ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
, ১৯ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইসলামী আক্বীদার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম (৭)
তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে, ‘তোমার কি মাসয়ালা রয়েছে, তা বলো?’ সে বললো, এক নম্বর হচ্ছে, ‘মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখা যায় না কিন্তু কি করে বিশ্বাস করবো? এটা আমার মনে সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাকি মাসয়ালাগুলো কি? সেগুলো একসাথে বলো। সে বললো, দুই নম্বর হচ্ছে, ‘আমরা কিতাবে পড়েছি, শুনেছি, জাহান্নামে আগুনের দ্বারা মানুষকে শাস্তি দেয়া হবে, সেখানে জিন-ইনসান উভয় যাবে। আগুনের দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আগুন দিয়ে যদি জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হয় তাহলে আগুনের দ্বারা যারা তৈরি অর্থাৎ জিন সম্প্রদায় আগুন দ্বারা তৈরি; তাদেরকে কি করে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে? আর তিন নম্বর হচ্ছে, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি তো পরকালে বিচার করবেনই তাহলে যমীনে বিচারের কি দরকার রয়েছে? মহান আল্লাহ পাক তিনি বিচার করবেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ, নির্দেশে সব কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে তাহলে যমীনে বিচারের কি দরকার রয়েছে?’ যখন সে লোকটা এ প্রশ্ন করলো, প্রশ্ন শেষ হওয়া মাত্রই হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা একটা মাটির টুকরা তুলে তা তার গায়ে নিক্ষেপ করলেন। মোটামুটি সেটা মাঝারি জোড়ে ছিলো, সে ব্যথা পেয়েছে। সে ব্যথা পেয়ে সেখান থেকে উহ্ উহ্ করতে করতে সরে গেলো, পালিয়ে গেলো। সে মনে মনে ফিকির করলো, হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা গোস্সা করেছেন, তাকে মেরেছেন, হয়ত থাকলে আরো বেশী মারবেন, সেজন্য সে পালিয়ে গেলো। সে মনে মনে চিন্তা করলো, আমাকে মানুষ বললো, আমিও শুনেছি, উনি মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী। উনার কাছে মাসয়ালা জিজ্ঞেস করলাম, উনি আমাকে আঘাত করলেন এটা কেমন হলো, উনি মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী। সে অনেক ফিকির-চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত কাজী ছাহেবের কাছে গেলো। সে যামানায় কাজীর নিয়ম ছিলো, তরতীব ছিলো। কাজী ছাহেবের কাছে বলা হলো, হে কাজী ছাহেব! আপনাদের এলাকায় হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা নামে মহান আল্লাহ পাক উনার একজন বিশিষ্ট ওলী, বুযূর্গ রয়েছেন। কাজী ছাহেব জানতো, চিনতো। উনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে ঘটনা খুলে বললো যে, উনি মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, উনার কাছে গিয়েছিলাম মাসয়ালার জন্য অথচ উনি জাওয়াব তো দিলেনই না বরং আমাকে মাটি দিয়ে আঘাত করলেন। যার জন্য আমি ব্যথাও পেলাম। তার যে জায়গায় ব্যথা পেয়েছে সে জায়গা দেখালো কাজী ছাহেবকে। কাজী ছাহেব বললেন, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন ব্যাপার রয়েছে। আচ্ছা ঠিক আছে, আমার সাথে চলুন। আমি জিজ্ঞাসা করবো, কেন তিনি আপনাকে আঘাত দিয়েছেন। কাজী ছাহেব আসলেন হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার কাছে। এসে বললেন, আপনার কাছে একটা লোক এসেছিলো কিছুক্ষণ পূর্বে, সে তিনটি মাসয়ালা জিজ্ঞেস করেছিলো, আপনি জাওয়াব দেয়ার পরিবর্তে তাকে মাটি দিয়ে আঘাত করেছেন। সে ভয়ে এখান থেকে পালিয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো, এর কি কারণ? যদি আপনার জাওয়াব না দেয়ার মত হতো তাহলে আপনি জাওয়াব না হয় না দিতেন। কিন্তু আঘাত কেন করেছেন? সেজন্য সে আমার কাছে বিচারের জন্য গিয়েছে। এখন আমি এসেছি আপনাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য, তার সঠিক জাওয়াবটা কি? হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, তুমি এক কাজ করো, সে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করো, সে আমাকে কি প্রশ্ন করেছিলো? প্রকৃতপক্ষে তাকে আমি আঘাত করিনি, তার প্রশ্নের জাওয়াব দিয়েছি, সে হয়ত বুঝতে পারেনি। এটা শুনে কাজী ছাহেব এবং সেই লোক উভয়ে তায়াজ্জুব হয়ে গেলো। তারা বলল, আপনি বলেন কি! আপনাকে প্রশ্ন করা হলো, আপনি মাটি দিয়ে আঘাত করে জাওয়াব দিলেন, এটা কোন্ ধরনের জাওয়াব। সুওয়ালকারী ও কাজী ছাহেবের আক্বলে, তাদের সমঝে সে বিষয়টা আসেনি। কিন্তু সুক্ষ¥ মাসয়ালার সুক্ষ¥ জাওয়াব।
