বিজ্ঞানীদের ভুল ধারণা :
ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকা দ্বীপগুলো আকারে আরও বড় হয়েছে
, ২১ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৩০ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ২৮ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১৩ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পাঁচ মিশালী
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গবেষকেরা কিছু চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা অনেক দ্বীপ এখনো ভালোই আছে। এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার পরও কোনো কোনো দ্বীপের আরও বিস্তার ঘটতে দেখা গেছে।
কয়েক দশক আগে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার প্রতি মনোযোগী হয় বিশ্ব। তখন আশঙ্কা জানানো হয়, পানিবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের প্রথম শিকার হবে প্রবালপ্রাচীরে ঘেরা দ্বীপগুলো। কারণ, পানিবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উষ্ণতা বেড়ে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে। আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে এ দ্বীপগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছিলো বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমানিত করে দ্বীপগুলো আকারে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখন বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার কারণে সমুদ্রের পানিও বাড়ছে। এমন অবস্থায় দ্বীপগুলোর পরিণতি জানতে কয়েক বছর আগে গবেষকেরা উপর থেকে তোলা ছবি খুঁটিয়ে দেখে চমকপ্রদ চিত্র পায়। শুরুতে তারা ডজন দুয়েক দ্বীপের ছবি দেখে। এরপর কয়েকশ দ্বীপ তাদের গবেষণার আওতায় আসে। আর এখন তা বাড়তে বাড়তে এক হাজারের কাছাকাছি। গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েক দশকে দ্বীপের কিনারাগুলো এঁকেবেঁকে ভেঙেছে, কোথাও হয়তো ক্ষয় হচ্ছে, আবার কোথাও নতুনভাবে গড়ে উঠছে। তবে মোটের ওপর দ্বীপের এলাকা সংকুচিত হয়নি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমুদ্রের পানি বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপগুলো বড়ও হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এর কারণ কিছুটা মাত্র আন্দাজ করতে পেরেছে; সবটা নয়। এমন অবস্থায় বিজ্ঞানীদের একটি দল সম্প্রতি মালদ্বীপে যায়। সেখানে কয়েক সপ্তাহ কাজ করেছে বিজ্ঞানীরা। গবেষণার জন্য সেখানে যন্ত্রপাতি, সেন্সর ও ক্যামেরা স্থাপন করেছিলো তারা।
বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছে, কীভাবে সমুদ্রের ঢেউ ও সাদা বালু মিলেমিশে উপকূলরেখায় আশ্চর্যজনক সব জিনিস তৈরি করে, তীরে ভাঙাগড়া চলতে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানকার কিছু দ্বীপে বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার কিছু কিছু দ্বীপ বসবাসের উপযোগী। বিজ্ঞানীরা মনে করছে, প্রবাল দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর সরকারকেই ঠিক করতে হবে যে তারা এখন কোন জায়গাগুলো সংরক্ষণ করবে আর কোন জায়গাগুলোকে ছেড়ে দেবে। যে জায়গাগুলো সুরক্ষিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেগুলো নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। যেমন সেখানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, স্কুল নির্মাণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাছে যে সীমিত সম্পদটুকু আছে, তা দিয়েই তাদের উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।
প্রবালদ্বীপের আকার :
টেকটনিক প্লেটের অবস্থান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দ্বীপ অঞ্চলের উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরিগুলো একসময় ঠান্ডা ও শান্ত হয়ে পানির নিচে ডুবে যায়। সেখানে প্রবাল বাসা বাঁধতে থাকে এবং উঁচু হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়গিরিগুলো মৃত আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয় এবং সেখানে আংটি আকৃতির প্রবালপ্রাচীর গড়ে ওঠে। প্রতিটি প্রবালপ্রাচীর একটি উপহ্রদকে ঘিরে থাকে। প্রবালপ্রাচীরগুলো যখন যথেষ্ট উঁচুতে ওঠে, তখন বাতাস ও ঢেউয়ের তোড়ে বালু ও নুড়ি মিলে ক্ষুদ্র দ্বীপ গড়ে ওঠে। আংটি আকৃতির প্রবালপ্রাচীরবেষ্টিত এ ধরনের দ্বীপগুলোই অ্যাটল বা প্রবালপ্রাচীরঘেরা দ্বীপ হিসেবে পরিচিত।
