গাযওয়াতুল হুদায়বিয়াহ বা হুদায়বিয়ার জিহাদ (১)
, ২৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
হুদায়বিয়ার সন্ধিকে ‘গাযওয়া’ বা যুদ্ধ এ কারণে বলা হয় যে, কেননা কুরাঈশরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এখানে উমরাহ করার জন্য মক্কা শরীফে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল’ এবং ছোট খাট বাদ প্রতিবাদও হয়েছিল। (সীরাতুছ ছহীহাহ ২/৪৩৪)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৬ষ্ঠ হিজরীর ১লা যিলক্বদ শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনাকেসহ চৌদ্দশত জন মতান্তরে পনেরশত জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত উমরাহ করার উদ্দেশ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে পবিত্র মক্কা শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হন। এই সময় কোষবদ্ধ তরবারী ব্যতীত উনাদের সাথে অন্য কোন অস্ত্র ছিল না। কিন্তু পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অদূরে হুদায়বিয়াহ নামক স্থানে পৌঁছলে উনারা কুরাঈশ নেতাদের বাধার সম্মুখীন হন। অবশেষে কুরাইশদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে চুক্তির শর্তানুযায়ী উনারা পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে আসেন এবং পরের বছর পবিত্র উমরাহ করেন।
জিহাদের নামকরণ:
‘হুদায়বিয়াহ’ (الْحُدَيْبِيَة) একটি কূপের নাম। যা পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে উত্তর-পশ্চিমে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি বর্তমানে ‘শুমাইসী’ (الشُمَيْسِى) নামে পরিচিত। এখানে হুদায়বিয়ার বাগিচাসমূহ এবং ‘রিদ্বওয়ান মসজিদ’ (مسجد الرِضْوَان) অবস্থিত। এই স্থানে অবস্থান করে কুরাইশদের সাথে কিছু সময়ের জন্য জিহাদ সংঘঠিত হয় এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিধায় সম্মানিত ‘হুদায়বিয়াহ’ (الْحُدَيْبِيَة) কূয়ার নাম অনুসারে এই জিহাদের নামকরণ করা হয় গাযওয়াতুল হুদায়বিয়া বা হুদায়বিয়ার জিহাদ।
জিহাদের প্রেক্ষাপট:
আরব উপদ্বীপের অবস্থা যখন বহুলাংশে মুসলিমগণের অনুকূলে এসে গেল তখন ইসলামী দাওয়াতের কার্যকারিতা ও বৃহত্তম বিজয়ের বিভিন্ন নিদর্শন ধীরে ধীরে প্রকাশ লাভ করতে থাকে। মুশরিকরা ছয় বছর যাবত পবিত্র মসজিদুল হারাম শরীফে মুসলমানদের প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছিল সেখানে মুসলিমগণের ইবাদত বন্দেগীর ইতিবাচক দাবির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।
পবিত্র মদীনা শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বপ্ন মুবারক দেখলেন যে, তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে পবিত্র মাসজিদুল হারাম শরীফে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এবং পবিত্র কা‘বা শরীফ উনার চাবি মুবারক গ্রহণ করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছেন এবং পবিত্র উমরাহ পালন করছেন। অতঃপর কিছু সংখ্যক লোক মাথা মুবারক মুন্ডন করেছেন এবং কিছু সংখ্যক লোক চুল কর্তন করাকেই যথেষ্ট মনে করেছেন।
এই ব্যাপারে খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَقَدۡ صَدَقَ اللّٰهُ رَسُوۡلَهُ الرُّءۡیَا بِالۡحَقِّ ۚ لَتَدۡخُلُنَّ الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ اٰمِنِیۡنَ ۙ مُحَلِّقِیۡنَ رُءُوۡسَکُمۡ وَ مُقَصِّرِیۡنَ ۙ لَا تَخَافُوۡنَ ؕ فَعَلِمَ مَا لَمۡ تَعۡلَمُوۡا فَجَعَلَ مِنۡ دُوۡنِ ذٰلِکَ فَتۡحًا قَرِیۡبًا ﴿۲۷﴾
‘মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য স্বপ্ন মুবারক দেখিয়েছেন অর্থাৎ সম্মানিত ওহী মুবারক করেছেন। আর খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ তিনি চাহেন তো আপনারা অবশ্যই মসজিদুল হারাম শরীফে নিরাপদে মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায় প্রবেশ করবেন এমনভাবে যে, আপনারা কাউকে ভয় করবেননা। অতঃপর তিনি যা জানেন, যা আপনারা জানেন না। অতঃপর তিনি আপনাদেরকে একটি নিকটবর্তী বিজয় দান করবেন’। (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)
অর্থাৎ আপনাদেরকে পবিত্র মক্কা শরীফে প্রবেশ না করিয়ে হুদায়বিয়া থেকে ফেরৎ আনার মধ্যে আপনাদের জন্য কি কল্যাণ নিহিত রয়েছে, তা আপনারা জানেন না। অতঃপর সেই প্রত্যাবর্তনের বিনিময়ে আপনাদেরকে তিনি দান করবেন একটি ‘নিকটবর্তী মহান বিজয়’। অর্থাৎ হুদায়বিয়ার সন্ধি। অতঃপর সেখান থেকে ফিরেই হবে খায়বর বিজয় ও বিপুল গণীমত লাভ। সুবহানাল্লাহ!
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)