খেজুর খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক ও বেমেছাল উপকারিতা সম্পর্কে (৪)
, ১৮ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১১ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১১ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৫ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
খেজুরের রস খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত
মানুষ ক্ষুধা নিবারণের জন্য, দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও দেহের যাবতীয় কার্যক্রম সঠিকভাবে চলাচলের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য এবং সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খেয়ে থাকে।
আর সেই খাদ্যটি যদি মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্য হয়, তাহলে এর উপকার ও ফযীলত অতুলনীয়। কেননা, প্রত্যেকটি মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক হচ্ছেন এক একটি মহাসম্মানিত নূর মুবারক। আর তাই সম্মানিত সুন্নতী খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে প্রত্যেক লোকমা, গ্রাসে বা চুমুকেই নূর মুবারক ভিতরে প্রবেশ করবে। যার মাধ্যম দিয়ে মুসলমানদের অন্তর প্রশান্ত হবে। অসংখ্য মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়াও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
শীতকালে হাড় কাঁপানো ঠা-ার মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস খেতে পছন্দ করেন অনেকে। কেউ আবার এ রসকে প্রক্রিয়াজাত করে পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় তৈরি করে খেয়ে থাকেন। সারা বছর খেজুরের রস সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালের খেজুরের রসই বেশি সুস্বাদু। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে রসের পরিমাণ ও মানও কমতে থাকে।
খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় অনিদ্রা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খেজুরের গুড়ে আয়রন বা লৌহ বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনতে খেজুরের রস খুবই উপকারী।
খেজুর গাছের রস খাওয়া প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم أكل جمار النخل .
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেজুর গাছের রস খেয়েছেন।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ أحبَّ سُنَّتِي فقدْ أحبَّنِي ومَنْ أحبَّنِي كان مَعِيَ في الجنَّةِ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে মুহব্বত করলেন, তিনি মূলতঃ আমাকেই মুহব্বত করলেন, আর যিনি আমাকে মুহব্বত করবেন, তিনি আমার সাথে সম্মানিত জান্নাতে অবস্থান করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, কেউ যদি মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খেয়ালে খেজুরের রস খান, তাহলে সেই ব্যক্তি উপরোক্ত বেমেছাল ফযীলত মুবারক লাভ করবেন।
খেজুরের রস কখন খাবেন, কখন খাবেন না : খেজুরের রস ভোরবেলায় খাওয়া ভালো। সারা রাত ধরে রস জমে থাকার পর সকাল সকাল এ রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে সময় যত গড়াতে থাকে, তত এতে ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া হতে থাকে। এতে রসের স্বাদ নষ্ট হয় এবং অম্লতা বাড়ে। অন্ধকারে এই প্রক্রিয়া কম হয়, কিন্তু দিনের আলোতে গাঁজন বেশি হয়। তাই দিনের বেলা রস খাওয়া ঠিক নয়।
খেজুরের রসের উপকারিতাসমূহ :
১. খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে ১৫-২০% দ্রবীভূত শর্করা থাকে, যা থেকে গুড় ও সিরাপ উৎপাদন করা হয়। খেজুরের গুড় আখের গুড় থেকেও বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। ঘ্রাণ ও স্বাদের জন্য এ গুড়ের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। খেজুরের গুড়ে আখের গুড়ের চেয়ে বেশি প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেল রয়েছে। সকালের নাশতায় খেজুর রসের সিরাপ দিয়ে রুটি খেলেই বেশি তৃপ্তি পাওয়া সম্ভব।
২. প্রাকৃতির এনার্জি ড্রিংকস খেজুর রস : খেজুর রসে সরল শর্করা ও গ্লুকোজ থাকে প্রায় ১৫ ২০%। এই মিশ্রিত শর্করার সঙ্গে প্রচুর খনিজ লবণ ও মিনারেল থাকে। এত উপকারী উপাদান একসঙ্গে উত্তম অনুপাতে মেশানো থাকে ফলে এটি যেকোনো কৃত্রিম এনার্জি ড্রিংকস এর চাইতে বেশি ভালো ও স্বাস্থ্যকর। এক গ্লাস খেজুরের রস পান করলে নিমিষেই এনার্জি পাওয়া যায়। রসের গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ দ্রুত রক্তে মিশে গিয়ে শক্তির অভাব দূর করে।
৩. রক্ত স্বল্পতা দূর করে খেজুর রস : রসে লৌহ বা আয়রন সুপ্ত অবস্থায় থাকে যদি রস জ্বাল করে গুড় বা লালি তৈরি করা হয় তবে এতে প্রচুর আয়রন থাকে। রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রতিদিন এক টুকরা গুড় বা এক চামুচ লালি খাওয়া উচিত। বাংলাদেশে খেজুর গুড়ের পিঠা খাওয়া বেশ প্রচলিত তাই বিপুল জনগোষ্ঠীর মোটামুটি ১/৫ অংশ এই শীতকালে রক্ত স্বল্পতার হাত থেকে রক্ষা পায়।
৪. পেশীকে মজবুত করে : পেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতা সচল রাখতে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম থাকে তাই রস বা গুড় পেশীকে শক্তিশালী করে। পেশীর অসারতা দূর করতেও এটি কাজ করে। স্নায়ুকোষ পরস্পর যুক্ত থাকে নিউরন নামের সংযোগ স্থলে। এই স্থান দিয়ে অনুভূতির সংকেত চলাচল করে। পটাশিয়াম ও সোডিয়াম স্নায়ু সংকেত চলাচলে প্রধান ভূমিকা রাখে।
৫. ক্লান্তিভাব দূর করে : ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতির কারণে আমাদের অবসন্ন বা ক্লান্তি ভাব আসে। রসে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম। এটি পান করলে ক্লান্তিভাব দূর হয় এবং দেহের সজীবতা ফিরে আসে।
৬. হাড় মজবুত করে : খেজুর রসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম। এটি হাড় ও পেশী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম এর অভাব দূর করে খেজুর রস।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : রসে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। দেহের ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়।
৮. ভিটামিনের অভাব দূর করে : রসে ভিটামিন বি-৩ থাকে। এটি রক্ত উৎপাদন ও ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে। ভিটামিন সি কোষের বর্জ্য পদার্থ দূর করে। সর্দি-কাশির হাত থেকে বাঁচায়।
৯. ওজন কমাতে সাহায্য করে : রসের মিষ্টি স্বাদের কারণ অশোধিত চিনি। এটি ধীরে ধীরে রক্তে মিশে যায় ফলে দেহে চর্বি কম জমে। কিন্তু সাধারণ চিনি দ্রুত রক্তে মেশে তাই চিনির খুব ভালো বিকল্প হতে পারে খেজুরের রস। রসে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকায় এটি বিপাক ক্ষমতা বাড়ায় ফলে অতিরিক্ত চর্বি দেহে কম জমে এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১০. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : রসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। এটি মলের পরিমাণ বাড়ায় এবং মল নরম করে ফলে রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। খেজুর গুড় একই কাজ করে। এটি অনিদ্রা দূর করতেও সাহায্য করে।
১১. হজম ক্ষমতা বাড়ায় : রস আমাদের হজমে অংশগ্রহণকারী এনজাইমগুলোর ক্ষরণ ও কাজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। খাওয়ার পর সামান্য পরিমাণ রস বা গুড় খেলে হজম তাড়াতাড়ি হবে। (সমাপ্ত)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)