খেজুর খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক ও বেমেছাল উপকারিতা সম্পর্কে-১
, ১১ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৪ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৪ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
বিভিন্ন পর্যায়ের খেজুর :
বালাহ: সাধারণভাবে কাঁচা বা সবুজ খেজুরকে বালাহ বলে।
বুসর: খেজুর পাকার পূর্বের অবস্থাকে বুসর বলে।
রুত্বাব: পাকা খেজুরকে রুত্বাব বলে। পাকা খেজুর প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَهُزِّي إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا.
অর্থ: “আর আপনি (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম) নিজের দিকে খেজুর গাছের কা-ে নাড়া দিন, তা থেকে আপনার উপর সুপক্ব খেজুর পতিত হবে।” (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫)
শুকনা খেজুর বা খুরমা খেজুরকে শুকানো হলে শুষ্ক হয়ে যায়, একে খুরমা বলে। বিভিন্ন প্রকারের খেজুর:
গুচ্ছ খেজুর: মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَهَا طَلْعٌ نَضِيدٌ.
অর্থ: “এবং লম্বমান খেজুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর।” (পবিত্র সূরা ক্বফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَزُرُوعٍ وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ.
অর্থ: “শস্যক্ষেত্রের মধ্যে এবং মঞ্জুরিত খেজুর বাগানের মধ্যে।” (পবিত্র সূরা শু’য়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৮)
প্রায় ১০০০ ধরনের খেজুর আছে। তার মধ্যে বরনী খেজুর, আযওয়া খেজুর, মরিয়াম খেজুর, আম্বার খেজুর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বরনী খেজুর: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضَرَتْ أَبِي سَعِيدِنِ الْخُدْرِيَّ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ جَاءَ حَضرَتْ بِلَالٌ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتَمْرٍ بَرْنِيٍّ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَيْنَ هَذَا قَالَ حَضرَتْ بِلَالٌ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ كَانَ عِنْدَنَا تَمْرٌ رَدِيٌّ فَبِعْتُ مِنْهُ صَاعَيْنِ بِصَاعٍ لِنُطْعِمَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ ذَلِكَ أَوَّهْ أَوَّهْ عَيْنُ الرِّبَا عَيْنُ الرِّبَا لاَ تَفْعَلْ وَلَكِنْ إِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَشْتَرِيَ فَبِعِ التَّمْرَ بِبَيْعٍ آخَرَ ثُمَّ اشْتَرِهِ.
অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কিছু বরনী খেজুর (উন্নত মানের খেজুর) নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে আসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এগুলো কোথায় পেলেন? হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমাদের কাছে উন্নত মানের নয়; এমন কিছু খেজুর ছিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে পেশ করার উদ্দেশ্যে তা দুই ছা’ বিনিময়ে এক ছা’ কিনেছি। এ কথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হায়! হায়! এটাতো একেবারে সূদ! এটাতো একেবারে সূদ! এরূপ করবেন না। যখন আপনি উৎকৃষ্ট খেজুর কিনতে চান, তখন নিম্নমানের খেজুর ভিন্নভাবে বিক্রি করে দিন। তারপর সেই মূল্যের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট খেজুর কিনে নিন।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল ওয়াকিলাত : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ২৩১২)
খেজুরের উপকারিতা : খেজুরের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সন্তান ধারণকারিণী মায়েদের খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ كرم الله وجهه عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أ أَطْعِمُوا نِسَاءَكُمُ الْوُلَّدَ الرُّطَبَ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ رُطَبٌ فَالتَّمْرُ وَلَيْسَ مِنَ الشَّجَرِ أَكْرَمُ عَلَى اللهِ مِنْ شَجَرَةٍ نَزَلَتْ تَحْتَهَا حَضْرَتْ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ عَلَيْهَا السَّلَامُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের সন্তান- সম্ভাবা আহালিয়াদেরকে তাজা খেজুর খাওয়াও। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যায় তাহলে অন্তত খুরমা খেজুর যেন খেতে দেয়া হয়। জেনে রেখো, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সেই বৃক্ষের চেয়ে উত্তম কোন বৃক্ষ নেই, যে বৃক্ষের নীচে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম তিনি অবতরণ করেছিলেন।” (আবূ ইয়ালা শরীফ ১ম খ- ৩৫৩ পৃষ্ঠা : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৪৫৫; তাফসীরে ইবন আবী হাতিম : সূরা মারইয়াম শরীফ; তাফসীরে ইবনে কাছির ৫ম খ- ২২৫ পৃষ্ঠা; হিলইয়াতুল আউলিয়া ৬ষ্ঠ খ- ১২৩ পৃষ্ঠা)
মূলত খেজুর মায়ের বুকের দুধের পুষ্টিগুণ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সন্তান ধারণকারিণী মহিলার সন্তান জন্মের সময় জরায়ুর গোশতপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হতে সাহায্য করে এবং সন্তান জন্মদান পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
১. শিশুদের রোগবালাই প্রতিরোধে: শিশুদের জন্যও খেজুর খুব উপকারী। খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ করে।
২. ক্যান্সার প্রতিরোধ: খেজুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা যায়, খেজুর পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আর যারা নিয়মিত খেজুর খান, তাদের বেলায় ক্যান্সারের ঝুঁকিটাও অনেক কম থাকে।
৩. মুটিয়ে যাওয়া রোধে : মাত্র কয়েকটি খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরের এমন পুষ্টি যোগায় যা ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এই কয়েকটি খেজুরই কিন্তু শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে।
৪. হাড় গঠনে: ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে।
৫. হৃদপি-ের কার্যক্ষমতা বাড়াতে: খেজুর হৃদপি-ের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই যাদের হৃদপি- দুর্বল, খেজুর হতে পারে তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ।
৬. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে: দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর সহায়ক। তাই চোখের সমস্যায় ভোগা রোগীরা খেজুর খেতে পারেন।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে: খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
৮. সংক্রমণ প্রতিরোধে: সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলা ব্যাথা, বিভিন্ন ধরণের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুর উপকারী।
৯. বিষক্রিয়া রোধে: খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়া প্রতিরোধে বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়া প্রতিরোধে দ্রুত কাজ করে।
এছাড়াও খেজুরে রয়েছে আরো কিছু উপকারিতা-
১. খেজুরে খাদ্য শক্তি থাকায় শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়।
২. স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
৩. খেজুরে অনেক গ্লুকোজ থাকায় গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ হয়।
৪. রক্ত উৎপাদনকারী।
৫. হজম শক্তি বর্ধক, পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক।
৬. রুচি বাড়ায়।
৭. ত্বক ভালো রাখে।
৮. আঁশ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্যকারী।
৯. পক্ষঘাত এবং সব ধরণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী।
১০. ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
১১. গলা ব্যাথা, সর্দি ও যেকোন জ্বরে খেজুর খুবই উপকারী। (পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবারের পাত্র কাঠের বাটি বা পেয়ালা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার বালিশ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা ও মুহাব্বত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)