খেজুর খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক ও বেমেছাল উপকারিতা সম্পর্কে-৩
, ১৭ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১০ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পরিষ্কার খেজুর বেছে খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت أنس رضى الله تعالى عنه قال رأيت النبی صلى الله عليه وسلم أتى بتمر عتيق فجعل يفتشه
অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে পুরাতন খেজুর উপস্থিত করা হলে আমি দেখলাম তিনি তার মধ্য থেকে পোকামুক্ত পরিষ্কার খেজুর বেছে নিচ্ছেন।
খেজুর গাছের মাথি খাওয়া প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل من جذب النخل
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খেজুর গাছের মাথি খেতে দেখেছি। (বুখারী শরীফ)
খেজুর গাছের রস খাওয়া প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم أكل جمار النخل
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেজুর গাছের রস খেয়েছেন।
খেজুরের উপকারীতাসমূহ:
খেজুরকে “ওয়ান্ডার ফ্রুট” বলা হয়। এতে রয়েছে আয়রন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফসফরাস এবং ভিটামিন
খেজুরকে 'ওয়ান্ডার ফ্রুট' বলার কারণ হল, এতে রয়েছে আয়রন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফসফরাস এবং ভিটামিন। খেজুর স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সৌন্দর্য বাড়াতেও কাজ করে। গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজের ভান্ডার খেজুর ডায়াবেটিসের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। এতে কোলেস্টেরল থাকে না। কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ, ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিরোধেও এটি খুবই কার্যকরী।
১. শরীরে শক্তি বাড়ায়: খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ পাওয়া যায়। তাই তাৎক্ষণিক শক্তির জন্য এটি খাওয়া উপকারী। এমনকি দুই থেকে চারটি খেজুর খেলেও সঙ্গে সঙ্গে শক্তি পাবেন।
২. ওজন বাড়ানোর জন্য কার্যকরী:- আপনার ওজন কম হলে খেজুর খাওয়া খুবই উপকারী। এতে রয়েছে চিনি, ভিটামিন এবং অনেক প্রয়োজনীয় প্রোটিন যা ওজন বাড়াতে কাজ করে। আপনি যদি খুব রোগা হন, তাহলে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি খেজুর খাওয়া শুরু করুন।
৩. হাড়ের শক্তির জন্য:- খেজুরে উপস্থিত লবণ হাড় মজবুত করতে কাজ করে। এতে ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং কপার রয়েছে। এগুলো হাড়কে শক্তিশালী করে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি:- যাদের বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তাদের খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে রয়েছ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, যার কারণে হজম প্রক্রিয়া ঠিক থাকে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় চারটি খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে নিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফল দেখতে পাবেন।
৫. ত্বককে সুন্দর রাখে:- ভিজিয়ে রাখা খেজুর খেলে ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়। ত্বক কোমল করে তোলে। খেজুরের বার্ধক্য বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই যারা খেজুর খান তাদের তাড়াতাড়ি বার্ধক্য দেখা দেয় না।
৬. খুরমা খেজুর:- সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য অর্থাৎ ইরান,ইরাক সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক গবেষনায়, খুরমা খেজুর পুষ্টিকর ও নারী-পুরুষের দৈহিক শক্তি বর্দ্ধক। খেজুরের শুকানো অবস্থাটাকেই আমরা খুরমা বলে থাকি। খেজুর ও খুরমাতে প্রায় একই পুষ্টিগুণ বিদ্যমান থাকে।
৭. পুষ্টিগুণ : এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালোরি এবং রয়েছে প্রচুর খাদ্যগুণ, যেমন ভিটামিন-বি,-সি, আয়রন এবং প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন-কে।
৮. হৃদপিন্ড : খুরমা হৃদপিন্ডকে সুস্থ্য সবল রাখে এবং রক্তচাপের জন্য খুবই উপকারী। ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে।
৯. শারীরিক শক্তিবৃদ্ধি : খেজুর সেবনে শারীরিক শক্তি যোগাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শুকনা খেজুরের শতকরা ৮০ ভাগই চিনি এবং সে কারণেই সরাসরি রক্তে চলে যায়। আর সে কারণেই শুকনা খেজুরকে মরুভূমির গ্লুকোজ বলা হয়ে থাকে। খেজুরে থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন-বি’ নার্ভকে শান্ত করে রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
১০. মনের প্রফুল্লতায় : খেজুরে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফেন, যা সিরোটোনিন হরমোন তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই মিষ্টি ফল মনে আনন্দের অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়। ফলে মনকে সতেজ রাখে।
১১. কোষ্ঠকাঠিন্য : খেজুর মানসিক চাপ, রাগ বা অন্য অনেক কারণেই হঠাৎ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। আবার এর সঙ্গে পেট ব্যথাও হয়ে থাকে অনেক সময়। এরকম পরস্থিতিতে শুকনা খেজুর খেলে খুব সহজে পেট পরিষ্কার হতে পারে। তবে সাথে প্রচুর পানি পান করতে হবে। একমাত্র তবেই সঠিক ফল পাওয়া যাবে।
১২. অরুচি : রুচি বাড়াতে খেজুরের কোন তুলনা হয় না। অনেক শিশুরা তেমন একটা খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসবে।
১৩. দৃষ্টিশক্তি : খেজুরে পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ফল হওয়া দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় অনেক রোগ নিরাময় করা সম্ভব। সাথে সাথে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।
১৪. ক্যান্সার প্রতিরোধক : খেজুর বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
১৫. হজমকারক : খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে। এতে করে খাবার হজম সংক্রাসমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
১৬. কোলস্টেরল : খেজুর কলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়। ফলে ওজন বেশি বাড়ে না, সঠিক ওজনে দেহকে সুন্দর রাখা যায়।
১৭. রোগ প্রতিরোধক : খেজুর রোগ প্রতিরোধক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ক্ষমতা বাড়ায়। পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য খেজুর খুবই উপকারী।
১৮. রক্তশূণ্যতায় : খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। নিয়মিত কিছুদিন খেজুর সেবন করলে দেহের আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। যাদের এই রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। কারণ, রক্তস্বল্পতা ও শরীরের ক্ষয়রোধ করতে খেজুরের রয়েছে বিশেষ গুণ।
১৯. বার্ধক্যরোধক : খেজুর সেবনে যৌবন বা তারুণ্য ধরে রাখে ।
(পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবারের পাত্র কাঠের বাটি বা পেয়ালা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার বালিশ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা ও মুহাব্বত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)