খাদিমু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
বিলাদত শরীফ: হিজরতপূর্ব ১০ সন বিছাল শরীফ: ৯৩ হিজরী বয়স মুবারক: ১০৩ বছর
, ০৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
জিহাদে অংশগ্রহণ:
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আবাসে ও প্রবাসে এমনকি জিহাদের ময়দানেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে অবস্থান করতেন। বদরের জিহাদের সময় উনার বয়স কম ছিল বিধায় জিহাদে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তবে তিনি মুসলিম মুজাহিদদের পাশাপাশি জিহাদের ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। পরের বছর উহুদের জিহাদ হয়। তখনও হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অল্প বয়স্ক ছিলেন। হিজরী ষষ্ঠ সনে হুদায়বিয়ায় বাইয়াতুর রিদ্বওয়ানে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য তিনি অর্জন করেন। তখন উনার বয়স ১৬ বছর। হিজরী সপ্তম সনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে তিনি উমরাতুল ক্বাদ্বা আদায় করেন। এ বছরই খায়বার বিজিত হয়। এই অভিযানে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে উটের পিঠে সওয়ার ছিলেন।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মক্কা শরীফ বিজয়, তায়েফ ও হুনায়েন অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুনায়েনের জিহাদের দিন হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাসতে হাসতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গিয়ে বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি দেখেছেন, হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার হাতে তরবারি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তরবারি দিয়ে কি করবেন? তিনি জবাব দিলেন, কেউ আমার দিকে এগিয়ে আসলে ইহা দিয়ে আমি তাকে আঘাত করব। (হায়াতুছ ছাহাবা)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে জিহাদ সংঘটিত হয়েছে এমন অভিযানের সংখ্যা মাত্র ৯টি। যেমন: বদর, উহুদ, খন্দক, বনু কুরায়জা, বনু মুস্তালিক, খায়বার, ফতেহ মক্কা, হুনাইন ও তাবুক। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই সব কয়টি জিহাদেই উপস্থিত ছিলেন। এক ব্যক্তি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলে হযরত মুসা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনার সম্মানিত পিতা কতটি জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ৮টি জিহাদে। সম্ভবত: বদরের জিহাদটি বাদ দিয়েছিলেন। তার কারণ এই হতে পারে যে, সে সময় জিহাদে যাওয়ার যে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সে বয়স অপেক্ষা ছোট ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ বা দীদার মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর ইয়ামামার জিহাদে তিনি অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। (হায়াতুছ ছাহাবা)
তিনি পরবর্তীতে যখন বছরায় বসবাস করতে থাকেন, সেখানে বিভিন্ন অভিযানেও অংশগ্রহণ করেন।
কর্ম-জীবন:
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে সম্মানিত খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বাহরাইনে ছদকা আদায়ের দায়িত্বে নিয়োগ করতে ইচ্ছা মুবারক প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পরামর্শ চাইলে তিনি বলেন, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বুদ্ধিমান ও লেখাপড়া জানা মানুষ। উনার জন্য যে খেদমতের প্রস্তাব আপনি করেছেন আমি তা সমর্থন করি। অতঃপর সম্মানিত খলীফা আলাইহিস সালাম উনাকে ছদকা আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে বাহরাইনে প্রেরণ করেন। (ইছাবা)
তিনি যখন বাহরাইন থেকে ফিরে আসেন তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ওফাত প্রাপ্ত হয়েছেন। খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তখন সম্মানিত খলীফা। তিনি বাহরাইন থেকে আনীত অর্থ থেকে চার হাজার দিরহাম হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রদান করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি সেই অর্থ পেয়ে মদীনাবাসীদের মধ্যে একজন অর্থশালী ব্যক্তি হয়ে যাই। (হায়াতুছ ছাহাবা)
হযরত মুগীরা ইবনে শু‘বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন বছরার গভর্ণর, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তখন হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বছরা প্রেরণ করেন। এই বছরা শহরেই তিনি স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। সম্মানিত খলীফা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যাঁদের উপর ফিকাহ ও ফতোয়ার দায়িত্ব অর্পন করেন উনাদের মধ্যে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও একজন। জীবনের বাকী অংশ তিনি এই বছরা শহরেই কাটিয়ে দেন। এখানে ফিকাহ ও ফতোয়ার দায়িত্ব ছাড়াও যখন যে দায়িত্ব উনাকে দেয়া হয়েছে তিনি দক্ষতার সাথে তা পালন করেন। এই সময় পরিচালিত সকল অভিযানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তুশতার অভিযানে তিনি পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। তুশতার বিজিত হয় এবং পারস্য সেনাপতি হরমুযানকে সপরিবারে বন্দী করে মুসলিম সিপাহসালার হযরত আবু মুসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মুখে আনয়ন করা হয়। হযরত আবু মুসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তিনশত সদস্যের একটি বাহিনীর হেফাজতে হরমুযানকে মদীনা শরীফে খলীফার দরবারে পাঠিয়ে দেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন এই বাহিনীর আমীর। (হায়াতুছ ছাহাবা)
কিছুদিন পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান করার পরে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আবার বছরায় ফিরে যান। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)