গোসল করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৫)
, ১৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৬ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১২ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
গোসল করার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব মুবারক:
গোসল করার পূর্বে শরীরে যয়তুনের তেল দেয়া এবং না দেয়া উভয়টাই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক।
মাথায় তেল দেয়ার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব হলো- প্রথমে তেল বাম হাতে কিংবা তেল রাখার পাত্রে পরিমাণ মতো ঢেলে, সেখান থেকে ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুলদ্বারা তেল নিয়ে, ডান ভ্রƒতে তারপর বাম ভ্রƒতে দিবে, তারপর ডান চোখের পাতায়, তারপর বাম চোখের পাতায় দিবে। অতঃপর মাথার ডানদিক হতে শুরু করে প্রয়োজনমতো তেল দেয়া।
আর দাড়িতে তেল দেয়ার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব হলো- প্রথমে তেল বাম হাতে পরিমাণ মতো ঢেলে, সেখান থেকে ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুলদ্বারা তেল নিয়ে, প্রথমে ডান ভ্রƒতে তারপর বাম ভ্রƒতে, তারপর নিম দাড়িতে। অতঃপর দাড়ির ডান দিক হতে তেল দিতে হবে। তেল দেয়ার সময় সর্বক্ষেত্রে ডান দিকের অংশ আগে শুরু করতে হবে। তেল ব্যবহার করলে, তেল লাগানো শেষ হলে, মিসওয়াক করে নিতে হবে।
মিসওয়াক ধরার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব: মিসওয়াক করতে হলে ডান হাতের শাহাদাত, মধ্যমা এবং অনামিকা আঙ্গুল মিসওয়াকের উপরে রেখে এবং বৃদ্ধাঙ্গুল ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল মিসওয়াকের নিচে রেখে মিসওয়াকের মাঝামাঝি ধরতে হবে।
উল্লেখ্য, মিসওয়াক না থাকলে মিসওয়াকের বিকল্প স্বরূপ ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুল ও মধ্যমা আঙ্গুল দ্বারাও মিসওয়াকের কাজ সেরে নেয়া যায়।
মিসওয়াক করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব হলো, প্রথমে উপরের মাড়ির ডান দিকের দাঁতগুলো মিসওয়াক করা। অতঃপর উপরের মাড়ির বামদিকের দাঁতগুলো মিসওয়াক করা। অতঃপর নীচের মাড়ির ডানদিকের দাঁতগুলো মিসওয়াক করা। অতঃপর নীচের মাড়ির বামদিকের দাঁতগুলো মিসওয়াক করা। অনুরূপভাবে ভিতরের অংশের দাঁতগুলো মিসওয়াক করা। অতঃপর জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। মিসওয়াক করার পর ওযূর জন্য দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে।
বসে গোসল করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক: গোসল করার ক্ষেত্রে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক হলো বসে গোসল করা। তবে বসার যদি কোনো ব্যবস্থা না থাকে তবে দাঁড়িয়ে গোসল করতে কোনো সমস্যা নেই।
ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন হলে, তা সেরে নেয়া উত্তম। অতঃপর উত্তর কিংবা দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসে পবিত্র বিসমিল্লাহ শরীফ বলা এবং মনে মনে গোসলের নিয়ত বলা। অতঃপর পানির পাত্রে হাত ডুবানোর পূর্বে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা। অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতে হবে এবং শুধুমাত্র পা ধোয়া ছাড়া নামাযের ওযূর মতো ভালভাবে ওযূ করে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, রোযা অবস্থায় কুলি করার ক্ষেত্রে গড়গড়া করা যাবে না; বরং গড়গড়া ছাড়াই কুলি করতে হবে। রোযাদার ব্যক্তির জন্য, নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে নাকের ভিতরে নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে না; বরং নাকের ভিতরের কাছাকাছি স্থান ভালোভাবে ধৌত করতে হবে এবং নাকের ভিতরের গভীর অংশ বাম হাতের (কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধা) ভেজা আঙ্গুল দিয়ে যথাসম্ভব ভেজাতে হবে। রোযা অবস্থায় নাকে পানি দেয়ার সময় শ্বাস উপরে টানবে না বরং নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। নাক নিচের দিকে নামিয়ে রাখতে হবে।
ওযূ করা শেষ হলে, প্রথমে মাথার ডান পার্শ্বে পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভালোভাবে আঙ্গুল দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। পুরুষের বাবরী চুল থাকলে ও মহিলাদের বেণী বা খোঁপা থাকলে চুলের গোড়াতে ভালোভাবে পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর মাথার বাম পার্শ্বে অতঃপর মাথার মধ্যে ঢালবে। অতঃপর ডান কাঁধে, অতঃপর বাম কাঁধে; তিনবার করে এমনভাবে পানি ঢালবে, যেনো সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছে যায়।
নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। হাতে আংটি থাকলে সেখানেও পানি পৌঁছাতে হবে। প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার সময় ধুন্দলের ছোবড়া ব্যবহার করা এবং না করা উভয়টাই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক। আর পা ঘষার সময় ঝামা পাথর ব্যবহার করা এবং না করা উভয়টাই খাছ সুন্নত মুবারক। এক মুদ্দ (৮১৩.৯৬ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৪০৬৯.৮২ গ্রাম) বা প্রায় ৪ কেজি ৬৯ গ্রাম পানি দিয়ে গোসল শেষ করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক। তবে প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ হবে না, তবে অবশ্যই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক হবেনা অর্থাৎ মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক হবেনা।
সমস্ত শরীরে পানি ঢালা শেষ হয়ে গেলে গোসলের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং গোসল শেষে রুমাল বা তোয়ালে দ্বারা শরীর মুছতে হবে। শরীর মোছার জন্য এবং পা মোছার জন্য আলাদা রুমাল বা তোয়ালে (কাপড়) ব্যবহার করতে হবে। যা সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর কাপড় পরিধান করতে হবে।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার পরিচয় ও প্রকারভেদ (২)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘চাদর’
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবারের পাত্র কাঠের বাটি বা পেয়ালা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার বালিশ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা ও মুহাব্বত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)