মন্তব্য কলাম
খাবারে এমনকী মায়ের দুধেও ঢুকছে প্লাষ্টিক কণা পাশাপাশি বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর গবেষণায় জানা গেছে, মানুষের শ্বাসনালিতেও জমছে মাইক্রোপ্লাস্টিক স্থায়ী বিকলাঙ্গতা ও ক্যান্সার বৃদ্ধির শঙ্কায় দেশের জনগন। বিষয়টি ভয়াবহ- সত্ত্বর গুরুত্বের সাথে নজর দিন
, ১৫ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
চিকিৎসকদের মতে, মায়ের দুধ সন্তানের পুষ্টি এবং ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্যাকেটবন্দি বা আলাদা করে পরীক্ষাগারে বানানো কোনও খাবার বা পানীয়ই এর বিকল্প হতে পারে না। আর সেই কারণেই চিকিৎসকরা অধিকাংশ মাকে স্তন্যপান করানোর পরামর্শ দেন।
কিন্তু হালে যে তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে এল, তা রীতিমতো আতঙ্কিত করেছে তাদের। তাহলে কি আর মায়ের দুধও নিরাপদ থাকছে না! দূষণ এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি সেদিকেই এগিয়ে চলেছে- এমনই মত বিজ্ঞানীদের।
খাবারে এবং মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়ার তথ্য বেশ আগেই জানা গেছে। এ নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। তবে শ্বাসনালিতে বা ফুসফুসের উপরিভাগের বায়ু চলাচলের অংশে মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে আটকে যায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে তা নুতন গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিকে হলো প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণা যা সূক্ষ¥ ধূলিকণার মতো বাতাসে মিশে থাকে। মূলত শিল্পকারখানা, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পবর্জ্য ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক অবমুক্ত হয়, যা বাতাসে মিশে যায়। এটিই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করছে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে-গবেষণায় এটিই দেখিয়েছে বিজ্ঞানীরা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে এই গবেষণা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতিতে যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে, সে হিসাবে মানুষ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৬ দশমিক ২ বিট (কণা) মাইক্রোপ্লাস্টিক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে। সে হিসাবে এক সপ্তাহে মানুষ যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে, তা একটি ক্রেডিট কার্ড তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের সমান।
উল্লেখ্য, গবেষণা মতে, প্লাষ্টিক এর অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে প্রতিদিন দেশের মানুষের পেটে যাচ্ছে ৬৮৬৫০০ প্লাস্টিক ফাইবার। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের একটি মিল খাওয়ার সময়ে, কম করে ১০০টি ছোট ছোট প্লাস্টিক ‘পার্টিকল’ পেটে যায়। ঘরের চারপাশের ‘সফট ফার্নিশিং’ ও ‘সিন্থেটিক ফাইবার’-এ যে পলিমার থাকে, তা থেকেই সৃষ্ট এই ‘পার্টিকল’।
শপিং ব্যাগের পাশাপাশি আসবাব, গৃহস্থালি, বোতলজাত এবং বাণিজ্যিক কাজে বল্গাহীনভাবে বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০২ সালে বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়। কিন্তু সেই আইনের তোয়াক্কা আর কেউ এখন করছে না। ঢাকায় একটি পরিবার প্রতিদিন চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। সেই হিসাবে শুধু রাজধানীতে প্রতিদিনই দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে যেখানে দিনে ৬ হাজার ৫০০ টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হতো, সেখানে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার দাঁড়াবে প্রতিদিন ৫০ হাজার টন। এই চিত্র খুবই বিপজ্জনক। পলিথিনের বিকল্প হিসাবে টিস্যু ব্যাগ নামে যে ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয় সেটার উপাদানও মূলত প্লাস্টিক। পলিথিন ব্যাগের পাশাপাশি বাংলাদেশে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৩০ লাখেরও বেশি টিস্যু-ব্যাগ ব্যবহার হয়। রাস্তায় বেরিয়ে