জিডি বা জেনারেল ডায়েরি সম্পর্কে জানুন
, ১০ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০২ হাদি ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০২ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
জেনারেল ডায়েরি তথা জিডি। এই শব্দটি সমাজে ব্যাপক পরিচিত। অধিকাংশ মানুষ এই শব্দটি শুনুছেন এবং অনেকে এর প্রয়োগ সম্পর্কে অবগত আছেন। যারা এই শব্দটি শুধু শুনেছেন কিন্তু কখনও প্রয়োজন হয় নাই কিংবা জিডি বিষয়ে ভুল এবং ভ্রান্ত ধারনা আছে তাদের জন্য আজকের এই লিখা।
জিডি সাধারণত থানায় করতে হয়। প্রত্যেক নাগরিক জিডি করতে পারবেন।
জিডি কি:
জিডি এর পূর্ণাঙ্গরূপ হচ্ছে জেনারেল ডায়েরি যাকে বাংলায় সাধারন ডায়েরি বলে। সাধারনত পুলিশের নিকট কিছু সহায়তা পেতে হলে থানার ডায়েরিতে সহায়তার বিষয়বস্ত- লিপিবদ্ধ করা কে জিডি বলে। সহজ ভাবে বলতে গেলে থানা পুলিশের নিকট কোন বিষয়ে আইনি সহায়তা পেতে পুলিশের নিকট দরখাস্তেÍর মাধ্যমে তা চাওয়া হয় থানার পুলিশ উক্ত বিষয়টি থানার ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সংরক্ষণ করাকে জিডি বলে। জিডি আইনি পদক্ষেপের প্রথম ধাপ। যে কোন বিষয়ে ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপ নিতে হলে জিডি করাটা অত্যন্ত জরুরী।
জিডি কখন করা হয়:
বিভিন্ন ক্ষেত্রে জিডি করা হয়। কোন কিছু হারিয়ে গেলে কিংবা কোন অপরাধ মুলক ঘটনা সংগঠনের সম্ভাবনা থাকলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে জিডি করা হয়। সাধারনত অপরাধ দুই ধরনের একটি হচ্ছে আমলযোগ্য অপরাধ এবং অপরটি হচ্ছে আমল অযোগ্য অপরাধ। আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জিডি হয় না সেই ক্ষেত্রে থানায় কিংবা আদালতে মামলা করতে হয়। শুধুমাত্র আমল অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জিডি এন্ট্রি হয়। যেমনঃ কোন ব্যক্তি কাহাকে মারধর করে রক্তাক্ত করেছে কিংবা মারাত্মক আহত করেছে সে ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ে জিডি হবে না মামলা হবে। অপর দিকে কোন ব্যক্তি কাহাকে মারধর করার জন্য উদ্যত হয়েছে কিংবা মারধর করার কিংবা ক্ষতি সাধন করার হুমকি দিচ্ছে বা দিয়েছে সেক্ষেত্রে উক্ত ঘটনার কারনে জিডি এন্ট্রি হবে। আবার কাহারো কোন মূল্যাবান কাগজপত্র, মালামাল কিংবা কোন ব্যক্তি হারিয়ে গেলে উক্ত ক্ষেত্রেও জিডি করতে হয়। সাধারনত কেউ হারিয়ে গেলে অতি দ্রুত জিডি করা আবশ্যক। কারণ হারানোর বিষয়ে জিডি করলে পুলিশ সাথে সাথে উক্ত বিষয়টি বেতার বার্তা যোগে দেশের সকল থানায় হারানো ব্যক্তির সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে হারানো ব্যক্তিকে কোথা থেকে উদ্ধার হলে পুলিশ সহজে হারানো ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য পেয়ে যেতে পারে।
জিডি করার নিয়ম:
জিডি করার প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। জিডি করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে থানার আওয়াতায় ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সেই থানায় জিডি করতে হবে। এক থানার ঘটনায় অন্য স্থানে জিডি করা যায় না। থানা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে তাই ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথে অতি দ্রুত আওয়াতাধীন থানায় গিয়ে জিডি এন্ট্রি