ছাহিবুল মি’রাজ, মাশুকে মাওলা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ- বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে উপলব্ধির ব্যর্থ প্রয়াস সম্পর্কে কিছু কথা (২)
, ২৮ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১২ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৬ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জড় জগতের গ্রহ উপগ্রহগুলোইতো মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার হাক্বীক্বত বুঝবে কী করে? তাহতাচ্ছারা থেকে পবিত্র আরশ মুয়াল্লাহ পর্যন্ত আলমে খালক্ব। পবিত্র আরশ থেকে পবিত্র আলমে আমর শুরু। উভয় জগতই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক কাতরা নূর মুবারক দ্বারা সৃষ্টি। উভয় জগতেই উনার অবাধ বিচরণ। আরশ, কুরসী, লাওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, এমনকি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফসহ ইহকাল ও পরকালের সমুদয় বিষয় আকরামুল কারাম, রসূলুল মালিকিল আ’লাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন ইলম উনার সামান্য অংশ মাত্র। সুবহানাল্লাহ!
ছাহিবুল ওহী, ছাহিবুল কাওছার, ছাহিবুল ওয়াসীলাহ, মাশুকে মাওলা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে আমার এমন নিগূঢ় নৈকট্য, যেখানে কোনো নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, কোনো ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম অথবা অন্য কারো স্থান সংকুলান হয় না।” সুবহানাল্লাহ! সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তিনি দায়িমী ছোহবত ও পবিত্র দিদার মুবারকে মশগুল রয়েছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, তিনি অনুক্ষণ মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা উনার কুদরত মুবারকের মধ্যে রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
সার্বক্ষণিক নিগূঢ় নৈকট্য, ছোহবত, দিদার ও আলাপন উনাদের মুবারক বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মি’রাজ শরীফে উনার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে কুল কায়িনাতকে জানিয়ে দিলেন। জানিয়ে দিলেন পবিত্র মি’রাজ শরীফ, সিনা মুবারক চাক, দিদার, আলাপন কেবলই মাশুকে মাওলা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য শোভনীয় ও সহনীয়। অন্য কারো জন্যই নয়। জানিয়ে দিলেন, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মা’শুক। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বায়িম মাক্বাম। জানিয়ে দিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক অধিষ্ঠান। সুবহানাল্লাহ!
আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা হয়েছে ১০০ বছর আগে। আর ইলম, হিকমত, প্রজ্ঞা, মুহব্বত-মারিফাত, তায়াল্লুক-নিসবত উনাদের সূচনা হয়েছে- আবূল বাশার মুহম্মদ ছফিউল্লাহ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সময় থেকে। ছহিবে শাফায়াতে কুবরা, ছহিবে মাক্বামে মাহমুদ, ছহিবে ঈমান, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র নূরুশ্ শক্ব মুবারক (আঙ্গুল মুবারক) উনার ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া, উনার পবিত্র সিনা মুবারক চাক সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা কী আধুনিক বিজ্ঞান দিতে পারে? কস্মিনকালেও নয়। পবিত্র মি’রাজ শরীফ, পবিত্র সিনা মুবারক চাক-পবিত্র এ বিষয়গুলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনন্য মু’জিযা শরীফ। এই মু’জিযা শরীফ উনার কোনো ব্যাখ্যাই বিজ্ঞানে নেই।
পবিত্র মি’রাজ শরীফ শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহানতম শান মুবারকসমূহের একখানি মুবারক শান উনার বহিঃপ্রকাশ। পবিত্র দিদার, পবিত্র ছোহবত দুনিয়ার যমীনেও দান করা সম্ভব এবং তা সার্বক্ষণিকভাবে করাও হয়েছে। মূল বিষয়টি সমঝদার উনাদের জানা আবশ্যক। তা হলো, উহুদ ও তায়িফ-এর ঘটনার সঙ্গে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার কোনোই পার্থক্য নেই। কারণ নুবুওওয়াত ও রিসালত, মান-শান, মর্যাদা-মাক্বাম উনাদের কখনোই কোনো রূপান্তর ঘটেনি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে রাত যাপন করি। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে খাওয়ান এবং তিনি আমাকে পান করান।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। বিশুদ্ধ আক্বীদায় মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক, মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে মাশুকে মাওলা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিগূঢ় সম্পর্ক এবং উনার সীমাহীন শান-মান, মর্যাদা-মাক্বাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদায় কে বিশ্বাস করে, আর কে বিশ্বাস করেনা, তা যাচাই করার জন্য। পবিত্র মি’রাজ শরীফ যারা অস্বীকার ও অবিশ্বাস করে, তারা নামায অস্বীকার করে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই তারা কাফির। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার মূল তোহফাইতো পবিত্র নামায। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা উনার কুদরত মুবারক এবং হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের, বিশেষ করে ছহিবু লিওয়ায়িল হামদ, ছহিবু কা’বা কাউসাইন, ছহিবুল মি’রাজ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মু’জিযা শরীফ উনার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বিজ্ঞানের সাধ্যাতীত। বিজ্ঞান শুধু এতোটুকু বলতে পারে যে, “বিষয়টি শুধুই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্ষমতা ও ইখতিয়ারভুক্ত।” ফিরাউনের মোতায়েনকৃত যাদুকরদের মুকাবিলায় হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র লাঠি মুবারক উনার সাপে পরিণত হওয়া, যাদুকরদের সকল সাপ গিলে ফেলা, রশিতে রূপান্তর হওয়া এবং লাঠি মুবারকে আলো জ্বলে উঠার মু’জিযা শরীফ উনার কোনো ব্যাখ্যাই বিজ্ঞানে নেই।
ছহিবে লাওলাক, ছহিবু কা’বা কাওসাইনি আও আদনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, মর্যাদা-মাক্বাম, ফাযায়িল-ফযীলত সীমাহীন। আবাদুল আবাদ পর্যন্ত কুল কায়িনাতের দায়িমী ছানা-ছিফত কস্মিনকালেও উনার সীমাহীন মর্যাদা ও মাক্বাম, ফাযায়িল-ফযীলত উনাদের সমান্তরাল হবে না, অর্থাৎ সমান হবে না। তাই মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা তিনি এ অসনীয় শূন্যতা পূরণের জন্য সর্বক্ষণ উনার মাশুক, উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছলাত পাঠে, অর্থাৎ উনার পবিত্র ছানা-ছিফত মুবারকে মশগুল রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার হাক্বীক্বী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বিজ্ঞানে নেই। এটিই হলো আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ছহীহ আক্বীদা। যারা এই আক্বীদায় বিশ্বাসী নয়, অর্থাৎ যারা বিজ্ঞান মনষ্ক বোধ-বিশ্বাসে পবিত্র মি’রাজ শরীফ অবিশ্বাস ও অস্বীকার করে, তারা কাট্টা কাফির। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উপলব্ধির জন্য অনিবার্য সমঝ, মন, মনন, ছহীহ আক্বীদার উৎসমূল হলেন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ। কখনোই বিজ্ঞান নয়। আর এসব নিয়ামত হাছিলের উন্মেষ ঘটে পঞ্চদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে মাদারজাদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা কা’বা আলাইহিস সালাম, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা উনার মুবারক সান্নিধ্যে। সুবহানাল্লাহ!
-মুহম্মদ সাদী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)