খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৮)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ১৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জঈফ হওয়ার কারণে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের আমল পরিত্যাগ করা বা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হারাম ও কুফরী। উল্লেখ্য, কেউ যদি গোল টুপির উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফকে রদ করতে চায় বা গোল টুপি ব্যতীত অন্য কোন টুপি সুন্নত প্রমাণ করতে চায়, তবে তাকে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের চেয়েও শক্তিশালী অথবা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের সমকক্ষ একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ অবশ্যই পেশ করতে হবে, যা কারো পক্ষে কস্মিণকালেও পেশ করা সম্ভব নয়।
অতএব, যদি তাই হয়ে থাকে তবে এ কথা কি করে বলা যেতে পারে যে, গোল টুপি সম্পর্কিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়? মূলতঃ তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অবান্তর ও পরিত্যাজ্য। উল্লেখ্য, আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক কোন বিষয় ফরয-ওয়াজিব ছাবেত করতে হলে অবশ্যই ছহীহ্ ও হাসান হাদীছ শরীফের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণ করতে ও ফযীলত বর্ণনা করতে জঈফ হাদীছ শরীফ-ই যথেষ্ট। কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে টুপিকে ফরয-ওয়াজিব ছাবেত করা হয়নি, বরং সুন্নত হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে।
তাই এক্ষেত্রে হযরত আবূ কাব্শা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তার অনুরূপ বর্ণিত অন্যান্য পবিত্র হাদীছ শরীফ-ই দলীল হিসেবে যথেষ্ট। তৃতীয়ত বলতে হয় যে, তিরমিযী শরীফের উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের শেষে “বুত্হুন” অর্থ وَاسعَةٌ অর্থাৎ প্রশস্ত বলা হয়েছে সত্য কথাই। তাই বলে এ কথা বলা কখনোই শুদ্ধ হবেনা যে, এর দ্বারা গোল টুপি সুন্নত প্রমাণিত হয় না। বরং بُطْحٌ শব্দের অর্থ যদি وَاسعَةٌ অর্থাৎ প্রশস্তও ধরা হয়, তবুও এর দ্বারা গোল টুপিই যে সুন্নত, তা আরো সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়। কারণ وَاسعَةٌ শব্দের অর্থ হলো প্রশস্ত, এর দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি মুবারক এমন গোল ছিল, যা উপর দিক থেকে প্রশস্ত ছিল, চিপানো বা টাইট ছিলনা। যার ফলে টুপিটি মাথায় পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতো এবং মাথার সাথে সবদিক থেকে লেগে থাকতো।
অতএব وَاسعَةٌ শব্দ দ্বারা এ কথাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এরূপ টুপি পরিধান করতেন না, যে টুপি পরিধান করলে মাথায় পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করেনা এবং সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকেনা বা উঁচু হয়ে থাকে। হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা وَاسعَةٌ এর ব্যাখ্যায় ইহার প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। যেমন وَاسعَةٌ এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত কিতাব মিরকাতুল মাফাতীহ-এর ৮ম খ- ২৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
والمرد انها ما كانت ضيقة رومية او هندية بل كان وسعها مقدار شبر.
অর্থ: وَاسعَةٌ শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য এই যে, নিশ্চয়ই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি রোমী অথবা হিন্দীদের (টুপির) ন্যায় সঙ্কুচিত ছিলনা। বরং উনাদের টুপি এক বিঘত পরিমান প্রশস্ত ছিল।” উপরোক্ত ইবারতের দ্বারা স্পষ্টই বুঝা গেল যে, রোম দেশে ব্যবহৃত রোমী টুপি, যা উপর দিকে উঁচু ও চোখা ও হিন্দুস্থানে ব্যবহৃত দোপাট্টা টুপি যেরূপ উপর দিকে সঙ্কুচিত, তদ্রুপ সঙ্কুচিত টুপি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরিধান করেননি। মূলতঃ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি পরিধান করলেই وَاسعَةٌ -এর হুকুম পূর্ণরূপে আদায় হবে।
কারণ উক্ত টুপির উপরে একটি আলাদা টুকরা থাকার কারণে যেরূপ উপর দিকে সঙ্কুচিত থাকে না, তদ্রুপ প্রায় এক বিঘত পরিমান প্রশস্ত থাকে। যার ফলে টুপিটা সবদিক থেকে ভালরূপে মাথার সাথে লেগে থাকে। এছাড়াও কিতাবে وَاسعَةٌ এর আরো একটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো- যারা بُطْحٌ অর্থ وَاسعَةٌ গ্রহণ করেছেন, তারা মূলতঃ كمام কিমামকে টুপির অর্থে গ্রহণ না করে আস্তিনের অর্থে গ্রহণ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে মেশকাত শরীফের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা গ্রন্থ মুযাহিরে হক্বের ৩য় খ- ৫৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اور بعضوں نے کھا کمام جمع کمہ کی ھے بمعنی استین کے جیسے قفاف ساتہ زیر قاف کے جمع قف مذموم القاف کی ھے بمعنی زمین بلند کے اور بطحا کے معنی اس صورت میں فراخ و کشادکی ھونگےاس لئے کہ زمین بطحا کشادہ بھی ھوتی ھے یعنی استینیں ان کی نھیں تھیں رومی یاھندی بلکہ چوری تھیں مقدار بالشت کے-
অর্থ: “কেউ কেউ বলেন, كمام হলো كمة এর বহুবচন, যার অর্থ হলো উঁচু যমীন। এক্ষেত্রে (বুতহুন) এর অর্থ হবে প্রশস্ত। কেননা যমীন প্রশস্তও হয়ে থাকে। অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোর্তার আস্তিন রোমী বা হিন্দীদের ন্যায় সঙ্কুচিত ছিলনা বরং চওড়া বা প্রশস্ত ছিল এক বিঘত পরিমাণ।” মূলতঃ وَاسعَةٌ এর যে অর্থই গ্রহণ করা হোক না কেন, তা কখনো গোল টুপির বিপরীত বা বিরুদ্ধে নয়।
বরং وَاسعَةٌ এর দ্বারা এটা আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি উপর দিকে প্রশস্ত থাকার কারণে সবদিক থেকে মাথার সাথে ভালভাবে লেগে থাকতো।
তাছাড়া এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শুধুমাত্র “বুতহুন” অর্থ وَاسعَةٌ বা প্রশস্ত একথা বলে বসে থাকলেই চলবেনা বরং হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা “বুতহুন” এর কি অর্থ বা ব্যাখ্যা করেছেন তাও আমাদের দেখতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। তাই হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম “বুতহুন”-এর যে অর্থ বা ব্যাখ্যা করেছেন, সামনে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)