জীবনী মুবারক
খাদিমু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৬)
বিলাদত শরীফ: হিজরতপূর্ব ১০ সন বিছাল শরীফ: ৯৩ হিজরী বয়স মুবারক: ১০৩ বছর
, ০৬ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২২ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য মুবারক উনার চারিত্রিক সৌন্দর্যকে আরো শোভা দান করেছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অনুপম মুহব্বত মুবারক, সুন্নত মুবারকের অনুসরণ, আমর বিল মা‘রূফ (সৎ কাজে আদেশ) ও হক্ব কথা বলা।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি উনার কিরূপ গভীর মুহব্বত মুবারক ছিল তা এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়। তিনি যখন মাত্র দশ বছরের বালক তখন প্রতিদিন প্রত্যুষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার মুবারক লাভে উনার চোখ দু’টি ধন্য হতো। ছুবহে ছাদিকের পূর্বে রাতের অন্ধকারে হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার এই সন্তান শয্যা ত্যাগ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অযূ মুবারকের পানির বন্দোবস্ত করার জন্য মসজিদে নববী শরীফের পথ ধরতেন। যৌবনে উনার এই মুহব্বতের কোন সীমা ছিল না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি মাত্র দৃষ্টি মুবারক হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য চরম আনন্দ ও প্রশান্তি বয়ে নিয়ে আসত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারকের অর্থাৎ দীদার মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেওয়ার পর যদিও তিনি বাহ্যতঃ উনার দীদার মুবারক থেকে বঞ্চিত হন, তবুও প্রায়ই স্বপ্নে উনার দীদার মুবারক লাভে ধন্য হতেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে কাঁদতে মানুষের নিকট সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেন।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এমন কোন রাত্র অতিবাহিত হয় না যে রাত্রে আমি আমার হাবীব (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে স্বপ্নে দেখি না, এতটুকু বলে তিনি ক্রন্দন করতে থাকতেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক যখন তিনি স্মরণ করতেন তখন খুব অস্থির ও কাতর হয়ে পড়তেন। একদিন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুর রহমাহ মুবারক বা চেহারা মুবারক ও পবিত্র দৈহিক গঠন মুবারকের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তখন শুধু উদাস চাহনিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবদ্দশার সেই সৌভাগ্যে ভরা দিনগুলির কথা স্মরণ করতে লাগলেন। তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকের কথা বলতেন, তখন দেখা যেত অকস্মাৎ উনার মধ্যে ভাবান্তর ঘটে গেছে। অবলীলাক্রমে উনার যবান মুবারক থেকে বের হয়ে যেত- কিয়ামতের দিন আমি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে উপস্থিত হব তখন বলব, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সেই কনিষ্ট খাদিম আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উপস্থিত।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতিটি মজলিস নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘটনাবলী স্মরণে ভরপুর থাকত। সম্মানিত রিসালাত মুবারকের সময়কালের ঘটনাবলী ছাত্র ও ভক্তদের কাছে বর্ণনা করতেন। এই বর্ণনার মধ্যেই অন্তরে একটা প্রচ- ব্যথা অনুভব করতেন এবং তাতে তিনি অস্থির হয়ে পড়তেন। তিনি বাড়ী ফিরে যেতেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে সকল পবিত্র সামগ্রী উনার নিকট ছিল তা বের করে বার বার দেখতেন, বুছা দিতেন এবং মনকে সান্তনা দিতেন। উনার ছাত্রদের সকলের মধ্যে এই মুহব্বত অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দ্রব্য-সামগ্রীর মুহব্বত প্রভাব পড়েছিল। হযরত ছাবিত বনানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্যতম ছাত্র। তিনি একেবারেই উস্তাদের রঙ্গে রঞ্জিত ছিলেন। তিনি উস্তাদের নিকট সবসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক রেসালাতী যুগ মুবারক সম্পর্কে প্রশ্ন করতেন। একদিন প্রশ্ন করলেন, আপনি কি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক বা হাত মুবারক স্পর্শ করেছেন? হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হ্যাঁ। অথবা তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক বা হাত মুবারক অপেক্ষা অধিকতর কোমল হাত মুবারক আমি আর কখনও স্পর্শ করিনি। এ কথা শুনে হযরত ছাবিত বনানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্তরে মুহব্বতের জযবা জেগে উঠল। তিনি উস্তাদজীকে বললেন, আপনার মুবারক হাতটি একটু বাড়িয়ে দিন, একটু চুম্বন করি।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)