ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
তার কিছুদিন পর গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক খলীফা, তিনি এলাকায় ঘোষণা করলেন যে, ‘তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে প্রকাশ্যে দেখেন। যখন একথা বলা হলো, (তিনি গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খলীফা) তখন মানুষতো সন্দেহের মধ্যে পড়ে গেলো, কি ব্যাপার? যিনি গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, মানুষ আল্লাহ পাক উনাকে যমীনে দেখবে না। অথচ এ লোক বলতেছেন, তিনি নাকি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেন? এ সংবাদ পৌঁছানো হলো সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে। যখন পৌঁছানো হলো তিনি বললেন, তাকে ডেকে নিয়ে আসো। সে খলীফাকে। অর্থাৎ উনার খলীফাকে ডেকে আনা হলো। আনার পর উনি বললেন, (উনি তো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন) মানুষকে বোঝানোর জন্য বললেন, এক কাজ করো হে ব্যক্তি, ‘তুমি কি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে পাচ্ছ?” সে বললো, ‘হ্যাঁ আমি দেখতে পাচ্ছি।’ তখন তিনি পুনরায় বললেন, ‘চক্ষু বন্ধ করোতো।’ সে চক্ষু বন্ধ করলো। তখন আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এখনও কি দেখতে পাচ্ছ?” সে বললো, ‘হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি।’ তখন গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন- ‘দেখ, এ ব্যাপারটা এ মুরীদ সে নিজেও বুঝতে পারেনি। হাক্বীক্বত সে তার অন্তর চক্ষু দ্বারা মেছালী ছূরতে দেখতে পাচ্ছে। যার জন্য সে বলে, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে পাচ্ছি। সে হাক্বীক্বী মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে পাচ্ছে না। তার চক্ষু যখন বন্ধ করানো হলো তারপরও সে দেখে। কাজেই বুঝা গেলো, সে তার কাশ্ফের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছে। কাজেই, যমীনে কেউ মহান আল্লাহ পাক উনাকে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারকে দেখতে পারবে না। এটা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া। যদি কেউ বলে, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে পাচ্ছি তবে সে কাফির হয়ে যাবে। তবে মেছালী ছূরতে দেখতে পাবে বা দেখবে। যেটা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মাকতুবাত শরীফে’ উল্লেখ করেছেন, ‘সালিক যখন মুরাক্বাবা-মুশাহাদা করবে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে সে দেখবে মেছালী ছূরতে। দেখে যদি মনে করে উনি মহান আল্লাহ পাক তাহলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে।’ কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনতে হবে। يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ যমীনে সে অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপনকারী হিসেবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে মেনে নিবে। চু-চেরা, কিল-কাল সে করতে পারবে না। মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখার কোন শর্ত এখানে নেই। হ্যাঁ, তবে ইবাদতের জন্য যে বলা হয়েছে-
أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন যে, ‘মহান আল্লাহ পাক উনাকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ, এ ধারণা নিয়ে ইবাদত-বন্দিগী করো অথবা সে ধারণায় যদি পৌঁছতে না পারো তাহলে এটা ধারণা করো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে দেখেতেছেন।’ এটা হচ্ছে মেছালী ছূরত, হাক্বীক্বী ছূরত নয়। যমীনে হাক্বীক্বী ছূরতে কেউ মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখবে না। মেছালী ছূরতে দেখবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই বলেছেন-
رَأَيْتُ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ فِي صُورَةِ شَابٍّ أَمْرَدَ
আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে যুবকের ছূরতে দেখেছি। আউলিয়ায়ে কিরাম বলেছেন, যুবকের ছূরতে বা অন্যান্য অনেক ছূরত মুবারকে দেখেছেন। কাজেই, যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কেউ দেখবে না হাক্বীক্বীভাবে। মেছালী ছূরত মুবারকে সে দেখবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে না দেখে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। এটা ঈমানের প্রথম শর্ত। মহান আল্লাহ পাক উনাকে না দেখেই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, ঈমানদারগণ বা যে ব্যক্তি ঈমানদার সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে বিশ্বাস করে অর্থাৎ যে নিজেকে মুসলমান হিসাবে সাব্যস্ত করবে সে মুসলমান হিসাবে গণ্য হবে। হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا وَأَكَلَ ذَبِيحَتَنَا فَذَلِكَ الْمُسْلِمُ الَّذِي لَهُ ذِمَّةُ اللهِ وَذِمَّةُ رَسُولِهِ
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَاযে আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের ক্বিবলাকে ক্বিবলা মেনে চলে وَأَكَلَ ذَبِيحَتَنَا এবং আমাদের যবাইকৃত পশু খায় فَذَلِكَ الْمُسْلِمُ সে ব্যক্তি মুসলমান। এখানে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, ‘তিনটা শর্ত দেয়া হয়েছে, আমাদের অনুরূপ নামায পড়ে, আমাদের ক্বিবলাকে সে ক্বিবলা মানে, যে আমাদের যবাইকৃত পশু খায়, সে হচ্ছে মুসলমান।’ এখন অনেকে মনে করে থাকে বা বলে থাকে, হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, ‘যারা আহলে ক্বিবলা তারা সকলেই মুসলমান।’ নাউযুবিল্লাহ! আহলে ক্বিবলার মধ্যে তো তেহাত্তর ফিরক্বা রয়েছে। বাহাত্তর ফিরক্বা, যারা আহলে নার বা জাহান্নামী। সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। আহলে ক্বিবলা হলেই যে সে মুসলমান হবে তা নয়। আহলে ক্বিবলার জন্য শর্ত দেয়া হয়েছে, আমাদের অনুরূপ নামায পড়ে, আমাদের যবাইকৃত খাদ্য খায়, ইত্যাদি কয়েকটা শর্ত দেয়া হয়েছে। এই শর্তগুলো একটা মুসলমানের মধ্যে থাকবে। এর চেয়ে আরো অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে। এ শর্তগুলো থাকতে হবে অন্যান্য শর্তের সাথে। যেমন বলা হয়েছে-
عَلامَاتُ الْمُنَافِقِ ثَلاثَةٌ : إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
এ হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে মুনাফিকের আলামত তিনটা। অন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে চারটা। এরূপ কম-বেশী অনেক বর্ণনা করা হয়েছে। যে মুনাফিক সে ওয়াদা করলে খিলাফ করে, কথা বললে মিথ্যা কথা বলে, আমানত রাখলে সে খিয়ানত করে। চতুর্থ হচ্ছে ঝগড়া করলে গালিগালাজ করে। এটা হচ্ছে মুনাফিকের আলামত। একটা লোক মুনাফিক হলে তার মধ্যে এই আলামতগুলি থাকবে। সেজন্য সে পূর্ণ মুনাফিক কি-না তা চিন্তার বিষয়। একজন লোক মুসলমান হলে তার মধ্যে তিনটা আলামত থাকবে। এ তিনটা হলে সে পরিপূর্ণ মুসলমান হয়ে যাবে তা নয়। এ তিনটাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক যা রয়েছে সবগুলোই তার মধ্যে থাকতে হবে।
যেহেতু এখানে বলা হয়েছে مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا আমরা যেভাবে নামায পড়ি সে সেভাবে নামায পড়ে। তাহলে নামাযের যত হুকুম আহকাম রয়েছে হুবহু সেটা মেনে নিবে। আমাদের যে ক্বিবলা রয়েছে সে ক্বিবলাকে সে মানে অর্থাৎ আমাদের যে ক্বিবলা রয়েছে সে ক্বিবলাকে সে মানে, এর যা শর্ত শারায়িত রয়েছে সব সে মেনে নিবে। আমাদের যবাইকৃত খাদ্য তারা খাবে।
তাহলে এর যত মাসয়ালা মাসায়িল রয়েছে, হুকুম-আহকাম সব সে মেনে নিবে। এক কথায় এই তিনটা দিয়েই, ইসলামের পরিপূর্ণতা এসে যায়, যদি তার হাক্বীক্বত অর্থ ধরা হয়। আর আমভাবে অর্থ ধরা হলে, একটা মুসলমানের এই তিনটা গুণ থাকতে হবে কমপক্ষে। এর সাথে আরো গুণ থাকতে হবে। فَذَلِكَ الْمُسْلِمُ তাহলে সে হাক্বীক্বী মুসলমান। অর্থাৎ হাক্বীক্বী মুসলমান ঈমানদার হতে পারবে। মু’মিনে কামিল হওয়ার জন্য আরো শর্ত শারায়িত রয়েছে। এ সমস্ত অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে, সে সমস্ত হাদীছ শরীফের দ্বারা সে মনে করে থাকে যে, একজন লোক এ কয়েকটা শর্ত মানলেই সে ঈমানদার হবে বা মুসলমান হবে তা নয়।
কারণ, আক্বাইদের বিষয়গুলো যা রয়েছে, তা সবই সে মানে কিন্তু একটা মানলোনা অর্থাৎ সবই সে মানলো। মহান আল্লাহ পাক উনাকেও মেনে নিলো কিন্তু রসূল থেকে একজন রসূল উনাকে সে মানলো না, সে ঈমানদার থাকতে পারবে না বরং সে কাফির হয়ে যাবে। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)