পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরা সম্পর্কে-
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (১১)
, ২৭ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭, মে, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِـيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يـَحُجُّ اَغْنِيَاءُ النَّاسِ لِلنَّزَاهَةِ وَاَوْسَطُهُمْ لِلتِّجَارَةِ وَفُقَرَاؤُهُمْ لِلْمَسْأَلَةِ وَقُرَّاؤُهُمْ لِلرِّيَاءِ وَالسُّمْعَةِ
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَأْتِـيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ
মানুষের উপর অতিশীঘ্রই এমন একটা সময় আসবে অর্থাৎ আমার উম্মতের উপর এমন একটা সময় আসবে
يـَحُجُّ اَغْنِيَاءُ النَّاسِ لِلنَّزَاهَةِ
যারা ধনী, পয়সাওয়ালা, ধনী সম্প্রদায় যারা রয়েছে এরা হজ্জ করবে আনন্দ ভ্রমণ হিসেবে। নাউযুবিল্লাহ!
وَاَوْسَطُهُمْ لِلتِّجَارَةِ
মধ্যম শ্রেণীর যারা রয়েছে তারা হজ্জ করবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে। নাউযুবিল্লাহ!
وَفُقَرَاؤُهُمْ لِلْمَسْأَلَةِ
আর যারা অভাবী, গরীব এরা হজ্জ করবে ভিক্ষা খয়রাত করার জন্য। নাউযুবিল্লাহ!
وَقُرَّاؤُهُمْ لِلرِّيَاءِ وَالسُّمْعَةِ
আর অনেক আলিম ছূফী দরবেশ নামধারী ব্যক্তিরা হজ্জ করবে মানুষকে বলার জন্য, রিয়া করার জন্য। নাউযুবিল্লাহ! যে, আমি এতবার হজ্জ করেছি, পাঁচ বার, দশ বার, বিশ বার, চল্লিশ বার, একশ’ বার হজ্জ করেছি। নাউযুবিল্লাহ! মানুষকে এটা বলার জন্য, রিয়ার জন্য। কিন্তু সেই হজ্জগুলো একটাও কবুল হবে না। হজ্জে মাবরূর করতে হবে তখন হজ্জ কবুল হবে এবং তার যত ফযীলত সেটা সে লাভ করবে। আমভাবে মানুষের পক্ষে এ বিষয়গুলো ফিকির করা অত্যন্ত কঠিন। তবে সাধারণভাবে যেটা কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, কোন লোকের যদি সত্যিই পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তাহলে হজ্জ করে আসার পরে দেখা যাবে তার আমলগুলো আস্তে আস্তে বিশুদ্ধ হবে। অর্থাৎ সে আস্তে আস্তে যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে রুজু হয়ে যাবে। তার আমলগুলো আস্তে আস্তে শুদ্ধ হয়ে যাবে। সে সমস্ত কুফরী, শিরিকী, হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! আর যদি দেখা যায় সে হজ্জ করে এসে তার আমলে কোন পরিবর্তন নেই বরং তার আমল নষ্ট হচ্ছে মনে হয়। সে হারাম নাজায়িয, অশ্লীল-অশালীন কাজে আরো জড়িত হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! তাহলে বুঝতে হবে, তার হজ্জে মাবরূর নছীব হয়নি। নাউযুবিল্লাহ! বিষয়টা ফিকির করতে হবে। পবিত্র হজ্জে মাবরূর হচ্ছে যা মানুষের নাজাতের কারণ। আর যদি সে হজ্জের কার্যক্রম যথাযথ করতে না পারে তাহলে সেটা কঠিন বিষয়। এজন্য সাধারণভাবে যেটা বলা হয়েছে, একজন হাজী ছাহেবের যে গুরুত্ব, পবিত্র হজ্জ করার যে গুরুত্ব সেটা।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَشْفَعُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَلاَثَةٌ اَلْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْعُلَمَاءُ، ثُمَّ الشُّهَدَاءُ.
সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্বিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোক সুপারিশ করবেন, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা, হযরত আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এবং যারা শহীদ উনারা।
যারা হাজী উনারাও কিন্তু সুপারিশ করবেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, একজন হাজী ছাহেবের যদি পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তিনি চারশত লোকের জন্য সুপরিশ করতে পারবেন। সুবহানাল্লাহ! এতখানি ফযীলত তাকে দেয়া হয়েছে। আর যদি বিপরীত হয় তাহলে সেটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।
কাজেই প্রতিটি আমলই যদি তা বিশুদ্ধ হয় তাহলে সে তার জন্য সুপারিশ করবে এবং তার নাজাতের কারণ। রহমত, বরকত ও সাকীনা লাভের কারণ। আর যদি আমলটা তার উল্টা হয়ে থাকে, যেভাবে করার কথা ছিলো সেভাবে সে না করে তাহলে কি হবে? সে আমলটাই কিন্তু নামায হোক, রোযা হোক, হজ্জ হোক, যাকাত হোক সে আমলগুলি তাদেরকে যারা সম্মানিত শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে যেভাবে করার সেভাবে না করলে তখন সেই আমল তাদেরকে লা’নত দিতে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! ঠিক হজ্জও কিন্তু এ রকমের। পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হলে সে নেককার, আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হয়ে যায়। মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন সেটা যদি না হয় তাহলে দেখা যায়, সে আস্তে আস্তে আরো বদকার হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ! কারণ পবিত্র হজ্জ তাকে লা’নত দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এটাও বর্ণিত রয়েছে। পবিত্র হাজরে আসওয়াদ, সেখানে চুম্বন করলে গুনাহখতাগুলো চুষে নেয়। সুবহানাল্লাহ! যদি তার পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন যদি পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব না হয় তাহলে কিন্তু পবিত্র হজরে আসওয়াদ তার গুনাহ চুষে নেয় না বরং তার প্রতি লা’নত দেয়। নাউযুবিল্লাহ! যার ফলশ্রুতিতে পর্যায়ক্রমে তার আমলগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ! এখন একটা লোকের যদি পবিত্র হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তাহলে তার আমলগুলো শুদ্ধ হবে। সমস্ত হারাম থেকে, কুফরী থেকে, শিরিকী থেকে সে বেঁচে থাকবে এবং থাকার কোশেশ করবে।
আর যদি হজ্জে মাবরূর নছীব না হয় তাহলে দেখা যাবে, সে আস্তে আস্তে আরো সম্মানিত শরীয়তবিরোধী কাজ, হারাম, অশ্লীল- অশালীন কাজে মশগুল হয়ে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই বিষয়টা ফিকির করতে হবে। পবিত্র হজ্জের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র হজ্জের জন্য চাঁদের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।
চাঁদের মাসয়ালা মাসায়িল এটা যদিও ফরযে কিফায়া তবে আমভাবে মানুষের জানার দরকার রয়েছে। এখন মানুষ চাঁদ সম্পর্কে কিছুই জানে না। যার জন্য হজ্জ হোক, উমরাহ হোক, নামায হোক, রোযা হোক, যাকাত হোক, ঈদ হোক, শবে বরাত, শবে ক্বদর হোক কোনটাই কিন্তু মানুষ ফিকির করে না। পবিত্র শবে বরাত শা’বান মাসের ১৫ তারিখে হবে। এখন যদি চাঁদ ঠিক মত না দেখে ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে শবে বরাতে না করে ১৩ তারিখ দিবাগত রাত অথবা ১৫ তারিখ দিবাগত রাত্রে করে তাহলে সে শবে বরাতের ফযীলত পাবে না। এ রকম প্রতিটিই বিষয়।
কাজেই এটা ফিকির করতে হবে। চাঁদের এ বিষয়টা কিন্তু প্রথম যামানায় মুসলমানরা অনেক গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু পরবর্তী সময় কাফির মুশরিকগুলি মুসলমানদেরকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে চাঁদের বিষয়ে গাফিল করে দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! যার জন্য এখন মুসলমানরা চাঁদের বিষয ফিকির করে না। অথচ এটা ফিকির করা ফরয ছিলো। চাঁদের বিষয়টা ফিকির করা ফরয ছিলো। চাঁদের সাথে মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগীগুলি সংশ্লিষ্ট বা এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, প্রতিটা আমলের সাথেই। এখন পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস শুরু হলো, পবিত্র শাওওয়াল মাস শুরু হলো। যিলক্বদ মাস আসবে, যিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠবে। অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখতে হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৭)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)