ছাহিবুল মি’রাজ, মাশুকে মাওলা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ- বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে উপলব্ধির ব্যর্থ প্রয়াস সম্পর্কে কিছু কথা (১)
, ২৭ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার সামগ্রিক বিষয় আকরামুল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনন্য মু’জিযা শরীফ এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনাদের পবিত্র সমন্বয়ে সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি মানুষের সহজাত সীমীত উপলব্ধি ও অনুভবের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়। মূলত: পবিত্র মি’রাজ শরীফ মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহামিলন ও মু’য়ামিলার এমন এক আনুষ্ঠানিকতার বহিঃপ্রকাশ, যা হাক্বীক্বীভাবে কুল কায়িনাতের অভাবনীয় ও অবোধ্য।
প্রেক্ষিত কারণে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার হাক্বীক্বী উপলব্ধির ক্ষেত্রে মানুষ বিভিন্ন কষ্ট-কল্পনা ও ধ্যান-ধারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে। সেসবের মধ্যে সূতিকাগারে ঘুরপাক খাওয়া বিজ্ঞানকেই মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে মনে করে থাকে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যারা পবিত্র মি’রাজ শরীফ, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উপলব্ধি করতে চায়, তারা অবোধ ও মূর্খ। অনুধাবণ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সম্মানিত ইসলাম ও বিজ্ঞান যখন সাংঘর্ষিক হয়, নাদান ও গ- মূর্খরা তখন বিজ্ঞানকেই প্রাধান্য দিতে চায়। নাউযুবিল্লাহ! মুসলমান উনাদের মধ্যে যাদের ঈমান ও আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়, তারাও ওই বাতিল পন্থীদেরই দলভুক্ত। নাউযূবিল্লাহ! বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে পবিত্র মি’রাজ শরীফ, বিশেষ করে, পবিত্র দিদার বিরোধী অনেক বই-পুস্তক বেরিয়েছে। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার বিরুদ্ধাচারণ করা, ভুল ব্যাখ্য দেয়া তথাকথিত বিজ্ঞান মনষ্ক একটি বোদ্ধা মহল এবং উলামায়ে ‘সূ’দের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
আইনষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মিলিয়ে অনেকে পবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে আজগুবি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে থাকে। আইনষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বমতে আলোর গতির চেয়ে অধিক কোনো গতি নেই। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হলো ১৫ কোটি কিলোমিটার। আর আলোর গতিবেগ হলো প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মর্মানুযায়ী সম্মানিত বোরাক এক সেকেন্ডের বহু পূর্বেই ১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ফেলেছেন। আলোর গতি অনুযায়ী চললে সূর্যের দূরত্ব পরিমাণ পথ অতিক্রমণে সম্মানিত বোরাক উনার প্রয়োজন হতো কমপক্ষে ৮ মিনিট, যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সম্মানিত বোরাক উনার গতির সঙ্গে আলোর গতির তুলনা করতে যাওয়া গুমরাহী ছাড়া আর কিছু নয়। তাই পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আইষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অচল।
পবিত্র মি’রাজ শরীফে ছাহিবুল ওহী ওয়াল কুরআন, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার সঙ্গে পবিত্র দিদার ও আলাপন এবং পবিত্র ওহী মুবারক লাভ শেষে যমীনে প্রত্যাবর্তনের পর দেখা যায়, যে বিছানা মুবারকে তিনি শায়িত থেকে পবিত্র মি’রাজ শরীফে গমন করেছিলেন, তা গরম রয়েছে, পবিত্র অযূ মুবারক উনার পানি গড়িয়ে যাওয়া শেষ হয়নি এবং দরজা মুবারক উনার শিকল নড়ছে। সুবহানাল্লাহ!
বিজ্ঞানের ফরমুলায় এক শ্রেণির নাদান পবিত্র মি’রাজ শরীফ বুঝতে চায়। মধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রমণের বিষয় সমাধান করতে চায়। নাউযূবিল্লাহ! তারা বলে এবং বিশ্বাস করে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ অনুষ্ঠানকালে সময়কে আটকে রাখা হয়েছে। যে কারণে পবিত্র মি’রাজ শরীফ অনুষ্ঠানে দীর্ঘ ২৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও পবিত্র বিছানা মুবারক গরম থেকেছে। পবিত্র অযূর পানি মুবারক গড়িয়ে যেতে থেকেছে। দরজা মুবারকের শিকল মুবারক নড়তে থেকেছে। সময় আটকে রাখার কারণে দীর্ঘ ২৭ বছর পার হলেও মুবারক এ বিষয়গুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হতে পারেনি। নাউযূবিল্লাহ!
