সুন্নতী মুবারক তা’লীম
খাবার রান্নায় চুলা ও ডেকচি ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক
, ১৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২০ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ০২ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
চুলা ও ডেকচিকে (بُرْمَةٌ) বুরমাহ্ বলা হয়। বড় কোন অনুষ্ঠানে ডেকচিতে করে রান্না করাও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। কারণ হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানেও ডেকচিতে করে রান্না করা হতো। এমনকি চুলাতে রান্না করাও সেই হিসেবে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক অনুষ্ঠানে ডেকচি এমনকি বড় পাতিল বা বড় ডেকচিতে রান্না করা যে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক সে প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رضى الله عنه أَنَّهُ قَالَ إِنَّا كُنَّا نَفْرَحُ بِيَوْمِ الْجُمُعَةِ، كَانَتْ لَنَا عَجُوزٌ تَأْخُذُ مِنْ أُصُولِ سِلْقٍ لَنَا كُنَّا نَغْرِسُهُ فِي أَرْبِعَائِنَا فَتَجْعَلُهُ فِي قِدْرٍ لَهَا فَتَجْعَلُ فِيهِ حَبَّاتٍ مِنْ شَعِيرٍ لاَ أَعْلَمُ إِلاَّ أَنَّهُ قَالَ لَيْسَ فِيهِ شَحْمٌ وَلاَ وَدَكٌ، فَإِذَا صَلَّيْنَا الْجُمُعَةَ زُرْنَاهَا فَقَرَّبَتْهُ، إِلَيْنَا فَكُنَّا نَفْرَحُ بِيَوْمِ الْجُمُعَةِ مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ وَمَا كُنَّا نَتَغَدَّى وَلاَ نَقِيلُ إِلاَّ بَعْدَ الْجُمُعَةَ.
অর্থ: হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পবিত্র জুমুয়াহ শরীফ আসলে আমরা আনন্দিত হতাম এজন্য যে, আমাদের (প্রতিবেশী) এক বৃদ্ধা ছিলেন, তিনি আমাদের নালার ধারে লাগানো বীট গাছের মূল তুলে এনে উনার ডেকচিতে রাখতেন এবং তার সাথে যবের দানাও মিশাতেন। (রাবী বলেন) আমার যতটুকু মনে পড়ে তিনি (হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেছেন যে, তাতে না কোন চর্বি, না তৈলাক্ত কিছু থাকত। আমরা পবিত্র জুমুয়ার নামাযের পর বৃদ্ধা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার নিকট আসতাম এবং তিনি তা আমাদের সামনে পরিবেশন করতেন। এ কারণে জুমু’আর দিন আমাদের খুব আনন্দ হত। আমরা পবিত্র জুমুয়ার নামাযের পরই আহার করতাম এবং কায়লুলাহ (বিশ্রাম) করতাম। (বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ: ২৩৪৯)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে চুলার উপর রান্না ও ডেকচি ব্যবহার সম্পর্কে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ رَبِيْـعَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّه سَـمِعَ حَضْرَتْ الْقَاسِمَ بْنَ مُـحَمَّدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ كَانَ فِي حَضْرَتْ بَرِيرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا ثَلَاثُ سُنَنٍ اَرَادَتْ حَضْرَتْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةُ الصِّدِّيْـقَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنْ تَشْتَرِيَهَا فَـتُـعْتِقَهَا فَـقَالَ اَهْلُهَا وَلَنَا الْوَلَاءُ فَذَكَرَتْ ذٰلِكَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـقَالَ لَوْ شِئْتِ شَرَطْتِيْهِ لَـهُمْ فَاِنَّـمَا الْوَلَاءُ لِمَنْ اَعْتَقَ قَالَ وَاُعْتِقَتْ فَخُيِّرَتْ فِيْ اَنْ تَقِرَّ تَـحْتَ زَوْجِهَا اَوْ تُـفَارِقَه وَدَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـوْمًا بَـيْتَ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ وَعَلٰى النَّارِ بُـرْمَةٌ تَـفُوْرُ فَدَعَا بِالْغَدَاءِ فَأُتِـيَ بِـخُبْزٍ وَاُدْمٍ مِنْ اُدْمِ الْبَـيْتِ فَـقَالَ اَلَـمْ اَرَ لَـحْمًا قَالُوْا بَـلٰى يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلٰكِنَّه لَـحْمٌ تُصُدِّقَ بِه عَلٰى حَضْرَتْ بَرِيرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا فَأَهْدَتْه لَنَا فَـقَالَ هُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا وَهَدِيَّةٌ لَنَا
অর্থ: “হযরত রাবীয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুনেছেন যে, হযরত কাসিম ইবনে মুহম্মদ রহতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত বারীরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ঘটনায় সম্মানিত শরীয়ত উনার তিনটি হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি উনাকে ক্রয় করে মুক্ত করতে চাইলে উনার মুনিব বলল, উত্তরাধিকার আমাদের থাকবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বিষয়টি পেশ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি ইচ্ছে করলে তাদের জন্য ওলীর শর্ত মেনে নিতে পারেন। কারণ প্রকৃতপক্ষে ওলীর অধিকারী হল মুক্তিদাতা। তাকে আযাদ করে ইখ্তিয়ার দেয়া হলো, ইচ্ছে হলে পূর্ব স্বামীর সংসারে তাকে থাকতে কিংবা ইচ্ছে করলে তার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক আনলেন। সে সময় ‘চুলার উপর ডেকচি’ ফুটছিল। তিনি সকালের খাবার আনতে বললেন, উনার কাছে রুটি ও ঘরের কিছু তরকারী আনা হল। তিনি বললেন, আমি কি গোশ্ত দেখিনি? উনারা বললেনঃ হ্যাঁ (গোশ্ত রয়েছে) ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কিন্তু ওই গোশ্ত যা হযরত বারীরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে ছদক্বাহ করা হয়েছিল। এরপর তিনি তা আমাদেরকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। তিনি বললেন, এটা উনার জন্য ছদক্বাহ, কিন্তু আমাদের জন্য হাদিয়া স্বরূপ। ” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ্: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৫৪৩০)
তাই, চুলাতে রান্না করাও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক এবং বড় পাত্র, বড় পাতিল বা ডেকচিতে রান্না করাও খাছ সুন্নত মুবারক হিসেবে প্রতীয়মান।
কাজেই রান্না করার ক্ষেত্রে চুলা ও বড়পাত্র, বড় পাতিল বা ডেকচিতে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার নিয়তে রান্না করলে বা ব্যবহার করলে; তখন মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করার ফযীলত লাভ করা যাবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সর্বপ্রকার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার নিয়ামত হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঠান্ডা ও মিঠা পানি পান করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার যব ও যবের রুটি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ফল খাওয়া মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাঁটি মধুসহ সকল সুন্নতী সামগ্রী
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)