গোয়ালদী হোসেন শাহী মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীন কীর্তি
, ২৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৩ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) স্থাপত্য নিদর্শন

তাদের রাজত্বকালে তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় মনোরম ইমারত, মসজিদ, খানকা ও সমাধি নির্মাণ হয়। তাদের প্রতিটি মসজিদ, খানকা ও সমাধিতে মুসলিম ঐতিহ্যগত আরবীয় অলঙ্করণ পরিলক্ষিত হয়। এসব প্রাচীন কীর্তির প্রতিটি মসজিদ, খানকা ও সমাধি ছোট-বড় প্রস্তর খ- দিয়ে সুসজ্জিত।
সোনারগাঁও বর্তমানে বিক্ষিপ্ত কতগুলো গ্রামের সমষ্টি মাত্র। পানাম, আমিনপুর, গোয়ালদী, মোগরা পাড়া, দমদমা, ভাগলপুর, শাহ চিল্লাহপুর, মহজমপুর এসব গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরা কীর্তিগুলোর ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম, নব্য বিকাশিকা, সম্রাট আকবরের প্রিয় নগরী জান্নাতুল বিলাদ অথবা হজরত জাল্লাল সোনারগাঁওয়ের সেই গৌরবোজ্জ্বল ও রোমাঞ্চকর ইতিহাসের কথাই সগৌরবে ঘোষণা করছে।
এসব গ্রামের অন্যতম হলো গোয়ালদী। এ গ্রামে সে সময়ের গৌরবময় দিনের যেসব নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হোসেন শাহী মসজিদ। সোনারগাঁওয়ের দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য প্রাচীনকীর্তি এই মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক অনুপম নিদর্শন।
ইতিহাসে পূর্ব বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওকে হোসেন শাহী আমলে পরিচয় করে দেয়া হয়েছে স্বর্ণযুগ হিসেবে। কারণ এ সময়ের আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ছিলেন এক অনন্য সাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন সুলতান। স্থাপত্যের প্রতি ছিল তার প্রগাঢ় অনুরাগ। তিনি নির্মাণ করে গেছেন অসংখ্য মনোমুগ্ধকর মসজিদ ও মাদরাসা।
তার বিস্তৃত রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যেসব মসজিদ নির্মিত হয়, তার মধ্যে এই ঐতিহাসিক গোয়ালদী মসজিদটি অন্যতম।
কিন্তু সংস্কারের অভাবে আজ এটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। এতে উপমহাদেশের স্বনামধন্য বারো ভূঁইয়ার রাজধানী সোনারগাঁও হারাতে বসেছে তার এক অনুপম নিদর্শন।
গৌঢ়, পা-ুয়া বাংলার অন্যান্য ইমারতাদির মতো এ মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়ালের পাথর ও ইটে আরবীয় অলঙ্করণ পরিলক্ষিত হয়। ইট ও পাথরের মূল অলঙ্করণের কিছু নিদর্শন মসজিদের পশ্চিম দেয়ালের, বিশেষত মেহরাবে লক্ষ করা যায়। মসজিদের মেহরাবের গায়ে ফুল, লতাপাতা আঁকা বিভিন্ন নকশা ও আরবি লিপির অলঙ্করণ। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি চমৎকার। এটি কালো প্রস্তরে নির্মিত ও কারুকার্যখচিত। মসজিদের আয়তন বাইরের দিকে দৈর্ঘ্য প্রস্থ ২৬ ফুট করে। পলেস্তরা ছাড়াই লার চিকন ইটের তৈরি বর্গাকার এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির ভেতরের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৬ ফুট এবং দেয়ালগুলো ছিল প্রায় পাঁচ ফুট প্রশস্ত। দেয়ালের উভয় দিকে ছিল অতিসুন্দর পোড়ামাটির চিত্রফলক, মসজিদের চারকোণায় রয়েছে চারটি গোলাকার মিনার। মিনারগুলো মেঝের সমান্তরাল থেকে ভূমির দিকে কয়েকটি স্তরে ক্রমেই মোটা। দীর্ঘ দিনের অযতœ ও মেরামতের অভাবে মসজিদটি গম্বুজের বেশির ভাগ ও উত্তর-পূর্ব দক্ষিণ দেয়ালের উপরাংশ বিলুপ্ত হয়ে যায়। সম্ভবত এ কারণে মসজিদটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
এ মসজিদসংলগ্ন উত্তর দিকে আরো একটি মসজিদ রয়েছে। এটিও এক গম্বুজবিশিষ্ট। মসজিদটির গাত্রে বিদ্যমান শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, ওই মসজিদটি আবদুল হামিদ হিজরি ১১১৬ ও ১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করেন। তখন থেকেই ফের ওই মসজিদে স্থানীয়রা নামাজ আদায় করে আসছেন। এ মসজিদটি দেখতে হোসেন শাহী মসজিদের মতোই। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মসজিদটির আয়তনও বৃদ্ধি করা হয়। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহী মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে নেয়া হলে বর্তমানেও সংস্কারের অভাবে কারুকার্য ও ইটগুলো খসে পড়ছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুঘল আমলের নিরাপত্তা নিদর্শন হাজীগঞ্জ দুর্গ
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রাচীন মসজিদের অজানা ইতিহাস
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাজ-উল-মসজিদ ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায় আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক চুনাখোলা মসজিদ
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৪)
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (৩)
১২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (২)
০৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (১)
২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১১)
২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ (৩)
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১০)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)