পবিত্র মি’রাজ শরীফ অনুষ্ঠানকালে সময়ের চলমানতা আটকে রাখার বিষয়টি বাতিলপন্থীদের উদ্ভাবন। আসলে সময়তো মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করেন। উনার কায়িম মাক্বাম হিসেবে সময়তো স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই সময়ের নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক। দীর্ঘ ২৭ বছর এমনভাবে অতিক্রান্ত হয়েছে, যেখানে কুদরতীভাবে সময়ের গতিময়তার কোনো ক্ষেত্রই সৃষ্টি হতে পারেনি। যেমন মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার কাছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত একাকার। অর্থাৎ সবই বর্তমান। অথচ সময়ের গতিময়তা কখনো থেমে নেই। নিগূঢ় এ বিষয়টি উপলব্ধির জন্য যে সমঝ ও যোগ্যতা প্রয়োজন, তা বিজ্ঞানমনস্ক নাদান ও জাহিলদের নেই।
পবিত্র মি’রাজ শরীফ অস্বীকার ও অবিশ্বাসকারী নাস্তিক, গুমরাহ ও কাফিররা পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার সত্যতা, পবিত্র দিদার এবং আনুষঙ্গিক মুবারক বিষয়গুলোতে অধুনা যে সব প্রশ্ন উত্থাপন করে, ১৪শ’ বছর আগে পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির, মুশরিক, ইহুদী ও পৌত্তলিকরাও একই প্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, কূট তর্কে লিপ্ত থেকেছে। তাদেরই অধস্তন সন্তান হলো পবিত্র মি’রাজ শরীফ অবিশ্বাসকারী বর্তমানকালের তথাকথিত প্রগতিবাদী গোষ্ঠী। এদের কথা ও বোধ-বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে বলতে হয়, আপন প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দিদার দানের লক্ষ্যে মুবারক সন্নিধানে নেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার ক্ষমতা ও কুদরত কোনটিই ছিলো না এবং বর্তমানেও নেই। নাউযুবিল্লাহ!
মধ্যাকর্ষণ শক্তির বাধা এবং মহাকাশের বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা ভেদ করে কিভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পাদিত হলো এবং অক্সিজেন ছাড়া তিনি কিভাবে মহাকাশে বেঁচে রইলেন, তা নিয়ে বাতিলপন্থীরা অত্যন্ত চিন্তাযুক্ত। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার কুদরত মুবারক, উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা শরীফ, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অকাট্য দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্বাস না করে বিজ্ঞানের ফরমুলায় মনগড়াভাবে উলামায়ে সূ’, গুমরাহ গোষ্ঠী ও বাতিলপন্থীরা পবিত্র মি’রাজ শরীফ, সিনা মুবারক চাক উনাদের হাক্বীক্বত বুঝতে চায়। নাউযুবিল্লাহ!
পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে। সে শক্তি শূন্য মন্ডলের যে কোনো স্থূল বস্তুকে নিচের দিকে টেনে আনে। ফলে শারীরিকভাবে মহাকাশ ভ্রমণ সম্ভব নয় মর্মে কাফির মুশরিকরা যে যুক্তি প্রদর্শন করে, সে যুক্তি আজকের বিজ্ঞান প্রত্যাখ্যান করে। শূন্যে অবস্থিত যে কোনো স্থূল বস্তুকেই পৃথিবী একইভাবে আকর্ষণ করতে পারে না। পৃথিবীর কোনো বস্তু যখন “নিউট্রাল জোন”-এ পৌঁছে যায়, তখন সে বস্তুর পৃথিবীতে ফিরে আসার সম্ভাবনা তেমন থাকে না। বিজ্ঞান বলে, কোনো বস্তু যদি প্রতি সেকেন্ডে মোটামুটি সাড়ে ৭ মাইল বেগে উপরের দিকে ছুটে চলে, তবে সে বস্তু পৃথিবীতে আর ফিরে আসে না। পৃথিবী হতে কোনো বস্তু যতোই উর্ধ্বলোকে যেতে থাকে, ততোই তার ওজন কমতে থাকে। এজন্য উর্ধ্বপানে সে বস্তুর গতি ক্রমান্বয়ে সহজতর হতে থাকে। ঘন্টায় ২৫ হাজার মাইল এর বেশী গতিতে উর্ধ্বলোকে অগ্রসর হতে পারলে পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে মুক্তিলাভ করা যায়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছে “মুক্তি গতি”।
এসব কারণে আধুনিক বিজ্ঞান পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দিতে চায়না। পবিত্র মি’রাজ শরীফ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমরা এসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার উপর আদৌ নির্ভর করিনা। জটিল ও সূক্ষ্ম বিষয় উপলব্ধির জন্য সব সময় ‘বিজ্ঞান’-‘বিজ্ঞান’ বলে যারা চেঁচামেচি করে, তাদের মনোরঞ্জনের জন্যই আলোচ্য উদাহরণগুলোর অবতারণা। (চলবে)
-আল্লামা মুহম্মদ সাদী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)