ছহিবু সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ
মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র হজ্জ এবং পবিত্র উমরাহ উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, হুকুম-আহকাম সম্পর্কে
, ২১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১২ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১১ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পর্ব- ১০
পূর্ব প্রকাশিতের পর
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِـيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُوْجِبُ الْـحَجَّ؟ قَالَ
“হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন জিনিস পবিত্র হজ্জ উনাকে ওয়াজিব করে? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
اَلزَّادُ وَالرَّاحِلَةُ
পাথেয় এবং বাহন। অর্থাৎ পবিত্র ঈমান উনার নিরাপত্তা ও প্রাণের নিরাপত্তাসহ পথের খরচ এবং বাহন যদি থাকে তাহলে পবিত্র হজ্জ ফরয হয়। ”
আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَأَلَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا السَّبِيْلُ؟ قَالَ اَلزَّادُ وَالرَّاحِلَةُ
“হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আরেকজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! اَلسَّبِيْلُ শব্দের অর্থ কি? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, পাথেয় এবং বাহন।
এখানে আমভাবে যেটা বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে, কারো যদি স্বচ্ছলতা থাকে- টাকা-পয়সা, যাতায়াতের খরচ, সংসারের খরচ সব থাকে এবং বাহন অর্থাৎ সে পবিত্র হজ্জ করতে যাবে ফিরে আসবে এর সমস্ত খরচ তার থাকে, আমভাবে বলা হয়েছে তার জন্য পবিত্র হজ্জ করা ফরয করা হয়েছে। কিন্তু এর আরো যে শর্ত শারায়িত রয়েছে যেগুলো অন্য পবিত্র আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন হজ্জ যদি কারো ফরয হয় তাহলে তাকে আদায় করতে হবে।
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا صَرُوْرَةَ فِى الْإِسْلَامِ
“হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলামে কোন বৈরাগ্যবাদ নেই। ”
অর্থাৎ যাদের সামর্থ্য থাকবে, যারা বিয়ে শাদী করে তারা যেন পবিত্র হজ্জ করে নেয়। সুবহাল্লাহ!
পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার পর হজ্জ না করে থাকবে এটা ইসলামের অন্তুর্ভূক্ত নয়। সেজন্য তাক্বীদ করা হয়েছে,
لَا صَرُوْرَةَ فِى الْإِسْلَامِ
“ইসলামে হজ্জ না করে থাকাটা জায়িয নেই। ” যাদের উপর হজ্জ ফরয তাদেরকে অবশ্যই হজ্জ করতে হবে। বিশেষ করে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হজ্জ উনার হুকুম-আহকাম স্পষ্ট উম্মতদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে সেটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির দু’হাজার পূর্বে পবিত্র কা’বা শরীফকে সৃষ্টি করা হয়েছে। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাওয়াফ মুবারক করেছেন। পরবর্তী সময় হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার সময় থেকে পবিত্র হজ্জ শুরু হয়েছে। কিন্তু হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার যামানায় যখন বন্যা হলো তখন পবিত্র কা’বা শরীফকে তুলে নেয়া হয়। সেই জাগাটা খালি ছিল। সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ
“পবিত্র কা’বা শরীফকে তুলে নেয়া হয়েছিল, খালি জায়গা ছিলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে কা’বা শরীফ পুনঃস্থাপন করার জন্য জায়গাটা দেখিয়ে দিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার খলীল আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার স্থানটা নির্দিষ্ট করে দেখিয়ে দেন এবং বলে দেন।
أَنْ لَّا تُشْرِكْ بِيْ شَيْئًا
এখানে যে ঘর স্থাপন করা হবে, এর সাথে যেন শরীক করা না হয়।
وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْقَآئِمِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
“এবং এটা পবিত্র রাখতে হবে। তাওয়াফকারীদের জন্য, ক্বিয়ামকারীদের জন্য, যারা নামায আদায় করবে, রুকু করবে, সিজদা করবে, অবস্থান করবে তাদের জন্য যেন কা’বা শরীফ পবিত্র রাখা হয়। ”
এবং কারো সাথে যেন শরীক না হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হযরত খলীল আলাইহিস সালাম উনাকে এই জায়গাটা দেখিয়ে দিলেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে। কা’বা শরীফ যে পুর্ণস্থাপন করতে হবে, কোথায় করতে হবে, সেই জায়গাটা চিহ্নিত করে দেয়া হলো। মহান আল্লাহ পাক উনার খলীল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি সেটা পূর্ণনির্মাণ, পূর্ণস্থাপন করলেন। সেটাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيْلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ. رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۤ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ.
“হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, যিনি খলীলুল্লাহ, উনাকে যখন জায়গাটা দেখিয়ে দেয়া হলো, যে এখানে আপনি পবিত্র কা’বা শরীফ নির্মাণ করুন। স্থানটা এরকম ছিলো, এর মাপটা এতটুকু ছিলো ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি উনার ছেলে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে সেটাকে আবার নির্মাণ করার জন্য কাজ শুরু করলেন। যখন নির্মাণ হলো সেই অবস্থায় তিনি দোয়া করলেন, সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলতেছেন,
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيْلُ
যখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার ছেলে হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারা পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিত্তি স্থাপন করলেন। দোয়া করলেন,
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاۤ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ،
হে মহান আল্লাহ পাক! আমাদের থেকে আপনি এটা গ্রহণ করুন, কবুল করুন। আপনি শ্রবণকারী, জ্ঞানী।
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ
বারী ইলাহী! আমাদের উভয়কে আপনার খাছ নবী-রসূল আলাইহিমাস সালাম হিসাবে, খলীলুল্লাহ ও যবীহুল্লাহ হিসাবে কবুল করে নিন।
وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ
এবং আমাদের বংশধরদের মধ্যে এক কাওমকে আপনি আপনার খাছ বান্দা-বান্দি হিসাবে কবুল করে নিন। অর্থাৎ হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বংশধর থেকে একটা গোত্র যেন, যারা যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দা-বান্দি হিসেবে থাকবেন। উনাদেরকে যেন মহান আল্লাহ পাক তিনি মনোনীত করে নেন, পছন্দ করে নেন। পরবর্তী কাজের জন্য। সেটাই তিনি দোয়া করতেছেন। তিনি দোয়া মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন উনাদের উভয়কে কবুল করেন। উনাদের তরফ থেকে উনাদের মাধ্যম দিয়ে উনাদের বংশধর, খাছ কিছু বংশধর উনাদেরকে যেন মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করে নেন। যাদের অর্থাৎ যে কাওম উনাদের মাধ্যম দিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার যে, কাজগুলো সেগুলো সম্পাদন করবেন। তিনি দোয়া মুবারক করলেন,
وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا
আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে হজ্জ করার নিয়ম-কানুনটা শিক্ষা দিন। আপনার রেজামন্দী, সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের বিষয়টা আমাদেরকে শিক্ষা দিন। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র মাযহাব অনুসরণ নিয়ে লা-মাযহাবীদের আপত্তির জবাব
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবী হাদরাদ আল আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খেলাধুলা নাজায়িয ও হারাম হওয়া সম্পর্কে সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মানুষকে আমলের প্রতি নিরুৎসাহিত করতেই পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে মওজু-জয়ীফ ইত্যাদি অপপ্রচার করছে বাতিল ফিরক্বারা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩০)
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)