জাওয়াব (২য় অংশ): এখানে কামালিয়াত সম্পর্কে কিছু বর্ণনা দেয়া হলো:
, ০৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَقُّ أَنْ يُرْضُوهُ إِنْ كَانُوا مُؤْمِنِينَ
অর্থ: যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করা। কেননা উনারাই সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার।
কাজেই, প্রত্যেক মু’মিন মুসলমান বান্দা-বান্দী ও উম্মতের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে, কামালিয়াত অর্থাৎ মহান আল্লাহ উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যেই আমল করা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “হযরত আবূ উমামা আল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই আমল কবুল করবেন না, যা ইখলাছের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের জন্য করা না হয়। ” (নাসায়ী শরীফ, দায়লামী শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোন আমল করা হলে তা হবে গইরুল্লাহ। তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কখনোই কবুলযোগ্য হবে না। তা যত বেশি ও যত বড় আমলই হোক না কেন। যার উদাহরণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فويل للمصلين. الذين هم عن صلاتهم ساهون. الذين هم يراءون.
অর্থাৎ, নামায আদায়কারীদের জন্য আফসুস! তথা জাহান্নাম। যারা নামায আদায়ে অমনোযোগী। যারা রিয়াকারী অর্থাৎ মানুষকে দেখানোর জন্য নামায পড়ে। (পবিত্র সূরা মাঊন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪, ৫, ৬)
একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, যা মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্য না থাকার কারণে জিহাদকারী জিহাদ করা সত্ত্বেও, ক্বারী কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়া সত্ত্বেও এবং আলিম ইলম উনার প্রচার প্রসার করা সত্ত্বেও এবং দানশীল দানের সমস্ত রাস্তায় দান করা সত্ত্বেও তাদের সকলকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। নাউযুবিল্লাহ!
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে ইবাদত বা আমল করার মাধ্যমেই কামালিয়াত হাছিল হয়। আর কামালিয়াত হাছিল করার মাধ্যম হচ্ছেন ইখলাছ। অর্থাৎ প্রত্যেক পুরুষ মহিলাকে ইখলাছ অর্জন করতে হবে। অন্যথায় কামালিয়াত হাছিল করা তো দূরের কথা নাজাত লাভ করাটাই কঠিন হবে।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- সমস্ত মানুষ ধ্বংস মু’মিনগণ ব্যতীত এবং মু’মিনগণও ধ্বংস আলিমগণ ব্যতীত এবং আলিমগণও ধ্বংস আমলকারীগণ ব্যতীত এবং আমলকারীগণও ধ্বংস ইখলাছ অর্জনকারীগণ ব্যতীত। (মিরকাত শরীফ)
প্রতিভাত হলো, ইখলাছ অর্জনকারীগণ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে হালাকী বা ধ্বংস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে না।
অতএব, প্রত্যেকের জন্য ইখলাছ অর্জন করা ফরয। আর ইলমুল ইখলাছ উনার অপর নামই হচ্ছে ইলমুল ক্বল্ব বা ইলমুত তাছাওউফ। আর কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাওউফ বা ইখলাছ অর্জন করতে হয়।
বর্ণিত রয়েছে, হানাফী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশ্ববিখ্যাত আলিম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বলেছেন-
لولا سنتان لـهلك ابو نعمان
অর্থ: “আমি নু’মান বিন ছাবিত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ধ্বংস হয়ে যেতাম যদি দু’বছর না পেতাম। ” (সাইফুল মুক্বাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া)
অর্থাৎ হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দু’বছর উনার দ্বিতীয় শায়েখ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফ-এ থেকে ইলমে তাছাওউফ অর্জন করেন।
উল্লেখ্য, হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথমে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খ¦মিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম উনার কাছে মুরীদ হন এবং উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনারই আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার কাছে বাইয়াত হয়ে কামালিয়াত অর্জন করেন। সুবহানাল্লাহ! যা বিশ্বখ্যাত গায়াতুল আওতার ফী শরহে দুররিল মুখতার, সাইফুল মুকাল্লিদীন, ইছনা আশারিয়া ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا
অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, তার জন্য কোনো ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়েখ) পাবেন না। ” (পবিত্র সূরা কাহফ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)
অর্থাৎ যারা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়না, তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান। নাঊযুুবিল্লাহ!
যার কারণে সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনায়িদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ আরো অনেকেই বলেছেন যে-
من ليس له شيخ فشيخه شيطان
অর্থ: “যার কোনো শায়েখ বা মুর্শিদ নেই, তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান। ” নাঊযুবিল্লাহ! (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাওউফ তত্ত্ব)
(পরবর্তী পর্বে চোখ রাখুন)
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৬)
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী যে কারণে (৩)
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র খুতবা উনার হুকুম-আহকাম
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (৬)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদেরকে ঈমান থেকে সরিয়ে দিতে কাফিরগুলো সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছে
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী যে কারণে (২)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)