এ রোগের মুক্তির জন্য বিশেষ এক কাষ্ঠ গলায় বা হাতে ঝুলানো হতো। এ রীতি জাহিলী যুগ হতে চলে আসছে। তারা ধারণা করতো এসব কাষ্ঠখ-ই রোগ মুক্তি দিবে। এসব জড়বস্তুর রোগ সরানোর কোন ক্ষমতা নেই। রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তিদাতা মহান আল্লাহ পাক তিনি। জাহিলী যুগে এই আক্বীদা-বিশ্বাস থেকে অনেকে সরে গিয়েছিল। তারা কাষ্ঠখ-কেই রোগ মুক্তিদাতা মনে করতো। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যারা এসব জড়বস্তু ঝুলাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে নিজ দায়িত্ব থেকে বের করে এসব বস্তুর দায়িত্বে ছেড়ে দিবেন। আর এসবের যে কোন ক্ষমতা নেই তা সবারই জানার কথা। (মুসনাদে ইবনে আবী শায়বা)
সাইয়্যিদুনা হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে যে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় তা তামীমাহ্র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা’বীযের ক্ষেত্রে নয়। হযরত আবুল খায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন-
مَوْضِعُ التَّمِيمَةِ مِنَ الْإِنْسَاْنِ وَالطِّفْلِ شِرْكٌ.
অর্থ: বয়স্ক লোক ও শিশুদের গলায় কিংবা হাতে তামীমাহ ঝুলানো শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা-২৩৯৩১)
সাইয়্যিদুনা হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَلَا أَتَمَّ اللهُ لَهُ وَمَنْ تَعَلَّقَ وَدَعَةً فَلَا أَوْدَعَ اللهُ لَهُ
অর্থ: যে ব্যক্তি তামীমাহ ঝুলাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে পূর্ণতা দান করবেন না। আর যে ব্যক্তি কড়ি ঝুলাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সুস্থতা দান করবেন না। (আহমদ, হাকিম)
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত আবূ বশীর আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন এক সফরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে ছিলেন। সে সফরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জনৈক ব্যক্তিকে এ নির্দেশ মুবারক দিয়ে পাঠালেন যে, “কোন উটের গলায় ধনুকের ছিলা অথবা বেল্ট রাখবেন না। সব কেটে ফেলবেন।
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ ওয়াহ্হাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَارْتَبِطُوْا الْـخَيْلَ وَامْسَحُوا بِنَوَاصِيْهَا وَأَكْفَالِهَا وَقَلِّدُوْهَا وَلاَ تُقَلِّدُوْهَا الأَوْتَارَ
অর্থ: আপনারা ঘোড়া বেঁধে রাখুন। তার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দিন এবং লাগাম পরিয়ে দিন। তবে ধনুকের ছিলা ঝুলিয়ে দিবেন না। (নাসায়ী শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, জাহিলী যুগের কুফর ও শিরক সম্বলিত বাক্য যাকে সম্মানিত শরীয়তের পরিভাষায় মন্ত্র বলা হয়। তা দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা জায়িয নেই। হারাম বা নিষিদ্ধ। আর যেগুলো গলায় কিংবা হাতে ঝুলানো যাকে সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় তামীমাহ বলা হত, তাও জায়িয নেই। হারাম বা নিষিদ্ধ।
এছাড়া জাহিলী যুগে শিশু জন্মগ্রহণ করলে তার গলায় ছোট পাথর ছিদ্র করে পরিয়ে দেয়া হতো। কখনো শঙ্খ, সীসা, চামড়া, মন্ত্র পড়া সুতা, বাঘের পশম, গাছের ডাল ইত্যাদি গলায় কিংবা হাতে পরিয়ে দেয়া হতো। সম্মানিত শরীয়তের পরিভাষায় এগুলোকেও তামীমাহ বলা হয়। কাজেই, ‘তামীমাহ’ হারাম, নাজায়িয ও কুফরী শিরকির অন্তর্ভুক্ত।
আর ঝাড়-ফুঁক ও তা’বীয ব্যবহার করা জায়িয এবং খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ ইহা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশিত ও অনুসৃত হক্ব চিকিৎসা পদ্ধতি।
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)