তখন হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, তুমি কি জিজ্ঞেস করেছিলে, তুমি সেটা বলো। এবং তার জাওয়াব কি করে দেয়া হলো, সেটা আমি বলে দিবো। সে বললো, আমি বলেছিলাম, ‘মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখা যায় না, তাহলে কি করে বিশ্বাস করবো?” এটা প্রথম প্রশ্ন ছিলো। হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, ‘যদি তাই সত্য হয়ে থাকে তাহলে তোমাকে যে আঘাত করেছি, তুমি যে ব্যথা পেয়েছো, কোথায়?” সে দেখাল শরীরের অমুক স্থানে। তুমি যে ব্যথা পেয়েছো, এটা কি দেখা যায়? সে বললো, ব্যথা দেখা যায় না, সেটা অনুভব করতে হয়। আমার অনুভূতির মধ্যে এসেছে, আমি ব্যথা পাচ্ছি। হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, ‘হ্যাঁ, অনুরূপ মহান আল্লাহ পাক উনাকে তো দেখা যায় না, অনুভব করতে হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাত রয়েছে, সৃষ্টিজগত রয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি রয়েছে। এ থেকে অনুভব করতে হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন আছেন, খালিক্ব মালিক একজন রয়েছেন। আমি সেজন্য তোমাকে আঘাত করেছি। ব্যথা যেমন দেখা যায় না, অনুভব করতে হয়, তদ্রƒপ মহান আল্লাহ পাক উনাকেও দেখা যায় না, অনুভব করতে হয়।’ এক নম্বর। দু’ নম্বর তুমি কি প্রশ্ন করেছ? ‘জাহান্নামে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে অথচ জিনেরা আগুনের তৈরি তাহলে জিনকে কি করে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া সম্ভব হবে? হযরত রাবেআ বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, ‘মানুষকে মাটির সৃষ্টি বলা হয়, আমি তোমাকে মাটি দিয়ে আঘাত করলাম, তুমি কেন ব্যথা পেলে? মাটি দিয়ে আঘাত করার কারণে তুমি যদি ব্যথা পেতে পারো তাহলে জিনেরা যারা আগুনের দ্বারা তৈরি, তাদেরকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হলে তারা কেন ব্যথা পাবে না বা শাস্তি ভোগ করবে না অথবা কেন কষ্ট পাবে না।’ আর তিন নম্বর তুমি বলেছ, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নির্দেশে সব হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনিই বিচার করবেন তাহলে আর যমীনে বিচারের কি দরকার ছিল? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তুমি কেন কাজী ছাহেবের কাছে গেলে। যদি তোমার যমীনে বিচারের দরকার না হতো তাহলে তুমি কেন কাজী ছাহেবের কাছে গেলে। কাজেই, আল্লাহ পাক উনাকে না দেখে বিশ্বাস করতে হবে, অনুভব করতে হবে। এটাই মূল বিষয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে না দেখে বিশ্বাস করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখে কেউ বিশ্বাস করবে, এটা সম্ভব নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ফতওয়া হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যদি বলে, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছি, সে কাট্টা কাফির। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনাকে যমীনে কেউ দেখবে না। পরকালে দেখবে। তবে যমীনে মেছালী ছূরত দেখতে পারে। মেছালী ছূরত। যেটা হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। গাউছুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। সুলত্বানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা দেখেছেন মেছালী ছূরত মুবারকে। হাক্বীক্বী ছূরত মুবারকে যমীনে কেউ দেখবে না। যদি কেউ বলে, সত্যি আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছি তাহলে সে কাট্টা কাফির। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, গাউছুল আ’যম সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এক এলাকায় গেলেন ওয়াজ করতে। উনাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, লোকজন জমা হয়েছে, তিনি নছীহত করবেন, তারা ঈমান আনবে, তওবা করবে, ইস্তিগফার করবে। তিনি ওয়াজ-নছীহত করলেন, লোকেরা তওবা করলো, ঈমান আনলো। প্রত্যেকটা লোকেই ঈমান আনলো। তিনি ওয়াজে বলেছিলেন এই মাসয়ালা যে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে কেউ যমীনে দেখবে না। যদি দেখে, তাহলে মেছালী ছূরতে মুবারকে দেখবে। কিন্তু কেউ যদি দাবী করে, সে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারকে দেখেছে তাহলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে। তিনি মানুষকে তাওহীদ, রিসালাত বুঝিয়েছিলেন। মানুষ বুঝেছে, ঈমান এনেছে, উনি চলে আসলেন। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)