জীবনী মুবারক
খাদিমু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৮)
বিলাদত শরীফ: হিজরতপূর্ব ১০ সন বিছাল শরীফ: ৯৩ হিজরী বয়স মুবারক: ১০৩ বছর
, ০৮ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৮ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনের প্রতিটি আচরণ ও পদক্ষেপ ছিল হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবন পথের দিশারী। ফরয ছাড়াও ওয়াজিব ও সুন্নত মুবারকসমূহেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদর্শ। তিনি ছোট-বড় সকলকে সালাম করতেন। সবসময় অযু অবস্থায় থাকতেন। তিনি বলতেন, আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যখন ঘর থেকে বের হবেন, তারপর যার সাথে দেখা হবে, সকলকে সালাম করবেন। এতে আপনার নেকী বা মুহব্বত বৃদ্ধি পাবে। আর সম্ভব হলে সবসময় অযু অবস্থায় থাকবেন। কারণ, আপনি জানেন না আপনার মৃত্যু কখন আসবে।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সবসময় হক্ব কথা বলতে কাউকে ছাড়তেন না। একবার উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের (উমাইয়া শাসক) একটি মজলিসে হাউজে কাওছার প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। উবায়দুল্লাহ উনার বাস্তবতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে। এ কথা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কানে গেল। তিনি সরাসরি উবায়দুল্লাহ্র দরবারে উপস্থিত হয়ে তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার এখানে কি হাউজে কাওছার প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা হয়েছিল? উবায়দুল্লাহ বলল, হ্যাঁ, কেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি এ সম্পর্কে কিছু বলেছেন? হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাউজে কাওছার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ তাকে শুনিয়ে ফিরে আসেন।
হযরত মুছআব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একজন আনছারী ব্যক্তির ষড়যন্ত্রের রিপোর্ট পেলেন। এই অপরাধের জন্য তিনি লোকটিকে পাকড়াও করার চিন্তা করলেন। লোকেরা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কথাটি জানালেন। তিনি সোজা হযরত মুছআব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট গিয়ে বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনছারদের প্রতি ভাল ব্যবহার করার জন্য আমীরদের ওছীয়ত করেছেন। উনাদের ভাল লোকদের সাথে উত্তম আচরণ এবং খারাপ লোকদের ক্ষমা করতে বলেছেন। এই পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনামাত্র হযরত মুছআব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খাট থেকে নীচে নেমে এসে মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারকের স্থান আমার চোখের উপর। আমি লোকটিকে ছেড়ে দিচ্ছি।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছাত্র হযরত ছাবিত বনানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একদিন আমি বছরার ‘যাবিয়া’ নামক স্থানে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে চলছিলাম। এমন সময় আযান শোনা গেল। সাথে সাথে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মন্থর গতিতে চলতে শুরু করলেন এবং এভাবে আমরা মসজিদে প্রবেশ করলাম। তারপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বলতে পার, কেন আমি এভাবে হেঁটে মসজিদে আসলাম? তারপর নিজেই বললেন, নামাযের জন্য আমার পদক্ষেপ যাতে বেশী হয়, সেই জন্য। (হায়াতুছ ছাহাবা)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইলিম হাছিলের চেয়ে অর্জিত ইলিম অনুযায়ী আমলের উপর বেশী জোর দিতেন। তিনি বলতেন, যত ইচ্ছা ইলিম বা জ্ঞান হাছিল করো। তবে মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমল না করলে সেসব ইলিমের প্রতিদান দেয়া হবে না। তিনি আরো বলতেন, প্রকৃত আলিম উনার কাজ হচ্ছে বুঝা ও সেই অনুযায়ী কাজ করা। আর মূর্খদের কাজ শুধু বর্ণনা করা (হায়াতুছ ছাহাবা)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারকের প্রতি অপরিসীম গুরুত্ব দিতেন। এ সম্পর্কে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত মুবারক ছেড়ে দিবে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, যে আমার সুন্নত মুবারক অনুসরণ করবে, সে আমার দলভুক্ত। (হায়াতুছ ছাহাবা)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যবহƒত বেশ কিছু সামগ্রী মুবারক স্মৃতি হিসাবে সংরক্ষণ করেছিলেন, যেমন: মহাসম্মানিত নূরুল ফখর মুবারক অর্থাৎ না’লাইন, সেন্ডেল বা জুতা মুবারক, একটি চাদর মুবারক, একটি পেয়ালা মুবারক, তাঁবুর কয়েকটি খুঁটি ইত্যাদি।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, আমার মাতা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ইন্তিকালের সময় আমার জন্য রেখে যান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি চাদর মুবারক, একটি পিয়ালা মুবারক যাতে তিনি পানি পান করতেন, তাঁবুর কয়েকটি খুঁটি মুবারক এবং একটি শীলা মুবারক যার উপর আমার মাতা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুত ত্বীব মুবারক অর্থাৎ ঘাম মুবারক মিশিয়ে সুগন্ধি পিষতেন। সুবহানাল্লাহ!
সূত্র: উসুদুল গাবা, ইছাবা, হায়াতুছ ছাহাবা, সিয়ারু আলামিন নুবালা, সীরতে ইবনে হিশাম, মুসনাদ, অন্যান্য সীরাত ও ইতিহাস গ্রন্থ। (সমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)