চাঁদ এবং ইসলামী মাস নির্ধারণে সউদী ওহাবী ইহুদীদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত (৪)
, ২৩ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّـمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْـكُفْرِ ۖ يُضَلُّ بِهِ الَّـذِيْنَ كَفَرُوْا يُـحِلُّونَهٗ عَامًا وَيُـحَرِّمُوْنَهٗ عَامًا لِّيُوَاطِئُوْا عِـدَّةَ مَا حَرَّمَ اللهُ فَيُحِـلُّوْا مَا حَرَّمَ اللهُ ۚ زُيِّنَ لَـهُمْ سُوْءُ اَعْـمَالِـهِمْ ۗ وَاللهُ لَا يَـهْدِي الْقَوْمَ الْـكَافِرِيْـنَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই নাসী বা মাসকে আগে পিছে করা কুফরীকে বৃদ্ধি করে থাকে। এর দ্বারা কাফিরেরা গুমরাহীতে নিপতিত হয়। তারা (ছফর মাসকে) এক বছর হালাল করে নেয় এবং আরেক বছর হারাম করে নেয়, যেন মহান আল্লাহ পাক উনার হারামকৃত মাসগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে।
অতঃপর তারা সে সমস্ত মাসকে হালাল করে নেয়, যে সমস্ত মাসকে মহান আল্লাহ পাক তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন। তাদের বদ আমলগুলো তাদের জন্যে তাদের নিকট সৌন্দর্য্যম-িত করে দেয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। অর্থাৎ এর ফলশ্রুতিতে কাফির সম্প্রদায় হিদায়েত লাভের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয় যে, জাহিলিয়াতের যুগে কাফির, মুশরিকরা পবিত্র ছফর মাস উনাকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করতো। নাঊযুবিল্লাহ! তাই তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক উক্ত মাস উনাকে আগে-পিছে করতো। আরেকটি কারণ হলো, যখন তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ করার প্রয়োজন মনে করতো বা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো, তখন তারা পবিত্র ছফর মাস উনাকে আগে-পিছে করতো তবে হারাম মাসের সংখ্যা ঠিক রাখতো, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। (তাফসীরে দুররে মানছূর)
এছাড়াও কাফির, মুশরিকরা তাদের নিজেদের স্বার্থে দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্য বছরকে বারো মাসে গণনা না করে কোন কোন বছর দশ মাস থেকে সতের মাস পর্যন্ত গণনা করতো, যা নাসী হিসেবে মশহূর। এর কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বিদায় হজ্জে পবিত্র খুতবা মুবারক প্রদানের সময় মাস, তারিখ, দিন, স্থান সমস্ত কিছু নতুন করে ফায়ছালা করেছেন, যা সম্মানিত বিদায় হজ্জ উনার খুতবা মুবারকে বর্ণিত রয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبـِـي بَـكْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ اَنَّهٗ قَالَ اِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهٖ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضَ اَلسَّنَةُ اِثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِّنْـهَا اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلَاثَةٌ مُّتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْـحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّـذِيْ بَيْـنَ جُـمَادٰى وَشَعْبَانَ ثُـمَّ قَالَ اَىُّ شَهْرٍ هٰذَا. قُلْنَا اَللهُ وَرَسُولُـهٗ اَعْلَـمُ قَالَ فَسَكَتَ حَتّٰى ظَنَنَّا اَنَّهٗ سَيُسَمِّيْهِ بِغَيْرِ اِسْـمِهٖ. قَالَ اَلَيْسَ ذَا الْـحِـجَّـةِ. قُلْنَا بَلٰى قَالَ فَاَىُّ بَلَـدٍ هٰذَا. قُلْنَا اَللهُ وَرَسُولُـهٗ اَعْلَـمُ قَالَ فَسَكَتَ حَتّٰى ظَنَنَّا اَنَّهٗ سَيُسَمِّيْهِ بِغَيْرِ اِسْـمِهٖ. قَالَ اَلَيْسَ الْبَلْـدَةَ. قُلْنَا بَلٰى قَالَ فَاَىُّ يَوْمٍ هذَا. قُلْنَا اللهُ وَرَسُوْلُـهٗ اَعْلَـمُ قَالَ فَسَكَتَ حَتّٰى ظَنَنَّا اَنَّهٗ سَيُسَمِّيْهِ بِغَيْرِ اِسْـمِهٖ. قَالَ اَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْرِ. قُلْنَا بَلٰى يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ. قَالَ فَاِنَّ دِمَاءَكُـمْ وَاَمْوَالَـكُـمْ وَاَعْرَاضَكُـمْ حَرَامٌ عَلَيْكُـمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُـمْ هٰذَا فِيْ بَلَـدِكُـمْ هٰذَا فِـيْ شَهْرِكُـمْ هٰذَا وَسَتَلْقَوْنَ رَبَّـكُـمْ فَيَسْاَلُـكُـمْ عَنْ اَعْـمَالِكُـمْ فَلَا تَـرْجِعُنَّ بَعْدِيْ كُفَّارًا اَوْ ضُلَّالًا يَضْرِبُ بَعْضُكُـمْ رِقَابَ بَعْضٍ اَلَا لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ فَلَعَلَّ بَعْضَ مَنْ يُّبَلَّغُهٗ يَـكُوْنُ اَوْعٰـى لَـهٗ مِنْ بَعْضِ مَنْ سَـمِعَهٗ.
অর্থ: “হযরত আবূ বাকরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরবানীর দিনে (১০ই যিলহজ্জ শরীফ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, বছর ঘুরে এসেছে তার গঠন অনুযায়ী, যেদিন মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন। বছর ১২ মাসে। তার মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। তিনটি পর পর এক সাথে- পবিত্র যিলক্বদ শরীফ, পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ ও পবিত্র মুহররম শরীফ এবং চতুর্থ মাস মুদ্বার গোত্রের পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস, যা পবিত্র জুমাদাল ঊখরা শরীফ ও পবিত্র শা’বান শরীফ উভয়ের মধ্যখানে অবস্থিত। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটি কোন মাস? আমরা বললাম, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি এতোক্ষণ চুপ থাকলেন, যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি উনার অন্য কোন নামকরণ করবেন। তৎপর ইরশাদ মুবারক করলেন, “এটি কি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “এটি কোন শহর?” আমরা বললাম, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।”
অতঃপর তিনি এতোক্ষণ চুপ থাকলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য কোন নামকরণ করবেন। তৎপর ইরশাদ মুবারক করলেন, “এটি কি পবিত্র মক্কা শরীফ শহর নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “এটি কোন দিন?” আমরা বললাম, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।”
অতঃপর তিনি এতোক্ষণ চুপ থাকলেন, যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য কোন নামকরণ করবেন। তৎপর ইরশাদ মুবারক করলেন, “এটি কি পবিত্র কুরবানী উনার দিন নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “আপনাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান আপনাদের জন্য পবিত্র, যেমন আপনাদের এই মাস, এই শহর ও এই দিন পবিত্র। আপনারা শীঘ্রই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছবেন আর তিনি আপনাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সাবধান! আমার পর আপনারা পথভ্রষ্ট হয়ে একে অন্যের জীবননাশ করবেন না। আমি কি আপনাদেরকে (মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান) পৌঁছাইনি? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি সাক্ষী থাকুন। আপনি সাক্ষী থাকুন। আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেনো অনুপস্থিত ব্যক্তিকে এটা পৌঁছে দেন। কেননা, অনেক এমন ব্যক্তি যাকে পরে পৌঁছানো হয়, সে আসল শ্রোতা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধিকারী ও হিফাযতকারী হয়ে থাকে।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ) (চলবে)
-এবিএম রুহুল হাসান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)