করতে হবে। কারন পরবর্তীতে দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে হলে জিডি করার সময়টা বেশ গুর”ত্বপূর্ন প্রভাব রাখে। যিনি জিডি করবেন তিনি থানায় গিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে জিডি করার ইচ্ছা প্রকাশ করতে হবে। এরপর তাকে বিস্তরিত মৌখিক বিবরণ দিতে হবে। এ সময় তিনি কোনো প্রশ্ন করলে সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারাটা জরুরী। মৌখিক পর্বের পর দায়িত্বরত কর্মকর্তা আপনাকে জিডি করার কাগজ এগিয়ে দেবেন। এতে আপনাকে মূলত একটি দরখাস্ত লিখতে হবে। লেখার আগে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিতে পারেন। উল্লেখ্য যে অনেক সময় কর্মকর্তা ব্যস্ত না থাকলে আবেদনটি নিজেই লিখে দেন। আবার আপনি লিখতে অপারাগ হলেও তাকে লিখে দিতে অনুরোধ করতে পারেন। এর জন্য আলাদা কোনো টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
জিডির দরখাস্ত লেখার নিয়ম:
জিডির দরখাস্ত আপনি নিজে লিখতে চাইলে কিভাবে লিখবেন তা ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো-
১) তারিখ লিখে দরখাস্তটি শুরু করতে হবে। দরখাস্তটি লিখবেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অর্থাৎ অফিসার ইনচার্জ বরাবর। তার নিচে থানার নাম ও জেলা/মেট্রোপলিটনের নাম।
২) বিষয় হিসেবে লিখবেন “জিডি করার আবেদন”।
৩) জনাব দ্বারা সম্বোধন করে প্রথমেই আপনার নাম, বয়স, পিতার নাম, থানা ও জেলার নাম লিখবেন। অতঃপর আপনি যেই বিষয়ে জিডি করতে চান তা উল্লেখ করবেন। দরখাস্তের মূল অংশে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ দেবেন।
৪) যদি কোনো কিছু হারিয়ে যাওয়ার জন্য জিডি করতে চান তাহলে অবশ্যই হারানো জিনিসের নিখুঁত বর্ণনা দেবেন। হারানোর স্থান ও সময় নির্ভুল ভাবে উল্লেখ করবেন। এটি খুবই জরুরী। সম্ভব হলে বস্তুটি সম্পর্কে সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি তা শনাক্ত করা যায় এমন কোনো তথ্য দেবেন।
৫) যদি কারো হুমকি পেয়ে থানায় জিডি করতে যান তাহলে অবশ্যই হুমকিদাতার নাম, সম্পূর্ণ বিবরণ ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন। একই সাথে হুমকির তারিখ ও সময় লিখবেন। এ সংক্রান্ত জিডি করতে একজন সাক্ষীর নাম ও ঠিকানাও সাথে লিখতে হবে।
৬) সর্বশেষে ডায়েরি নথিভুক্ত করার এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত করার অনুরোধ করবেন।
৭) দরখাস্তেÍর শেষে ‘বিনীত’ লিখে নিজের নাম লিখবেন। অতঃপর পিতা/স্বামীর নাম, মাতার নাম, বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর লিখবেন।
সঠিক ভাবে দরখাস্তলেখা শেষ হলে তা দায়িত্বরত কর্মকর্তার হাতে দেবেন। সাধারণত এ বিষয়গুলো একজন এসআই অথবা একজন এএসআই দেখে থাকেন। তিনি দরখাস্তটি ভাল ভাবে পড়ে দেখবেন। যদি বড় কোনো ভুল করে থাকেন তাহলে তা আবার লিখতে হতে পারে। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে থানার নথিতে জিডিটি তালিকাভুক্ত হবে। তালিকাভুক্ত করে জিডির কপিতে সিল, স্বাক্ষর, তারিখ ও জিডির নম্বরসহ এক কপি আবেদনকারী অর্থাৎ আপনাকে দেওয়া হবে।
থানায় নথিভুক্ত করা মানে আপনার জিডিটি সফল ভাবে হয়েছে। আপনাকে জিডির যেই কপি বা প্রতিলিপি দেওয়া হবে তা অত্যন্ত যতেœর সাথে সংরক্ষণ করুন। বিশেষ করে জিডির নম্বরটি অত্যন্ত জরুরী। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে আসুন।