মিনারেল পানির বোতল কেনার অভ্যাস অনেকেরই। মনে করা হয় ওই পানি সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেখানেও লুকিয়ে আছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাজারে বিক্রি করা ৯০ শতাংশ পানির বোতলে প্লাস্টিকের কণা রয়েছে। বাংলাদেশের নামীদামী বোতলজাত পানিতে ব্যাপকভাবে প্লাস্টিকের কণার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৯৩ শতাংশ ক্ষেত্রে পানির মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার অস্তিত্ব রয়েছে। বোতলজাত পানিতে পাওয়া ওই সকল প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে নাইলন, পলিপ্রপিলেন ও পলিথাইলিন টেরেপথালেটের মতো রাসায়নিক উপাদান।
উল্লেখ্য, প্লাস্টিক দূষণের সবচেয়ে বেশি শিকার শিশুরা। বাজারের চিপস, ওয়েফার, চকোলেট ও জুসে কার্বোহাইড্রেড, মেলামিন অতিমাত্রায় থাকায় শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হলেও এসব খাবারের প্রতি তাদের আকৃষ্ট করে তোলা হচ্ছে। অথচ খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে সেগুলোকে করা হচ্ছে আরো বিষাক্ত। কৌশলগতভাবে বিভিন্ন চিপস কোম্পানিগুলো তাদের বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য এবং শিশুদের আকৃষ্ট করার জন্য চিপসের মধ্যে গিফট হিসেবে দেয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের নানা রকম খেলনা। ওইসব খেলনার কারণে অভিভাবকরা এবং শিশুরা এসব চিপস কিনে খাচ্ছে। ফলে চিপসের সাথে প্লাস্টিকের কণা শিশুদের শরীরে ঢুকে যাচ্ছে।
প্লাস্টিক কণা তথা প্লাস্টিক দূষণ মানবদেহের জন্য অতি ভয়ানক একটি বিষয়। গবেষকদের মতে, বিসফেনল-এ নামের টক্সিক এ ক্ষেত্রে বড় ঘাতক। গরম খাবার প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এলে ওই রাসায়নিক প্লাস্টিক কণা খাবারের সঙ্গে মেশে। এটি নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণু কমে যায়। হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং ত্বকও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকী, ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অন্যদিকে এই প্লাষ্টিকের কণা শিশুদের শরীরে ঢোকার ফলে শিশুদের স্খুলতা বৃদ্ধি পায় এবং শিশুরা উচ্চরক্তচাপে ভোগে। স্থুলতা ও উচ্চরক্তচাপসহ কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সেইসাথে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, হৃদরোগ এমনকি কিডনী বিকলও হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এই প্লাস্টিক দুষণের কারণে তারা মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্লাস্টিকের এই কণার দূষণের পরিণতির ইতিহাস অতি ভয়ানক। ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়ার পিভিসি কারখানার কর্মীদের মধ্যে এক সময়ে ক্যানসারের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। যার কারণ ছিলো এই প্লাস্টিকের কণার দূষণ। কর্মীদের পাশাপাশি ওইসব দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী প্লাস্টিক দূষণের শিকার হয়েছিলো। তারা এখন সচেতন হয়েছে। প্লাস্টিক পন্য বর্জন করছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার এখনও এই প্লাস্টিকের দূষণ নিয়ে কোনো প্রকার কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের শিশু প্রজন্ম ও জনগণকে।
সরকারের জন্য তাই ফরয- অবিলম্বে এই প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা। দেশের ভবিষ্যৎ- শিশু প্রজন্মসহ দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৪)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৯)
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (১০)
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
গ্রীনিচকে ০ (শূন্য) ডিগ্রি দ্রাঘিমায় ধরে মূল মধ্যরেখা স্থির করার কোন ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেই: পবিত্র কা’বা শরীফ উনার অবস্থান ০ (শূন্য) ডিগ্রি ০ (শূন্য) মিনিট ০ (শূন্য) সেকেন্ড ডিগ্রি দ্রাঘিমা ধরে ১৫ ডিগ্রি অন্তর অন্তর সময় অঞ্চলে ভাগ করাই সর্বোত্তম (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)