গড়ে ওঠার পর্যায় অনুসারে এদের চেহারা নানা রকম হতে পারে। ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়াতে কিছু ছোট আংটির মতো আবার কিছু লম্বাকৃতির ঝোলানো গলার মালার মতো। মালদ্বীপের প্রবালপ্রাচীর ঘেরা এলাকাগুলো দ্বীপগুলো বিশাল, এবড়োথেবড়ো ও বাঁকাচোরা হয়ে থাকে। মাইক্রোনেশিয়াতে এখনো কিছু দ্বীপের মাথার ওপর খাঁড়া হয়ে আছে আগ্নেয়গিরির অবশেষ। কোনো কোনো প্রবালপ্রাচীরের ঘেরের মধ্যে ক্ষুদ্রতর ঘের থাকে। একেবারে ছোট্ট ছোট্ট ঘেরও থাকতে পারে, যেন আংটির ভেতর আংটি।
১৮৩৬ সালে ভারত মহাসাগরের প্রবালপ্রাচীর পরিবেষ্টিত একটি দ্বীপ পরিদর্শনের পর গবেষকেরা লিখেছিলো, ‘এগুলো অবশ্যই বিশ্বের চমকপ্রদ নিদর্শনের প্রথম সারিতে থাকবে।’
পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা বলতে থাকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের ওঠানামার কারণে প্রবালপ্রাচীরঘেরা এই দ্বীপগুলো যুগে যুগে কয়েকবার ডুবেছে আর জেগে উঠেছে।
গবেষণায় যা পাওয়া গেল?
প্রবালপ্রাচীরঘেরা দ্বীপগুলোর কী দশা হচ্ছে, তা জানতে গবেষকরা উদ্যোগী হয়। তারা উপর থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। এর অংশ হিসেবে গবেষকরা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে উড়োজাহাজ থেকে ধারণ করা প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৭টি দ্বীপের ছবি সংগ্রহ করে। এরপর তারা ছবিগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি কৃত্রিম উপগ্রহে ধারণ করা ছবিগুলোর তুলনা করে।
গবেষকেরা বলছে, প্রতি দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক ইঞ্চির মতো করে বেড়েছে। তবে ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপগুলোর তীরে যথেষ্ট পরিমাণে পলি জমা হতে থাকায় এগুলোর বেশির ভাগের আকার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। শুধু হয়তো প্রবালপ্রাচীরে সেগুলোর অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে, এগুলোর আকৃতিতে ভিন্নতা এসেছে।
মালদ্বীপে হুভাধু নামে কদু আকৃতির প্রবালপ্রাচীর বেষ্টনীতে ২৪১টি দ্বীপ রয়েছে।
গবেষকেরা সেখানের ১৮৪টি দ্বীপে উড়োজাহাজ ও কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ধারণ করা ছবিগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে, কীভাবে সাম্প্রতিক দশকগুলোয় এগুলোর বদল ঘটেছে।
এতে দেখা গেছে, দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ৪২ শতাংশের ক্ষয় হয়েছে। তবে প্রায় একই অনুপাতে ৩৯ শতাংশ এলাকার অবস্থা স্থিতিশীল আছে, যদিও তাদের আকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। আর ২০ শতাংশ দ্বীপ বড় হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞানীরা পূর্বে ‘সরাসরি দ্বীপগুলো অস্তিত্ব টিকবে না’ বললেও এখন বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের পূর্বে বক্তব্যে পরিবর্তন এনে বলেছে, যা কিছু ঘটতে দেখা যাচ্ছে, তাতে খুব সহজেই বলে দেওয়া যাচ্ছে না যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে দ্বীপগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কিনা। এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বিষয়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মঙ্গলে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগের’ সন্ধান!
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির গর্ভে বিজ্ঞানীদের নজর
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পরোক্ষ ধূমপান স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যে সমস্ত মারাত্মক ক্ষতি করে?
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের বসবাস বা দ্বীন ইসলাম প্রচার নিষিদ্ধ করে রেখেছে যে সমস্ত বিধর্মী রাষ্ট্র
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২০২২ সালে সৌরজগতের বাইরে মিলেছে ২০০ গ্রহের সন্ধান
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম দেশ সিয়েরা লিওনে যেভাবে দ্বীন ইসলাম ও দ্বীনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আবাসন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপিয়ানরা
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হেঁটে যে রাস্তা আজও শেষ করতে পারেনি কেউ
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাওসে মুসলমানদের জীবনধারা
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাতারের মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় শত শত চিহ্ন
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (২)
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (১)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)