স্থাপত্য-নিদর্শন
খুলনার ঐতিহাসিক মসজিদকুড় মসজিদ (১)
, ০৩ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) স্থাপত্য নিদর্শন
খুলনা মহানগরী থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবনঘেঁষা কয়রা উপজেলার প্রাচীন ইউনিয়ন আমাদি। কপোতাক্ষ নদের পূর্বপাড়ের এই ইউনিয়নের মসজিদকুড় গ্রামকে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ করেছে এই ঐতিহাসিক মসজিদকুড় মসজিদ।
জানা যায়, ১৪১৮-১৪৩২ খৃ: জান্নাতবাদের সুলতান ছিলেন জালাল উদ্দীন মুহম্মদ শাহ। এই সময় হযরত খানজাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি দক্ষিণবঙ্গে আগমন করেন। সর্বপ্রথমে তিনি যশোরের বারোবাজার (বর্তমান ঝিনাইদহ) তারপর মুরালী পর্যন্ত সফলভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রচার-প্রসার করেন। এরপর মুরালী কসবা হতে খানজাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাফেলাকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এর মধ্যে কাফেলার একদল কপোতাক্ষ নদ বেয়ে সুদূর সুন্দরবন অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছান। এই কাফেলার আমির ছিলেন বোরহান খাঁ ওরফে বুড়ো খাঁ যিনি হযরত খানজাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরিদ এবং খাদিম ছিলেন। এই বুড়ো খাঁ উনার এক সুযোগ্য ছেলে ফতেহ খাঁ। পিতা-পুত্র উভয় মিলে এখানে উনারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজে নিয়োজিত হন। এভাবেই এই কাফেলা সুন্দরবনের প্রাণকেন্দ্র আমাদিতে পৌঁছান। এটিই ছিল উনাদের শেষ সীমানা। এ সময়কালে উনারা এখানে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রচার প্রসারের পাশাপাশি রাজ্য শাসন করতেন। পথের স্থানে স্থানে মানুষের প্রয়োজনে নিরাশয় খনন, রাস্তা ও মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন দ্বীন ইসলামী স্থাপনা নির্মাণ করেন। উনারা একটি নয় গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন, যার নাম রাখেন মসজিদকুড় মসজিদ। ইট-সুরকির তৈরি মসজিদটি দক্ষিণ বাংলার প্রাচীন নিদর্শনগুলোর অন্যতম।
নয় গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকার এই মসজিদটি খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মসজিদকুড় গ্রামে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে অবস্থিত। এখানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং নিকটবর্তী স্থানে কিছু সাধারণ ইমারত ছিল বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। এই মসজিদের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে তিনটি করে সর্বমোট নয়টি প্রবেশ পথ আছে। এ মসজিদেও বাইরের দিকে চার কোনায় চারটি গোলাকার বুরুজ আছে। বুরুজগুলো ওপরের দিকে কিছুটা সরু এবং প্রতিটি বুরুজের গাত্রে তিনটি করে গোলাকার আনুভূমিক বন্ধনী আছে। চার দিকেই ধনুক-বক্র ছাদ কিনারা দেখা যায়। নির্মাণ-রীতির কারণে ধারণা করা হয় যে, মসজিদটি পঞ্চদশ শতকে খান জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত।
চিত্র: খুলনার ঐতিহাসিক মসজিদকুড় মসজিদের নকশা
পূর্বাবস্থায় এ মসজিদে পোড়ামাটির প্রচুর অলঙ্করণ ছিল। মসজিদের অভ্যন্তরে মুক্তভাবে দ-ায়মান প্রস্তর-নির্মিত চারটি স্তম্ভ আছে। স্তম্ভগুলোর উপরে কৌণিক খিলান ও নয়টি গম্বুজ রয়েছে। এ মসজিদটিতে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় এবং এটি ষাট গম্বুজ মসজিদের সমসাময়িক। এটি বরিশালের গৌরনদীর কসবা মসজিদের সঙ্গেও সাদৃশ্য বহন করে। মসজিদকুড় মসজিদটি সম্ভবত বুড়ো খান ও ফতেহ খান উনাদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল। খান জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিয়ন্ত্রণাধীনে দক্ষিণ-পশ্চিমের এ এলাকাটি উনারা শাসন করতেন। এ মসজিদের দক্ষিণে উনাদের কাছারি ও কবরস্থান বিদ্যমান বলেও উল্লেখ আছে। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৪০০ বছরের আলোচিত প্রাচীন স্থাপত্য তেবাড়িয়া জামে মসজিদ
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২)
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জাপানের টোকিও জামে মসজিদ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মেথি ভেজানো পানি পানের নানা উপকারিতা জেনে নিন
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শেরপুরে তুরকান হযরত শাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইউরোপের যত মুসলিম স্থাপত্য
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
লালমনিরহাটের ১৪শ বছর আগের ঐতিহাসিক ‘হারানো মসজিদ’ (১)
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম আল্লাহর মসজিদ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খেজুরের পাতায় লিখা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)