তাইয়াম্মুম করার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল
, ০৭ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায়, পবিত্রতার নিয়তে পবিত্র মাটির ওপর হাত মেরে চেহারা ও কনুই পর্যন্ত হাত মাসেহ করাকে তাইয়াম্মুম বলে।
ওযূ বা গোসল করার প্রয়োজন হলে পানি পাওয়া না গেলে অথবা পানি আছে কিন্তু উহা ব্যবহার করলে কঠিন রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে অথবা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে অথবা কুয়া থেকে পানি উঠানোর প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র না থাকলে অথবা শত্রুর ভয় থাকলে অথবা পুকুর নদী এক মাইল দূরবর্তীতে অবস্থিত ইত্যাদি কারণে ওযূ ও গোসলের পরিবর্তে তাইয়াম্মুম করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ.
অর্থ: অতঃপর যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তাইয়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো। (পবিত্র সুরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
তাইয়াম্মুম সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, ‘পূর্বের হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের চাইতে এই আখিরী উম্মতকে তিনটি বিষয়ে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাতার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাতারের মতো বানানো হয়েছে, সারা ভূখ-কে আমাদের জন্য সম্মানিত মসজিদ বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পানি না পাওয়া অবস্থায় মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানানো হয়েছে।’ (বুখারী শরীফ : ১/২০৯)
তাইয়াম্মুম উনার ফরয তিনটি:
১. তাইয়াম্মুমের নিয়ত করা-
نَوَيْتُ اَنْ اَتَيَمَّمَ لِرَفْعِ الْحَدَثِ وَاِسْتِبَاحَةً للِّصَّلٰوةِ وَتَقَرُّبًا اِلَى اللّٰهِ تَعَالٰى. بِسْمِ اللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ عَلٰى دِيْنِ الْاِسْلَامِ
অর্থ : “আমি নাপাকী দূর করার জন্য, নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক লাভের নিমিত্তে তাইয়াম্মুম করার নিয়ত করলাম। মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্বরণ করে শুরু করছি এবং আমি যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর আছি, এজন্য মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত প্রশংসা মুবারক।”
২. অতঃপর উভয় হাত মাটিতে মেরে সমস্ত মুখম-ল (ওযূতে যে পর্যন্ত ধৌত করা ফরয সেই পর্যন্ত) একবার মাসেহ করা।
৩. অতঃপর পুনরায় মাটিতে হাত মেরে, উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত একবার মাসেহ করা।
তাইয়াম্মুম উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
১. বিসমিল্লাহ বলা।
২. তরতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখা অর্থাৎ প্রথমে মুখম-ল তৎপরে হাতদ্বয় মাসেহ করা এবং হাতের পিঠের দিক প্রথম মাসেহ করা।
৩. হাতের তালু মাটিতে মেরে প্রথম সম্মুখে, পরে পিছনে ঘষা।
৪. পবিত্র মাটিতে হাত মারা।
৫. মাটিতে হাত রাখার সময় অঙ্গুলিগুলো ফাঁক ফাঁক করে রাখা।
৬. দাড়ি ও অঙ্গুলিসমূহ খিলাল করা এবং হাতে আংটি কিংবা নাকে বালী থাকলে, তা ঘুরিয়ে মাসেহ করা।
৭. মুখম-ল মাসেহ করার পরে অবিলম্বে মাটিতে হাত মেরে হাতদ্বয় মাসেহ করা।
৮. মাটিতে হাত মারার পরে ঝেড়ে ফেলা।
৯. ডান দিক থেকে আরম্ভ করা।
১০. ওযূতে যেমন এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক, সেরূপ তাইয়াম্মুম উনার ক্ষেত্রেও পরপর মাসেহ করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক।
তাইয়াম্মুম করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক:
তাইয়াম্মুম উনার নিয়ত ফরয অর্থাৎ প্রথমে নিয়ত করবে যে, আমি নাপাকী হতে পবিত্র হওয়ার জন্য অথবা নামায আদায় করার জন্য তাইয়াম্মুম করছি। নিয়ত করার পর অঙ্গুলিসহ উভয় হাতের তালু পবিত্র মাটির উপর মারতে হবে অতঃপর হাত ঝেড়ে সমস্ত মুখম-ল একবার মাসেহ করা এবং মুখম-লের যে অংশে ধৌত করা ফরয সেই অংশে হাত পৌঁছিয়ে মাসেহ করা। অতঃপর দ্বিতীয়বার পূর্বের ন্যায় মাটিতে হাত মেরে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও শাহাদাত অঙ্গুলি ছাড়া অন্যান্য অঙ্গুলি ও তালুর কিছু অংশ দ্বারা প্রথমে ডান হাতের পিঠের অংশ কনুইসহ মাসেহ করা। অতঃপর বৃদ্ধা ও শাহাদাত অঙ্গুলি ও ইহার সংলগ্ন হাতের তালুর অংশ দিয়ে হাতের সামনের ভাগ মাসেহ করা। অনুরূপভাবে একই পদ্ধতিতে ডান হাত দ্বারা বাম হাত মাসেহ করা এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা। ওযূ ও গোসল উনাদের তাইয়াম্মুমে কোনো পার্থক্য নেই। আর যতখানি পবিত্রতা ওযূ ও গোসল দ্বারা হয়ে থাকে ততখানি পবিত্রতা তাইয়াম্মুম দ্বারাও হয়ে থাকে। যদি দশ বা বিশ বছরও পানি না পাওয়া যায় তাহলে তাইয়াম্মুম উনার দ্বারাই পবিত্রতা লাভ করতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষ দ্রষ্টব্য: তাইয়াম্মুম করার নিয়ম হাতে কলমে কোনো অভিজ্ঞ আলিমের নিকট থেকে শিখে নেয়া উচিত।
তাইয়াম্মুম ভঙ্গের কারণসমূহ:
যেসমস্ত কারণে ওযূ ভঙ্গ হয় সেসব কারণে তাইয়াম্মুমও ভঙ্গ হয়। তবে সেসব কারণের সাথে সাথে যদি তাইয়াম্মুমকারী ওযূ করার উপযুক্ত হয়। অর্থাৎ ওযূ করার শরয়ী বাধা দূর হয়ে যায় (যেমন অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়া অথবা পানির সন্ধান লাভ করা ইত্যাদি) তাহলে তাইয়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঠান্ডা ও মিঠা পানি পান করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার যব ও যবের রুটি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)