গান-বাজনা করা কি?
, ০৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
গান-বাজনা করা কি? কেউ কেউ বলে থাকে, “ইসলামী গান” যেমন- নবীতত্ত্ব, মুর্শিদী, জারী ইত্যাদি জায়িয। কারণ হিসেবে তারা বলে, হযরত সুলত্বানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নাকি গান-বাজনা করেছেন। তারা আরো বলে থাকে যে, বুখারী শরীফ- এর ২য় খন্ডে ২২৫ পৃষ্ঠায় এবং ৫ম খ-ের ৫৫৫ পৃষ্ঠায় নাকি “গান-বাজনা” জায়িয বলে লেখা আছে।
তাহলে “গান-বাজনা” সম্পর্কে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা কি?
জাওয়াব:
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে গান-বাজনা করা হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভুক্ত। তা যে কোন গানই হোক না কেন। যেমন নবী তত্ত্ব, মুর্শীদি, জারী, কাওয়ালী, পল্লীগীতি, ভাওয়ালী, ভক্তিমূলক ইত্যাদি সর্বপ্রকার গানই হারাম ও নাজায়িয। তবে বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র ব্যতীত হামদ, না’ত, কাছীদা, গজল ইত্যাদি পাঠ করা ও শোনা জায়িয রয়েছে। কিতাবে উল্লেখ আছে, ইলিম দু’ প্রকার। (১) ইলমে আরূজী অর্থাৎ ছন্দ প্রকরণ যেমন- “বালাগাল উলা বিকামালিহী ......... পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পাঠকৃত কাছীদাসমূহ, যা গানের সূরে পাঠ করা হয় না। (২) “ইলমে মুসীক্বী অর্থাৎ রাগ-রাগিণী বা গানের সূর।
স্মরণীয় যে, বাদ্য বা বাজনা সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয। সাথে সাথে বাদ্যবিহীন ইলমে মুসীক্বীও নাজায়িয।
মূলতঃ গান-বাজনা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অকাট্য বা ক্বেত্য়ী দলীলের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে হারাম সাব্যস্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে অসংখ্য স্থানে গান-বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। যেমন পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ উনার ৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَـهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَـتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولٰٓئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
অর্থ: “মানুষের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা ‘লাহ্ওয়াল হাদীছ’ খরীদ করে থাকে যেনো বিনা ইলিমে মানুষদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে এবং হাসি-ঠাট্টারূপে ব্যবহার করে। তাদের জন্যে অপমানজনক শাস্তি রয়েছে।”
অনুসরণীয় হযরত মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত لَـهْوَ الْـحَدِيْثِ ‘লাহ্ওয়াল হাদীছ’ দ্বারা গান-বাজনাকে সাব্যস্ত করেছেন।
যেমন বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “তাফসীরে ইবনে কাছীরের” ৮ম খ-, ৩ ও ৪ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
قَالَ اِبْنُ مَسْعُوْدٍ فِىْ قَـوَلِهٖ تَـعَالٰى وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِىْ لَـهْوَ الْـحَدِيْثِ ....... قَالَ هُوَ وَاللهِ اَلْغِنَاءُ ....... وَكَذَا قَالَ اِبْنُ عَبَّاسٍ وَجَابِرٌ وَعِكْرَمَةُ وَسَعِيْدُ بْنُ جُبَـيْرٍ وَمُـجَاهِدٌ وَ مَكْحُوْلٌ وَعُمَرُ بْنُ شُعَيْبٍ وَعَلِىُّ بْنُ بُذَيْمَةَ وَقَالَ حَسَنُ الْبَصْرِىُّ نَـزَلَتْ هٰذِهِ الْاٰيةُ فِى الْغِنَاءِ وَالْمَزَامِيْرِ
অর্থ: “বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি لَـهْوَ الْـحَدِيْثِ ‘লাহ্ওয়াল হাদীছ’ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! لَـهْوَ الْـحَدِيْثِ হচ্ছে গান-বাজনা বা সঙ্গিত। ...... হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইকরামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাকহুল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আলী ইবনে বুযাইমা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা সকলেই উক্ত ব্যাখ্যাই করেছেন। আর বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ গান ও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে।”
এছাড়াও তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে দুররে মানছূর, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে মাদারিক, তাফসীরে কাশ্শাফ, তাফসীরে
মায়ালিম, তাফসীরে ছায়লাবী এবং হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আদাবুল মুফরাদ” কিতাবে لَـهْوَ الْـحَدِيْثِ ‘লাহ্ওয়াল হাদীছ’ অর্থ গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ পবিত্র সূরা নজম শরীফ ও পবিত্র সূরা বানী ইসরাইল শরীফ উনাদের মধ্যেও গান-বাজনা হারাম হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র আয়াত শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে।
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ যা ক্বেতয়ী দলীল উনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপেই হারাম ও আযাবের কারণ।
গান-বাজনা ও বাদ্য-যন্ত্র হারাম হওয়া সম্পর্কে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِسْتِمَاعُ الْـمَلَاهِىِّ مَعْصِيَةٌ وَجُلُوْسٌ عَلَيْهَا فِسْقٌ وَتَـلَذُّذٌ بِـهَا مِنَ الْكُفْرِ
অর্থ: “গান শোনা গুণাহের কাজ, গানের মজলিসে বসা ফাসিকী এবং গানের সাধ আস্বাদন করা কুফরী।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْغِنَاءُ يُـنْبِتُ النِّفَاقَ فِى الْقَلْبِ كَمَا يُـنْبِتُ الْمَاءُ الزَّرْعَ
অর্থ: “পানি যেরূপ জমীনে ঘাস উৎপন্ন করে গান-বাজনা তদ্রƒপ অন্তরে মুনাফিকী পয়দা করে।” (বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান)
মহাসম্মানিত হাবীব, মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
بُعِثْتُ لِكَسْرِ الْمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ
অর্থ: “আমি বাদ্য-যন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।”
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ বা ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দেন যে, গান-বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র সম্পূর্ণই হারাম। এটাকে হালাল বলা কুফরী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ ছবি তোলা এবং ছবি সংরক্ষণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গঃ ঘরের কাজে আহালের ভূমিকা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ : নামাযের পর ঘুরে বসা
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুওয়াল : নামাজে পুরুষ ও মেয়েদের হাত বাঁধার সুন্নত তরীক্বা কি?
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: মৃত ব্যক্তিকে দেখানো
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: আহলিয়া বা স্ত্রীকে তালাক দেয়া
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: ইন্তেকালের পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টন
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)