তা’বীয ও ঝাড় ফুঁক সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা (২)
, ১৭ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ১০ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোগ নিরাময় বা সুস্থতার জন্য যে সকল চিকিৎসা পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন তন্মধ্যে ঝাড়, ফুঁক ও তা’বীয অন্যতম।
ঝাড়, ফুঁক করা, তা’বীয দেয়া ও ব্যবহার করা সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই দোয়া-কালাম মুবারক পড়ে ঝাড়, ফুঁক করেছেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
তবে বাতিল বা পরিত্যাজ্য ঝাড়-ফুঁক ও তামীমাহ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনার ইত্তিবা বা অনুসরণে দোয়া-কালাম পড়ে ঝাড়-ফুঁক করেছেন। তা’বীয দিয়েছেন। হযরত তাবিয়ীনে কিরাম, তাবি-তাবিয়ীনে ইযাম, ইমাম- মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সবাই সে পন্থা-পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। উনারা ঝাড়-ফুঁক করেছেন, তা’বীয দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতে তথা জাহিলী যুগে ঝাড়-ফুঁক ও তামীমাহর প্রচলন ছিল। সেগুলো অধিকাংশগুলোতে কুফরী, শিরকীপূর্ণ বাক্য মিশ্রিত ছিল। তারা কুফরীমূলক বাক্য দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করতো। শিরকপূর্ণ তথা তামীমাহ ব্যবহার করতো। তারা সন্তানদের গলায়, হাতে ও কোমরে ছোট-পাথর কিংবা পুতি, শঙ্খ ছিদ্র করে গলায় পরিয়ে দিত। কখনো সীসা বা কাঁচের টুকরা গলায় ঝুলিয়ে দিত। পশুরু গলায় ধনুকে ছিলা অথবা বেল্ট ইত্যাদি বেঁধে দিত। যাকে বলা হয় তামীমাহ বা তামায়িম। আবার কখনো বিভিন্ন রংয়ের সুতা, কখনো একই রংয়ের কয়েকগাছি সুতা, যাতে মন্ত্র পড়ে গিট দিত। অতঃপর তা শিশুর গলায় কিংবা হাতে বেঁধে দিত। যাকে তাগা বলা হয়। তারা কখনো হাতে বালা ও পাথর পরিধান করতো।
আর বিশ্বাস করতো যে, এগুলোই তাদেরকে সবধরণের বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত, রোগ-শোক থেকে মুক্ত রাখবে। নাউযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের এ আক্বীদা বা বিশ্বাসে মর্মমূলে আঘাত করেছেন। এসবকে শিরক ও কুফর বলে আখ্যায়িত করেছেন। এগুলোকে তামীমাহরূপে গলায় কিংবা হাতে অথবা কোমরে পরিধান করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ
অর্থ: নিশ্চয়ই (বাতিল) ঝাড়-ফুঁক করা, তামীমাহ বা রক্ষাকবচ ব্যবহার করা, আহাল (স্বামীকে) ঝাড়-ফুঁকের দ্বারা বশীভূত করা শিরক এর অন্তর্ভুক্ত। (আবূ দাউদ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّهُ جَاءَ فِي رَكْبِ عَشَرَةٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ بَيْعَةِ رَجُلٍ مِنْهُمْ ، فَقَالُوا : مَا شَأْنُ هٰذَا الرَّجُلِ لاَ تُبَايِعُهُ ؟ فَقَالَ : إِنَّ فِي عَضُدِهٖ تَمِيمَةً فَقَطَعَ الرَّجُلُ التَّمِيمَةَ ، فَبَايَعَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ : مَنْ عَلَّقَ فَقَدْ أَشْرَكَ
অর্থ: হযরত উকবা ইবনে আমির জুহানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে দশ জন ব্যক্তি আসলেন। তিনি তাদের নয় জনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন। একজনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন না। উপস্থিত লোকজন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কি কারণে এ ব্যক্তির বাইয়াত গ্রহণ করলেন না?
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উনার বাহুতে তামীমাহ বা রক্ষাকবচ রয়েছে। একথা শুনে লোকটি তামীমাহ বা রক্ষাকবচটি ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বাইয়াত গ্রহন করলেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- ‘যে ব্যক্তি তামীমাহ বা রক্ষাকবচ ব্যবহার করলো সে ব্যক্তি শিরক করলো। (মুস্তাদরাকে হাকীম)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪২)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে সমস্ত উলামায়ে সূ’ ও তাদের শাগরেদ নামধারী মুসলমানরা মুশরিকদের মন্দির ও পূজায় পাহারা দিয়েছে তাদের ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা (৩)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রত্যেক মুসলমান পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা ফরয
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যে সমস্ত উলামায়ে সূ’ ও তাদের শাগরেদ নামধারী মুসলমানরা মুশরিকদের মন্দির ও পূজায় পাহারা দিয়েছে তাদের ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা (২)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)