মোবাইল হারিয়ে গেলে জিডি করার নমুনা:
বরাবর,
অফিসার ইনচার্জ,
থানা, (জেলা/মেট্রো এর নাম)।
বিষয়ঃ সাধারণ ডায়েরি করার আবেদন প্রসঙ্গে।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী, নামঃ ------------ ,- বয়সঃ --------------- পিতা/স্বামীঃ -----------, ওয়ার্ডঃ -----------, থানাঃ ------------ , জেলাঃ ---------- এই মর্মে জানাচ্ছি যে, আমার নিম্নবর্ণিত জিনিস আজ/গতকাল ----------- তারিখঃ ------------ , সময়ঃ ------------ যায়গা থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি হারিয়ে গেছে।
এটির কোম্পানি ‘ঢরধড়সর’। এর মডেল নং ‘Redmi Note ৪’। মোবাইলটির রঙ কালো। এর IMEI নম্বরঃ ------------ । মোবাইলটিতে আমার আতœীয়-স্ত^জন ও নানা পরিচিত জনের ফোন নম্বর রয়েছে। এ ছাড়াও তাতে আমার জিমেইল অ্যাকাউন্ট লগইন করা রয়েছে। আমার যাবতীয় ব্যাক্তিগত ছবি, নোট এই ফোনটির মধ্যে রয়েছে। ফোনটি যদি কোনো অসৎ ব্যাক্তির হাতে পড়ে এবং তা দিয়ে যদি কোনো অপরাধ সংগঠিত হয় তা নিয়ে আমি বিশেষ চিন্তিত আছি। তাই থানাতে আমার উক্ত ফোনটি হারানোর ব্যাপারে অবহিত করতে এসেছি।
অতএব, মহোদয় বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
বিনীত,
-----------
পিতা/স্বামীঃ ---------------
মাতাঃ--------------
বর্তমান ঠিকানাঃ ----------------
স্থায়ী ঠিকানাঃ ----------------
মোবাইল নম্বরঃ -----------------
অনলাইন জিডি:
বাংলাদেশ পুলিশের সর্বদা আধুনিক হওয়ার প্রচেষ্টার এক নিদর্শন এই অনলাইন জিডি। সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ থানায় স্বশরীরে উপস্থিত না হয়েই অনলাইনে এখন জিডি করা সম্ভব। একেই বলে অনলাইন জিডি। তবে বর্তমানে অনলাইন জিডি শুধু হারানো ও প্রাপ্তি সম্পর্কে করা যায়। এছাড়াও এই সুবিধা এখনো সব থানায় চালু হয় নাই নির্দিষ্ট কিছু থানা অনলাইন জিডি এর আওতায় রয়েছে।
অনলাইনে জিডি করতে হলে প্রথমেই আপনাকে চলে যেতে হবে বাংলাদেশ পুলিশের অনলাইন জিডির সাইটে।
জিডি করা একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ও সহজ একটি বিষয়। কিন্তু জনমনে জিডি নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি থাকার কারণে অনেকেই প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও জিডি করতে চান না। আশা করি এই লেখাটি পড়ার পরে আপনাদের জিডি সম্পর্কে ভীতির অবসান ঘটেছে। মনে রাখবেন, জিডি করার পর হয়তো তা সব সময় ফল প্রদান নাও করতে পারে। কিন্তু যদি কোনো হারানো বস্তু ভাগ্যক্রমে ফিরে পাওয়া যায় কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে হয় তাহলে ঘটনার সাথে সাথে করে রাখা জিডি আপনাকে সুবিধাই দেবে। অপরদিকে জিডি করার কোনো অসুবিধা নেই। থানা পুলিশকে অনেকেই ঝামেলা ও অসুবিধাজনক মনে করে থাকেন। কিন্তু এ মনোভাব পরিহার করা উচিত। আর মনে রাখবেন জিডি করতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। অনেকে টাকা পয়সা লাগে মনে করে খরচের ভয়েও জিডি করেন নাই। জীবনে কখনো জরুরী প্রয়োজন পড়লে থানারই দ্বারস্থ হতে হবে। তাই অভিজ্ঞতা থাকা ভাল। সর্বোপরি জনগণের সম্পৃক্ততাই পারে পুলিশ ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যকার সম্পর্ককে আরো সহজ করে তুলতে।
-এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)