স্থাপত্য-নিদর্শন
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৩)
, ০৫ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) স্থাপত্য নিদর্শন
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে মুসলিম সৈন্যবাহিনী কর্তৃক মিশর জয়ের পর বর্তমান কায়রোর “ওল্ড সিটি” বা প্রাচীন কায়রোকে মিশরের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, এবং বর্তমান কায়রোর ফুসতাত নামক অঞ্চলে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মুসলিম বিজয়ের স্মারক হিসেবে নির্মিত এই মসজিদ “মসজিদ আল ফাতহ” হিসেবেও মিশরসহ সমগ্র আরব বিশ্বে সমধিক পরিচিত। আর আফ্রিকা মহাদেশের সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে “তাজ আল জামে” নামেও এই মসজিদ স্থানীয়দের মাঝে পরিচিত।
নির্ভরযোগ্য বর্ণনানুযায়ী, ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক নির্মিত এই মসজিদের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে ৫০ গজ ও প্রস্থে ৩০ গজ। এবং দরজা ছিল ৬টি। সর্বপ্রথম নির্মাণের এই আয়তন ৫৩ হিজরী পর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল। অতঃপর মিশরের তৎকালীন শাসক মাসলামাহ ইবনে মুখাল্লাদ আল আনসারী তিনি মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন এবং চারপাশে চারটি মিনার নির্মাণ করেন।
উমাইয়াদের পর ফাতেমী, মামলুকী, আব্বাসী ও উসমানী উল্লেখিত প্রত্যেক শাসনামলেই মসজিদে আমর ইবনুল আস এর ব্যাপক সংস্কার ও সম্প্রসারণ হয়েছে। অতি সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কার ও সম্প্রসারনের পর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এই মসজিদের আয়তন প্রায় ১৪ হাজার বর্গ মিটার।
মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদের পুনঃনির্মাণ:
মসজিদের আয়তন বড় এবং মসজিদ সংস্কার করার জন্য ৫৩ হিজরীর পর (৬৭৩ খৃ:) হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে উনার নির্দেশে মিশরের নবম গভর্নর মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদ মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন। মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদ মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করেন এবং মসজিদের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর পশ্চিম দিকে মসজিদের জায়গা বৃদ্ধি করেন।
মসজিদটির পুনঃনির্মাণের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, মসজিদের চার কোণেই চারটি মিনার স্থাপন করা হয়েছিল। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদকে মসজিদটি সম্প্রসারণ করার আদেশ দেন তখন তিনি মসজিদের চার কোণেই চারটি মিনার নির্মাণেরও নির্দেশ দেন। অনেক ইতিহাসবিদ মসজিদ স্থাপত্য শিল্পে মিনার নির্মাণের এটা প্রথম নির্মাণ করে অবহিত করেছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল-মালিক এবং কুররাহ ইবনে শারীক এর পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ:
পুনঃনির্মাণের তিন যুগের মাথায় ৭০৮ খৃ: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল-মালিক মসজিদের ছাঁদ করে নির্মাণ করেন।
কিন্তু তিন বছর পর কুররাহ ইবনে শারীক মসজিদটিকে সম্পূর্ণরূপে পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ করেন। এই কাজ সম্পন্ন করতে এক বছরের মত সময় লেগেছিলো। মসজিদের সম্প্রসারণ উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে হয়েছিল। উত্তর পূর্বদিকে হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাসভবন থাকায় বাসভবনের কিছু অংশ ভাঙ্গতে হয়েছিল। এবং এজন্য হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বংশধরগণ যারা ছিলেন উনাদের আর্থিক মূল্য পরিশোধ করা হয়েছিল। দক্ষিণ পূর্ব বা ক্বিবলার দিকে মসজিদের এটাই সর্বপ্রথম সম্প্রসারণ। কুররাহ ইবনে শারীক তিনি মসজিদের জন্য একটি বৃত্তাকৃতির বা অবতলাকার মিহরাব নির্মাণ করেছিলেন এবং সঠিকভাবে ক্বিবলামুখী করে স্থাপন করেছিলেন। মদীনা শরীফে মসজিদ নির্মানের পর মুসলিম স্থাপত্য ইতিহাসে এটাই প্রথম ব্যবহার করা মিহরাব। যা তৃতীয় অবতলাকার মিহরাব নির্মিত হয়েছিল দামেস্কে মসজিদে। বর্তমান সম্প্রসারিত মসজিদে এগারোটি প্রবেশপথ ছিল এর মধ্যে চারটি উত্তর পূর্ব দিকে চারটি দক্ষিণ পশ্চিম দিকে এবং তিনটি উত্তর পশ্চিম দিকে নির্মিত হয়েছিল। (চলবে)
-মুহম্মদ নাঈম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৫)
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৪)
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অনন্য স্থাপত্যের নজির বাংলাদেশে: মসজিদে নববী শরীফ উনার হুবহু নকশায় রাজারবাগ শরীফে সুন্নতী জামে মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ মহাসম্মানিত ১২ই শরীফে
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৩)
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন খাগড়াছড়ির সবচেয়ে পুরনো ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদ
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (২)
১৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ঐতিহাসিক চন্দনপুরা তাজ মসজিদ (২)
১১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ঐতিহাসিক চন্দনপুরা তাজ মসজিদ (১)
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৫)
০৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৪)
২৯ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাবা আদম শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ ও মসজিদ
২৭ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইউরোপে মুসলিম সভ্যতার অন্যন্য এক নিদর্শন “বিবি-হায়েবাত মসজিদ”
২৪ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)